উত্তরবঙ্গে যাঁদের বাস, কালী পুজোয় তাঁদের কমবেশি অনেকের ঠিকানা হল কোচবিহারের প্রাচীন ‘বড় তারা’র পুজো। প্রায় দুই শতাব্দীর পুরনো এই পুজো। স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ‘বড় তারা’ নামে।
কোচবিহারের রাজ পরিবারের হাতেই শুরু হয়েছিল এই পুজো। রাজ পরিবারের ইচ্ছাতেই মদনমোহন মন্দিরের পাশে কাঠামিয়া মন্দিরে পূজিত হন তিনি। বর্তমানে এই পুজোর আয়োজন করে কোচবিহার দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুতে বদল এলেও, বদলায়নি মানুষের আগ্রহ, উৎসাহ এবং ভক্তিতে।
সাধারণ কালী পুজোর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা বড় তারা’র উপাসনার রীতিনীতিও। দেবী মূর্তিতেও বিশেষত্ব রয়েছে। এখানে দেবী প্রতিমার গায়ের রং কালো। এক হাতে খড়্গ, অন্য হাতে কাটারু। দেবী প্রতিমার দৃষ্টি যে দিকে থাকে, সেই দিকেই মাথা দিয়ে শায়িত থাকেন শিব। তাঁর জটার মধ্যে থাকে পদ্ম। প্রতিমার পাশে একটির বদলে থাকে দু’টি শেয়াল।
কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের শেষে দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতে ১০৮টি সোনা ও রুপোর মুণ্ডমালায় সেজে ওঠেন ‘বড় তারা’ মা। থাকে রাজপরিবারের অন্যান্য সোনার অলঙ্কারও। এখানে প্রতিমার হাতে কোনও মুন্ড থাকে না। বদলে হাত থাকে রক্ত ভর্তি একটি পাত্র। বংশ পরম্পরায় এই মূর্তি তৈরি করে প্রভাত চিত্র করের পরিবার।
আজও বড় তারা’র পুজোয় হয় পশু বলি। তাও কোনও কোনও রকম নয়। এই পুজোতে পাঁচ রকমের বলির নিয়ম রয়েছে। পাঁঠা, হাঁস, মহিষ, পায়রা ও মাগুর মাছ। এক সময়ে কচ্ছপ বলির প্রথা থাকলেও সরকারি বিধি নিষেধের কারণে এখন আর তা হয়না। একই সঙ্গে পাঁঠার মাংসের ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে। থাকে শোল মাছ পোড়াও। পুজোর পরের দিন সকালের পুজো শেষে প্রথা মেনে ‘বড় তারা’কে বিসর্জন দেওয়া হয় লম্বা দিঘিতে।