সামনেই রথযাত্রা। তাই সবার প্রথমেই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রথাত্রার কথাই মনে আসে। কিন্তু শুধু রথের সময় নয়, যুগ যুগ ধরেই পুরীর মন্দিরের নানা ঘটনা মানুষকে সবসময় আকর্ষণ করে আসে। পুরীর মন্দির হিন্দু তীর্থক্ষেত্র বলেই নয়, এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন কালের বহু পৌরাণিক কথা ও লোক বিশ্বাস। জগন্নাথ মানে মহাবিশ্বের প্রভু। ওড়িশার পুরীতে অবস্থিত শ্রী জগন্নাথ মন্দিরটি ভগবান বিষ্ণুর একটি রূপ শ্রী জগন্নাথ হিসেবে পুজো করা হয়। কথিত আছে, পুরীর মন্দির এতটাই পবিত্র যে মন্দিরের ভগবান জগন্নাথের মন্দিরে এমন অলৌকিক ঘটনা ঘটে, যার উত্তর বিজ্ঞানের কাছেও নেই। অনেকেই হয়তো জানেন না যে মন্দিরের শীর্ষে ধ্বজা সর্বদা বাতাসের বিপরীত দিকে ওড়ে। এটিও একটি অলৌকিক ঘটনার মধ্যে অন্যতম। এর পেছনে রয়েছে পৌরাণিক বিশ্বাসও।
পৌরাণিক কাহিনি
মন্দিরের মাথায় ধ্বজা ওড়ানো ও পুরনো পতাকা নামিয়ে আনার অভূতপূর্ব কৌশল দেখতে কয়েক হাজার মানুষ অপেক্ষায় থাকেন। তবে অনেকেই জানেন না যে, এই ধ্বজা বাতাসের উল্টোপথে ওড়ে। হিন্দু ধর্মমতে, মন্দিরের পতাকার সঙ্গে রয়েছে ভগবান হনুমানের যোগ। কিংবদন্তি অনুসারে, সমুদ্রের শব্দের কারণে ভগবান বিষ্ণুর বিশ্রাম নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। যখন ভগবান হনুমান এই কথা জানতে পারেন, তখন তিনি সমুদ্রকে বলেন, সমুদ্র, তোমার এই গর্জন বন্ধ করো। কারণ এই বিকট শব্দের জেরে মহারাজবিশ্রাম নিতে পারছেন না। তখন সমুদ্র সেই কথার উত্তরে বললেন, এই শব্দ আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। বাতাসের গতি যতদূর যাবে এই শব্দ ততদূর পৌঁছাবে। আপনার পিতা পবন দেবকে এর জন্য অনুরোধ করা উচিত। সেই কথা শুনে, হনুমানজি তার পিতাকে আমন্ত্রণ জানালেন ও মন্দিরের দিকে বাতাস বয়ে যেতে নিষেধ করার অনুরোধ জানান। পুত্রের কথার জবাবে পবনদেব জানিয়েছিলেন, এমন ঘটনা কখনও সম্ভব নয়। এর জন্য তিনি হনুমানজিকে একটি সমাধানের সূত্র বলেছিলেন।
হনুমান কী কী প্রতিকার করেছিলেন?
পবনদেবের দেওয়া সমাধান অনুসারে, হনুমানজি তার শক্তি দিয়ে নিজেকে দুটি ভাগে ভাগ করে নেন। তারপর তিনি বাতাসের চেয়ে দ্রুত গতিতে মন্দিরের চারপাশে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করেন। এর কারণে এমন বায়ুচক্র তৈরি হয় যে সমুদ্রের শব্দ মন্দিরের ভিতরে না গিয়ে মন্দিরের চারপাশে ঘোরাফেরা করতে থাকে। এর কারণে পুরীর মন্দিরের কাছে সমুদ্র থাকা সত্ত্বেও মন্দিরের ভিতরে কখনও সমুদ্রের গর্জন শোনা যায় না। সমুদ্রের শব্দ মন্দিরের ভিতর না আসার কারণে শান্তি ও আরামে নিদ্রায় যেতে পারেন ভগবান জগন্নাথ। এ কারণে মন্দিরের পতাকাও বাতাসের বিপরীত দিকে উড়তে থাকে।
আরও অলৌকিক ঘটনা রয়েছে
মন্দিরের চূড়োয় এই পতাকা উত্তোলন প্রতিদিন পরিবর্তন করা হয়। জগন্নাথ মন্দিরের এই ঘটনা নিয়ে লোকবিশ্বাস রয়েছে, যদি একদিনের জন্যও পতাকা বদলানো না হয়, তাহলে ১৮ বছর বন্ধ থাকবে মন্দির। এই মন্দিরের প্রসাদও খুব বিষ্ময়কর উপায়ে প্রস্তুত করা হয়। প্রসাদ রান্না করার জন্য ৭টি পাত্র একে অপরের উপর রাখা হয়, যা একটি কাঠের উনুনে রান্না করা হয়। এমন অদ্ভূত উপায় রান্না করা হলেও একদম উপরে থাকা পাত্রের মধ্যে থাকা প্রসাদ সঠিক উপায়ে সেদ্ধ ও রান্না করা সম্ভব হয়। এও জানা যায়, পাত্রের প্রথম পাত্রে থাকা উপাদান আগে সেদ্ধ হয়, তারপর নীচের পাত্রগুলির উপাদান ধীরে ধীরে রান্না করা হয়।