পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা এবং ওড়িশায় ষষ্ঠী থেকে শুরু হয়ে যায় দুর্গা পূজা (Durga Puja 2022)। পুজো চলে দশমী পর্যন্ত। তবে বহু জায়গাতেই পঞ্চমী থেকেই শুরু হয় যায় অনুষ্ঠান। দুর্গাপুজোয় রয়েছে পাঁচটি বিশেষ রীতি (Special Ritual)। সেগুলি যথাক্রমে বিল্ব নিমন্ত্রণ (Bilva Nimantran), কল্পারম্ভ (Kaalprarambh), অকাল বোধন (Akal Bodhon), অধিবাস এবং আমন্ত্রণ। দুর্গা পূজার প্রথম আচার হল বিল্ব নিমন্ত্রণ। বিল্ব নিমন্ত্রণ ছাড়া পুজো শুরু করা সম্ভব নয়। এই আচারে প্রথমে দেবী দুর্গাকে পবিত্র বেল পাতা দিয়ে মর্তে আমন্ত্রণ জানানো হয়। দ্বিতীয় আচার হল কল্পারম্ভ। কল্প শব্দের অর্থ হল সংকল্প। আরম্ভ অর্থ শুরু। অর্থাৎ পরবর্তী ক’দিন নিয়ম মেনে দেবীর পূজা করার প্রতিজ্ঞা করা হয়। এই অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় অকাল বোধন পুজো। অকাল বোধনে দেবীকে আহ্বান জানানো হয় মৃন্ময়ী মূর্তিতে চিন্ময়ী রূপে বিরাজ করা জন্য। শেষ ধাপ হল অধিবাস ও আমন্ত্রণ। এই রীতিগুলিও দেবীকে পূজাস্থানে আসন গ্রহণ করা ও ভক্তের দ্বারা পূজা গ্রহণ করতে অনুরোধ করারই প্রতীক।
বাঙালিদের প্রকৃত উৎসব শুরু হয় মহাষষ্ঠী থেকে। ওই তিথি থেকেই শুরু হয় নবপত্রিকা স্নান ও কলাবউ পূজার মতো অনুষ্ঠান।এই অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য বেলপাতা-সহ নয়টি ভিন্ন গাছের ডাল একত্রে নিয়ে বেঁধে দেওয়া হয় নবপত্রিকার সঙ্গে।
নবপত্রিকা পূজার আগের দিন হয় কল্পারম্ভ, অকালবোধন, অধিবাস এবং আমন্ত্রণ।কল্পারম্ভ শুরুর ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রীতি হল ঘট স্থাপন। এক্ষেত্রে ভক্ত উষাকালে স্নান করে পবিত্র পোশাক পরে একটি কলস নিয়ে জলাধার থেকে ঘটে জল পোরেন। এই ঘট দেবীর উদ্দেশ্যে নিবেদন করে স্থাপন করা হয় বেদিতে। এরপর মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী এবং মহানবমীতে ভক্তি ভরে নিয়ম মেনে দেবীর পূজা করেন ভক্তরা।
পশ্চিমবঙ্গে কল্পারম্ভ থেকেই শুরু হয় প্রকৃত পূজা। নবপত্রিকা পূজার আগের দিনেই হয় কল্পারম্ভ।ষষ্ঠীর দিনটি ধার্য থাকে কল্পারম্ভ, বোধন, অধিবাস এবং আমন্ত্রণের জন্য। শাস্ত্র অনুসারে মহাষষ্ঠীর সান্ধ্যকাল হল বিল্প পূজা, বোধন অধিবাস এবং আমন্ত্রণের মতো আচার পালনের সময়। কোনও কারণে ষষ্ঠীর সান্ধ্য কাল অমিল হলে সেক্ষেত্রে বিল্ব নিমন্ত্রণ মহাপঞ্চমীতে পালন করা হয়।তবে নবপত্রিকার জন্য সপ্তমীর দিনই নির্দিষ্ট।
বিল্ব আমন্ত্রণের সময় ২০২২
চলতি বছরে বিল্ব নিমন্ত্রণের সময় হল ১ অক্টোবর, শনিবার। বিল্ব নিমন্ত্রণের শুভ সময় শুরু হবে ৩টে ৪৪ মিনিটে। থাকবে ৬ টা ৭ মিনিট অবধি। ষষ্ঠী তিথি শুরু হবে ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা ৩৪ মিনিটে।ষষ্ঠী তিথি শেষ হবে ১ অক্টোবর রাত ৮টা ৪৬ মিনিটে।
অকাল বোধন
মনে করা হয় দক্ষিণায়ন শুরু হলে সকল দেবদেবীরা যোগ নিদ্রায় চলে যান। ফলে তাঁদের মন্ত্রোচ্চারণ এবং বোধনের দ্বারা জাগাতে হয়। এই রীতিতে দেবী দুর্গা জাগ্রত হন বলেই রীতির নাম বোধন। প্রভু রাম রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার আগে দেবীর আশীর্বাদ লাভের উদ্দেশ্যে অকালে বোধন করেছিলেন বলেই এই রীতির নাম অকাল বোধন। বোধনের পরেই হয় কল্পারম্ভ। এক্ষেত্রে একটি ঘট বা কলস জলপূর্ণ করে রাখা হয় বেলপাতার উপরে।এরপর পালন করা হয় অধিবাস এবং আমন্ত্রণ।
সাধারণত চৈত্র নবমীতেই দেবীর পূজা হয়। তবে শরৎ কালে প্রভু রামের দ্বারা অকাল বোধনের পরে শারদীয়া পুজোর রীতিই বেশি জনপ্রিয় হয়েছে।