হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসীরা মনে করেন, নির্জলা একাদশী (Nirjala Ekadashi 2022) হল সমস্ত একাদশী তিথির মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র। হিন্দুরা মনে করেন, এই বিশেষ তিথিতে, নির্জলা একাদশীর উপর উপবাস (Ekadashi Fast) পালন করলে সারা বছরের জন্য পূণ্য লাভ করা সম্ভব। জ্যৈষ্ঠ শুক্লের একাদশী তিথিতে নির্জলা একাদশী পালিত হয়। হিন্দু ধর্মে (Hinduism) বিশ্বাসীরা মনে করেন, নির্জলা একাদশী হল সমস্ত একাদশী তিথির মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র। হিন্দুরা মনে করেন, এই বিশেষ তিথিতে, নির্জলা একাদশীর উপর উপবাস পালন করলে সারা বছরের জন্য পূণ্য লাভ করা সম্ভব। আগেকার দিনে মনে করা হত, এই দিনে ব্রাহ্মণ বা কোনও দুঃস্থ ব্যক্তিদেরকে জলের তেষ্টা মেটানোর জন্য পাত্র প্রদান করলে গৃহে শান্তি বিরাজ করে। এ বছর নির্জলা একাদশী উপবাস পালিত হবে ১১ জুন, শুক্রবার।
ধর্মীয় ধারণা অনুযায়ী, ব্যক্তি যদি শ্রদ্ধার সঙ্গে এই একাদশী ব্রত করে, তা হলে সে সমস্ত একাদশী ব্রতর ফলে প্রাপ্ত পুণ্য লাভ করে। সমস্ত কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ করে সেই ব্যক্তি। ব্রতর পাশাপাশি এদিন দানও করা হয়। এদিন দান করলে পুণ্য লাভ করা যায়। এদিন জলভর্তি ঘট দান করা অত্যন্ত শুভ। এর ফলে ব্যক্তি সুখী জীবন ও দীর্ঘায়ু লাভ করে। পুরাণ মতে, নির্জলা একাদশী ভীমসেনী একাদশী নামেও পরিচিত। মনে করা হয় যে মহাভারত আমলে পাণ্ডু-পুত্র ভীম একবার মহর্ষি বেদব্যাসকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে একাদশী উপবাস না করে একাদশীর উপবাসের ফল কীভাবে পাওয়া যায়? মহর্ষি বেদব্যাস তখন ভীমকে নির্জলা একাদশী উপবাস পালন করার পরামর্শ দেন। সেই সময় মহর্ষি নির্দেশ দিয়ে বলেন, জ্যৈষ্ঠমাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর দিন নির্জলা উপবাস রেখ। আর যে ব্যক্তি একাদশী তিথির সূর্যোদয় থেকে দ্বাদশী তিথির সূর্যোদয় পর্যন্ত নির্জলা থাকে ও শ্রদ্ধা-সহ নির্জলা ব্রত পালন করে, সে বছরে সমস্ত একাদশীর ফল এই একটি একাদশী উপবাস করেই লাভ করতে পারে। তখন বেদব্যাসের আজ্ঞায় ভীম নির্জলা একাদশী পূর্ণ করেছিলেন।
হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনে বিশ্বামিত্র প্রথমবার গায়ত্রী মন্ত্র পাঠ করেছিলেন। তাই একে মহা নির্জলা একাদশীর উপবাসও বলা হয়। এই দিনে সারাদিন উপবাস পালন করা হয়। সম্পূর্ণ নিয়ম-রীতি মেনে ভগবান বিষ্ণুর পূজা করলে ভাগ্য খুলে যেতে পারে। নির্জলা উপবাস পালন করলে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়। এই দিনে অনেকেই অজানা কারণে কিছু ভুল করে থাকি, কিন্তু সেই ভুলগুলি এড়িয়ে যাওয়া দরকার। এই দিনে যে যে কাজগুলি একেবারেই করবেন না, তা জেনে নিন এখানে…
স্নান করবেন না
পূণ্যিলাভ করতে যদি নির্জলা উপবাসের ব্রত মেনে চলেন, তাহলে স্নান করলে চলবে না। এদিনের একাদশীর উপবাসকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে সূর্যদেবকে জল অর্পন করুন। তারপর ব্রতের আচার অনুযায়ী উপবাস এবং প্রার্থনা করুন। উপবাস চলাকালীন অন্যের বিরুদ্ধে কোনও নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করবেন না। যাঁরা পরিবারের মধ্যে নেই, তাঁদের স্মরণ করার দিন এটি।
কোনও জিনিস দান করবেন না
নির্জলা উপবাস চলাকালীন কোনও জিনিস দান করবেন না। বিশেষ করে খাদ্যবস্তু একেবারেই নয়। ডাল, চাল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস দান করার যেতে পারে। কিন্তু এদিন জুতো বা চামড়ার কোনও জিনিস বিতরণ করবেন না। হিন্দুদের বিশ্বাস, একাদশীর দিন জুতো-সহ চামড়ার জিনিস দান করলে স্বর্গলাভ হয় না। তবে এগিন কোনও সন্ন্যাসী যদি বাড়ির প্রবেশদ্বারে আসেন, তাহলে অবশ্যই দান করবেন।
এদিন অন্ন খাওয়া নিষিদ্ধ
নির্জলা একাদশীর উপবাসের দিন ভাত খাওয়া উচিত নয়। বিষ্ণু পুরাণ অনুযায়ী, এই দিনে ভাত খেলে উপবাসের সুফল পাওয়া যায় না। পরিবারের অন্য সদস্যদেরও এদিন অন্ন মুখে তুলবেন না। এই দিনে লবণ খাওয়াও নিষিদ্ধ। লবণ খেলে উপবাসের সুফল পাওয়া সম্ভব নয়।
আর কী-কী খাবেন না
আপনি যদি উপোস করে থাকেন তবে এই দিনে বেগুন, মুলা, পেঁয়াজ, রসুন এবং মসুর ডাল থেকে দূরে থাকুন। এই দিনে মটরশুটি খাওয়া নিষিদ্ধ। মনে করা হয় এই দিনে মটরশুটি খেলে শিশুদের মৃত্যু হয়। এই দিনে, উপবাস পরিবারের কেউ শিম খাওয়া উচিত নয়। উপবাস রাখলেও খাবেন না।