হাতে গোনা কয়েকটা দিন তারপরেই মহালয়া। আর মহালয়া কাটলেই শুরু প্রথমা, মানে দেবীপক্ষ। ষষ্ঠী থেকে দশমী মাতৃ আরাধনায় মেতে উঠবেন সকলে। আর মহালয়ার ভোর মানেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় চণ্ডীপাঠ, পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ।
কিন্তু যদি বলি মহালয়া মানে দেবীর বোধন থেকে দুর্গাপুজোও, তাহলে? বুঝলেন না তো? জানেন এই বঙ্গেই এমন এক জায়গা আছে যেখানে মহালয়ার দিনেই বোধন হয় দেবীর, আবার সেই দিনেই বিসর্জন। অর্থাৎ পাঁচ দিন নয়, একদিনের পুজো।
শুনে অবাক লাগলেও এটাও সত্যি। দামোদর নদের তীরে পশ্চিম বর্ধমানের বার্নপুরের ধেনুয়া গ্রাম। সেখানেই নদীর তীরে কালীকৃষ্ণ আশ্রম। আর সেই আশ্রমেই প্রচলিত আছে এই অভিনব নিয়মে দুর্গাপুজোর। কথিত ১৯৭৮ সালে তেজনন্দ ব্রহ্মচারী স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজোর শুরু করেন। সেই থেকেই মহালয়ার দিন এই আশ্রমে পুজিত হন দেবী।
শুধু তাই নয় প্রতিমাতেও রয়েছে অভিনবত্ব। এই পুজোয় মা কিন্তু তাঁর সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে আসেন না মোটেও। বদলে সঙ্গে থাকেন দুই সখী জয়া ও বিজয়া। একই সঙ্গে ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং দশমীর পুজো করা হয়। শক্তিপুজোর এই বিশেষ ধারার প্রচলন রয়েছে অসমের বিভিন্ন জেলায়। সেই ধারাই প্রচলিত এই ধেনুয়া গ্রামের আশ্রমেও। বোধন থেকে বিজয়াদশমীর প্রতিটি আচারই নিষ্ঠাভরে পালিত হয়। তবে সময় কম থাকায় প্রতিটি আচারই হয় একেবারে সংক্ষিপ্তাকারে, প্রায় বুড়ি ছোঁয়া করে।
এমনকি একদিনের পুজো মানেই যে সারাদিন ধরেই দুর্গাপুজো চলে এমনটা মোটেই নয়। বরং মাত্র এক ঘণ্টায় সব বিধি সম্পন্ন করে শেষ করা হয় পুজো। পুজোর প্রতিষ্ঠাতা তেজানন্দ ব্রহ্মচারীর নির্দেশই অনুসারেই গত অর্ধশতাব্দী ধরে কঠোরভাবে পালিত হয় এই দুর্গোৎসব। তবে একদিনের পুজো হলেও, পুজোর আড়ম্বর ও জৌলুসে কোথাও খামতি রাখা হয় না। এমনকি অভিনব এই পুজো দেখতে প্রতি বছর মহালয়ার দিন এই আশ্রমে ভিড় জমান শয়ে শয়ে ভক্তের দলও।