হিন্দুদের কাছে গঙ্গা হল পবিত্র নদী। শুধু নদী বললে ভুল হবে, গঙ্গাকে আসলে দেবী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। দেবীজ্ঞানেই পুজো করা হয়। এই পবিত্র নদীর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্বের অন্যতম দূষিত নদী হলেও, এর পবিত্রতা কখনও ক্ষুন্ন হয়নি। হিন্দু পুরাণে সবজায়গাতেই গঙ্গা ওগঙ্গাজলকে পবিত্র ও শুদ্ধ বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গঙ্গাকে প্রথমে আবাহন করা হয়। বাঙালী ব্রতে দশহরা রয়েছে, এছাড় রয়েছে গঙ্গা সপ্তমী। হিন্দু পঞ্চাঙ্গ অনুসারে, এই বছর ২৭ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার পালিত হবে। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের পঞ্চম দিনে পালিত এই শুভ উৎসবটি হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। কারণ বিশ্বাস করা হয় এই দিনে মা গঙ্গা ব্রহ্মার কমণ্ডল থেকে বেরিয়ে এসে ভগবান শিবের জটায় মিশে গিয়েছিলেন। সনাতন ঐতিহ্যে, গঙ্গা সপ্তমী উত্সবটি গঙ্গা জয়ন্তী হিসাবেও পালিত হয়।
গঙ্গা সপ্তমীর শুভ সময়
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, এ বছর বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের সপ্তমী তিথি পড়েছে আগামী ২৭ এপ্রিল। এদিন এই তিথি শুরু হবে সূর্যোদয়ের ১৮ মিনিট ৪৮ মিনিট পরে। এই শুভ তিথি প্রয়াগরাজে দুপুর ১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত এবং দেশের রাজধানী দিল্লি অনুসারে ১টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। এই সময়, গঙ্গা সপ্তমীর মহান উত্সব ২৭ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার পালিত হবে। যেখানে এই বছর গঙ্গা দশেরার পবিত্র উত্সব এবছর ৩০ মে পালিত হবে। পঞ্চাঙ্গ মতে, গঙ্গা সপ্তমীর মধ্যাহ্ন পূজার শুভ সময় হবে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা ৩৮ মিনিট পর্যন্ত।
পুজো পদ্ধতি
গঙ্গা সপ্তমীর দিন মা গঙ্গার আরাধনা করতে, সূর্যোদয়ের আগে ভোরে উঠে সম্ভব হলে গঙ্গার তীরে গিয়ে স্নান করুন। যদি কোনও কারণে আপনি গঙ্গায় স্নান করতে যেতে না পারেন, তাহলে আপনার বাড়ির জলে সামান্য গঙ্গাজল মিশিয়ে দেবী গঙ্গার ধ্যান করে স্নান করুন। স্নানের পর দেবী গঙ্গার মূর্তি বা ছবির উপর গঙ্গাজল ছিটিয়ে ফুল, চন্দন, ফল, মিষ্টি ইত্যাদি নিবেদন করুন। এর পরে, খাঁটি ঘি-র প্রদীপ জ্বালান ও গঙ্গার স্তোত্র পাঠ করুন। এছাড়া তাঁর মন্ত্র “ওম নমো গঙ্গায় বিশ্বরূপিণ্যায় নারায়ণায় নমো নমঃ” জপ করতে পারেন। পূজা শেষে, গঙ্গার আরতি করুন ও তাঁর কাছে সুখ, সমৃদ্ধি এবং সৌভাগ্যের আশীর্বাদ চেয়ে প্রার্থনা করুন।
গঙ্গা সপ্তমীর দান
গঙ্গা সপ্তমীতে গঙ্গার আরাধনা করে পুণ্যফল পেতে হলে, গঙ্গার তীরে গিয়ে গঙ্গা স্নান করার পর কোনও দুঃস্থকে যথাসম্ভব অন্ন, বস্ত্র, টাকা ইত্যাদি দান করা উচিত। বিশ্বাস করা হয় যে দান সম্পর্কিত এই প্রতিকার করলে ভক্তরা পাপ থেকে মুক্তি পান ও পুণ্য লাভ করেন।