রথযাত্রা শুরু আগে পুরীর জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা পর্বের কথা উল্লেখে রয়েছে হিন্দু শাস্ত্রে। কথিত আছে, এইদিন জগন্নাথ দেবকে নিষ্ঠাভরে সেবা করলে পূণ্যলাভ করা যায়। অত্যন্ত শুভ দিন হিসেবে যে কোনও কাজই করুন না কেন, তার ফল শুভই হবে। জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমায় এই বিশেষ তিথিতে পুরীর মন্দির চত্বরেই পালিত হচ্ছে জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের দেবস্নান। করোনা আবহে আগের বছরের মতো এবারও ভক্ত ছাড়াই পালিত হচ্ছে রথযাত্রার সব নিয়ম কানুন।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ায় বিধ্বস্ত দেশ। আগামী ১২ জুলাই, পুরী শহরে বিখ্যাত রথযাত্রা পালিত হবে করোনার কড়া নিয়মবিধি মেনেই। স্নানযাত্রার সময়কাল ও আচার-অনুষ্ঠানের নির্ঘন্ট দেখে নিন একনজরে…
২৪ জুন- রাত ১টা থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত স্নান পূর্ণিমা শুরু হয়। সেই সময় মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে দেব-দেবীদের বাইরে এনে হাঁটিয়ে প্রদক্ষিণ করার নিয়ম।
আরও পড়ুন: এ বছরও ভক্ত ছাড়াই রথযাত্রা পালিত হবে পুরীতে, সাধারণের জন্য মন্দিরের দরজা খুলবে জুলাই মাসে!
সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ পুরীর রাজা দিব্যসিং দেব স্নানের জায়াগায় উপস্থিত থেকে স্নানযাত্রার অনুষ্ঠান শুরু করেন। তারপর ১১টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত দেবতাদের স্নান করিয়ে সুন্দর পোশাকে সজ্জিত করা হয়। স্নানের পর মন্দিরের একটি আলাদা ঘর রয়েছে, যেখানে দেব-দেবীদের রাখা হয়। হিন্দুদের বিশ্বাস, স্নানের পর দেবতাদের জ্বর আসে, তাই সেই ঘরে তাঁদের জন্য সেবা-শুশ্রুষা চলে। প্রসঙ্গত, স্নানের স্থান থেকে অসুস্থ কক্ষে নিয়ে যাওয়ার সময় হল বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। সেই সময় শোভাযাত্রা করে সেই অসুস্থ কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই অসুস্থ কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রায় ১৫দিন ধরে চলে দেবদেবীর সেবা-যত্ন।
প্রাচীন কাল থেকেই জ্যৈ্ষ্ঠপূর্ণিমায় দেবস্নানের নিয়ম চলে আসছে। প্রসঙ্গত, এই দিনটিকে জগন্নাথদেবের জন্মদিন হিসেবেও পালিত করা হয়। অত্যন্ত শুভ দিনে ঘরেতেই যদি বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলেন, তবে সারা বছর ভাগ্য আপনার সহায় থাকবে।
-হিন্দু শাস্ত্রমতে, স্নানযাত্রার বিশেষ তিথিতে খুব ভোরে গঙ্গা স্নান করে নতুন পোশাক পরার নিয়ম রয়েছে।
– বাড়ির জগন্নাথ-শুভদ্রা- বলরামকে পুজো করুন। মূর্তি বা ছবি, যাই হোক না কেন, তাঁকে স্নান করান, ছবি থাকলে সেটি পরিস্কার কাপড়ে জল নিয়ে মুছিয়ে দিতে পারেন। তবে মূর্তি থাকলে আপনার গ্রহ-নক্ষত্ররা সন্তুষ্ট হবে।
আরও পড়ুন: Vat Purnima Vrat 2021: স্বামীর মঙ্গল কামনায় পালিত হয় বট পূর্ণিমা ব্রত!
– গঙ্গাজল, আতর, ফুল, কাঁচা দুধ, চন্দন একসঙ্গে মিশিয়ে দেবস্নান পর্ব সারুন।
– ১০৮টি তুলসি পাতা দিয়ে জগন্নাথের পায়ে অর্পন করুন।
– জগন্নাথ-সুভদ্রা- বলভদ্রের পায়ে গোলাপ বা সুগন্ধী ফুল দিন। ৫ রকমের ফল সাজিয়ে নৈবেদ্য দিনতে হবে।
– এই দিন কোনও ব্রাহ্মণকে বস্ত্র বা সম্প্দ দান করুন।
শাস্ত্রমতে, এই বিশেষ দিনে জগন্নাথ মর্ত্যে নেমে আসেন। তাই ভক্তদের প্রার্থনা. সাড়া দিয়ে তাঁদের মনষ্কামনা পূরণ করেন। এই নিয়মগুলি মেনে চললে কর্মক্ষেত্রে উন্নতি, পারিবারিক কলহে নিষ্পত্তি, গৃহে সুখ-শান্তিতে ভরে উঠবে, বৈবাহিক সম্পর্ক আরও গাঢ় হতে পারে।