শুরু হয়েছে পবিত্র শ্রাবণ মাস (Sawan 2022)। ভোলেবাবার (Lord Shiva) ভক্তরা গঙ্গাজল সংগ্রহ করতে যাচ্ছেন হরিদ্বার, ঋষিকেশ ও গঙ্গোত্রী। বাঁক কাধে নিয়ে যাত্রার এক দর্শনীয় বিষয়। বাঁকধারীরা এমনিতেই সাধারণ মানুষের মধ্যে শ্রদ্ধা ও আস্থার অনুভূতি তৈরি করে। তাঁদের কাঁধে রাখা বাঁকগুলিও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এমন দৃশ্য তারকেশ্বর মন্দিরেও (Tarakeswar Temple) দেখা যায়। শেওড়াফুলির গঙ্গার ঘাট থেকে জল নিয়ে তারকেশ্বর বাবার মাথায় জল ঢালতে যান কয়েক হাজার ভক্ত। বিশেষ করে ‘ভোলেবাবা পার করেগা’ বা ‘জয় শিবশম্ভু’ কিংবা ‘হর হর মহাদেব’ ধ্বনি দিয়ে বাঁকধারীরা যখন অবলীলায় পেরিয়ে যায় রোদ্রতপ্ত দীর্ঘ পথ, তখন তাঁদের দেখতে শিশু, যুবক ও প্রবীণরা ভিড় জমান। প্রণাম করেন মহাদেবের ভক্তদের উদ্দেশ্যে। কারণ ভক্তরা তখন সকলেই জাগতিক সুখ ত্যাগ করে পবিত্র ব্রত পালন করছে। শ্রাবণ মাস শুরু হতেই ভোলেবাবার ভক্তরাও উদ্বেল হয়ে ওঠেন। তাঁদের মধ্যে বাঁক বয়ে নিয়ে যাওয়ার উৎসাহও বেড়ে যায়। শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার, ভক্তরা মন্দিরে মাহাদেবের পূজা করেন। শুরু হয় বাঁক কাঁধে নিয়ে যাত্রা।
আসুন জেনে নিই কীভাবে কানওয়ার বা বাঁক নিয়ে যাত্রা শুরু হল? ভ্রমণের নিয়মই বা কী?
বাঁক কাঁধে যাত্রা নিয়ে একাধিক বিশ্বাস রয়েছে।
প্রথম মত অনুসারে—
কাঁধে বাঁক নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন ভগবান পরশুরাম। ভগবান পরশুরাম গড়মুক্তেশ্বর থেকে গঙ্গা জল এনে পূরা মহাদেবের মন্দিরে নিবেদন করেন। তখন শ্রাবণ মাস চলছিল। পরশুরামের সেই যাত্রার পর থেকেই শুরু হয় কানওয়ার যাত্রা।
কানওয়ার যাত্রা সম্পর্কে দ্বিতীয় বিশ্বাস
দ্বিতীয় বিশ্বাসটি সমুদ্র মন্থনের সাথে সম্পর্কিত। শ্রাবণ মাসেও সাগর মন্থন হয়। মহাবিশ্বকে রক্ষা করার জন্য, মন্থনের ফলে সমুদ্র্রের তলদেশ থেকে নির্গত বিষ ভগবান শিব তাঁর গলায় ধারণ করেছিলেন। এই কারণে তাঁর গলা নীল হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি নীলকণ্ঠ মহাদেব নামে প্রসিদ্ধ হন। বিষের তাপ প্রশমনের জন্য দেব-দেবীরা বিভিন্ন নদী থেকে জল এনে ভগবান শিবের উদ্দেশ্যে নিবেদন করেন এবং তারপর থেকেই কানওয়ার নিবেদনের প্রথা শুরু হয়।
কানওয়ার যাত্রা সংক্রান্ত তৃতীয় বিশ্বাস
তৃতীয় বিশ্বাস অনুসারে, ত্রেতাযুগে প্রথম শ্রাবণ কুমার পিতামাতার ইচ্ছা পূরণের জন্য শ্রাবণ মাসে কানওয়ারে গমন করেছিলেন। বাঁকে বসিয়ে বাবা-মাকে নিয়ে তিনি হরিদ্বারে যান। সেখানে তিনি তার পিতামাতাকে গঙ্গায় স্নান করিয়েছিলেন এবং ফেরার সময় শ্রাবণ কুমার গঙ্গাজল নিয়ে আসেন, যা তিনি তার পিতামাতার সঙ্গে শিবলিঙ্গে নিবেদন করেন। অনেকেই বিশ্বাস করেন এরপর থেকেই শুরু হয় কানওয়ার যাত্রা।
বর্তমান সময়ে নানাভাবে কানওয়ার যাত্রা শুরু হলেও প্রাচীনকালে এই যাত্রা হতো পায়ে হেঁটে। কানওয়ার যাত্রা যত কঠিন, তার নিয়ম তত কঠিন। নিয়ম না মানলে কানওয়ার যাত্রা অসম্পূর্ণ থেকে যায় এবং ঈশ্বরের কৃপা মেলে না।
ভ্রমণের নিয়ম
স্নান করার পরই বাঁক স্পর্শ করা হয়। ভক্তদের সাত্ত্বিক খাবার খেতে হয়। মাংস খাওয়া ও মদ্যপান করা এইসময় উচিত নয়। পথে কোথাও মাটিতে বাঁক রাখা যায় না। বাঁকধারী ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিতে চাইলে তাঁকে গাছের ডালে বাঁক ঝুলিয়ে রাখতে হয়। এছাড়া যে শিবমন্দিরে জল ঢালার ব্রত নেওয়া হয়, সেই মন্দিরে খালি পায়ে ঢুকতে হয়।
যাত্রার সময় কোন প্রকার চিরুনি, তেল, সাবান ইত্যাদি ব্যবহার করা যায় না। খাটে বসাও উচিত নয়।