করোনার জেরে আগের বছরের মতো এবারও বাঙালির প্রিয় উত্সবের রং ফিকে হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে তাতে বাঙালিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। করোনাকে সঙ্গী করেই মেতে উঠেছে দুর্গাপুজো। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, মহাষষ্ঠীর দিন দেবী দুর্গা তাঁর সন্তান-সন্ততি নিয়ে মর্ত্যে অবতরণ করেন। মহাষষ্ঠীর প্রাক্কালে দুর্গার বোধনের পর সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান শুরু হয়। ঢাকের কাঠি পড়া থেকে শিউলির স্নিগ্ধ ও মিষ্টি গন্ধে সারা বাংলার আকাশ জুড়ে দুর্গার আগমনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। মহালয়ার একসপ্তাহ পর চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, বিজয়া পর্যন্ত বাঙালির কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি শারদউত্সব।
মহাসপ্তমীর নির্ঘণ্ট
মহাসপ্তমীর তিথি শুরু হয়েছে ২৫ আশ্বিন ১২ অক্টোবর মঙ্গলবার। সূর্যোদয় ৫ টা ৩৬ মিনিটে, সপ্তমীর সময়সীমা রাত ১ টা ৪৮ মিনিটে। মঙ্গলবার ভোর রাত ৪.০৫ মিনিট থেকে মধ্যরাত্রি ১.৪৮ পর্যন্ত থাকবে সপ্তমী তিথি। পূর্বাহ্ন মধ্যে দ্বত্ম্যক চরলগ্নে ও চরণবংশে দেবী দুর্গার নবপত্রিকা প্রবেশ স্থাপন, সপ্তম্যাদীকল্পারম্ভ ও সপ্তমী বিহিত পূজা প্রশস্তা।
মহাসপ্তমীর তাত্পর্য
হিন্দু পুরাণ মতে ও লৌকিক আচার অনুযায়ী, ষষ্ঠীরদিন বোধন ও অধিবাস সম্পন্ন করে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান করা হয়। এদিন বেল গাছের তলায় দেবীকে কুমারী রূপে পুজো করা হয়। এই সময় ভোরবেলায় স্বর্গের সব দেবতাগমণ ঘুমিয়ে থাকেন। দেবীকে নিদ্রা থেকে তোলার জন্য আহ্বান করা হয় বলে বোধনের মন্ত্র উচ্চারণ করা হয়।
ষষ্ঠীর দিন বেল গাছের যে ডালকে চিহ্নিত করা হয়, সপ্তমীর দিন সেই ডাল কেটে মণ্ডপে বা পুজোর জায়গায় নিয়ে আসা হয়। এই দিন ভোরবেলায় নদী বা কোনও জলাশয়ে পুরোহিত নিজেই কাঁধে করে নবপত্রিকা নিয়ে যান। তাঁর পিছনে থাকেন মহিলারা। ঢাক বাজাতে বাজাতে ঢাকীরা সেই যাত্রার শোভা বাড়িয়ে তোলেন। শাস্ত্রমতে গঙ্গায় স্নান করানোর পর নবপত্রিকাকে বা কলাবউকে নতুন শাড়ি পড়ানো হয়। কলাবউ স্নান করানোর পর মণ্ডপে বা পুজোয় জায়গায় গণেশের ডানদিকে স্থাপন করা হয়।
বাঙালির ক্যালেন্ডার দেখা মাত্রই প্রথমে যেদিকে বিশেষ নজর যায় তা হল দুর্গাপুজোর তারিখের দিকে। তাই সংক্রমণকে নিয়েই চলছে পুজোর প্ল্যানিং। ২০২০ সালে বিজয়াতে সকলের প্রার্থনা আর আশা কতটা মেটাতে পারলেন এখন সেটাই দেখার। তবুও আশায় বুক বেঁধেই বাঙালি মনপ্রাণ দিয়ে একটাই প্রার্থনা করে চলেছে, আর করোনা নয়! এবারের পুজো আর স্বজন হারা আর্তনাদ নয়, পুজোয় সকলের মঙ্গল ও সুস্বাস্থ্যই এখন কামনার।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: সপ্তমীতে কলাবউ স্নান! গণেশের পাশে কাপড়ে ঢাকা কলাগাছ রাখা হয় কেন?