দেবী বগালামুখী দশ মহাবিদ্যার একজন। তন্ত্রশাস্ত্র মতে, বগলামুখী দেবী হলেন তন্ত্র মতে সবচেয়ে বড় ও অন্যতম শক্তিশালী দেবী। বগলামুখী সম্পর্কে হিন্দুদের মধ্যে বিশ্বাস রয়েছে যে তাঁর কাছে আসা ছোট বা বড় প্রত্যেকের ইচ্ছা অবশ্যই পূরণ হয়। উত্তরভারতে এই জাগ্রত দেবীকে পীতাম্বরী নামেও পরিচিত। এই দেবীর রয়েছে ১০৮টি নাম। আবার অনেকের মতে, দেবীর ১১০৮ নাম রয়েছে। বগলামুখী শব্দের অর্থ হল যিনি যাঁর মুখ কোনও কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নিতে সমর্থ। মানে যিনি মুখে তুলে ধরতে সক্ষম।
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, সত্যযুগে একটা সময় ব্রহ্মাণ্ডে ভয়ংকর এক ঝড় ওঠে। সেই ঝড়ে তাণ্ডবে সকল সৃষ্টি ধ্বংসের মুখোমুখি হয়। সেই সময় স্বর্গের সব দেব-দেবী একজোট হোন। ঝড় থামিয়ে সকল দেবতাদের স্তবে সন্তষ্ট করতে হরিদ্রা সরোবর থেকে আবির্ভূত হোন দেবী বগলামুখী। কাহিনি অনুসারে, দেশের মধ্যপ্রদেশে দাতিয়া এলাকায় পীতাম্বরা পীঠে হরিদ্রা সরোবরের একটি হ্রদ রয়েছে। সেই হ্রদ অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়। হিন্দুদের মতে, দেবী বগালামুখীর পুজো করলে ভক্তরা সমস্ত ঝামেলা থেকে মুক্তি পান ও সব ইচ্ছা পূরণ হয়। সেই দেবীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২৯ এপ্রিল পালিত হবে বগলামুখী জয়ন্তী।
শুভ সময়
পঞ্চাঙ্গ মতে, প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে দেবী বগলামুখী জয়ন্তী পালিত হয়। এই বছর আগামী ২৮ এপ্রিল, শুক্রবার পালিত হবে এই জয়ন্তী। পঞ্চাঙ্গ অনুসারে, এ দিনে বগলামুখীর পুজোর সর্বোত্তম সময় শুরু হবে সকাল ১১টা ৫৮ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ৪৯ মিনিট পর্যন্ত। এছাড়াও, আপনি যদি চান, তাহলে ভোর ৩টে ৫৭ মিনিট থেকে সকাল ৪টে ৪১ মিনিট পর্যন্ত বগলামুখীর বিশেষ পূজা করতে পারেন।
বগুলামুখী রূপ
হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, বগুলামুখী চোখের পলকে সমস্ত ঝামেলা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেন। ভক্তের ভ্রান্ত মানসিক শক্তি বা শত্রুনাশের জন্য দেবীর গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁর মূল অস্ত্র হল মুগুর। ভারতে সাধারণত বগলামুখীর দ্বিভূজা মূর্তি পুজোর প্রচলনই সবচেয়ে বেশি। গায়ের রঙ সোনালী ও তাঁর পরনের শাড়ির রঙ হল হলুদ। হলুদ পদ্মের ভরা অমৃতের মাঝে একটি হলুদ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত। মাথায় রয়েছে অর্ধচন্দ্র। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, দেবী বগুলামুখীর এত শক্তি রয়েছে যে তাঁর আশীর্বাদে ভাগ্যও পরিবর্তন হতে পারে ভক্তদের।
আশীর্বাদ পেতে পুজো করবেন কীভাবে
বিজয়ের বর প্রদানকারী দেবী বগলামুখীর পুজোয় হলুদ রঙের অনেক ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। বিশ্বাস করা হয় যে, ভক্তরা হলুদ রঙের পোশাক পরিধান করলে, হলুদ রঙের আসনে বসে নিয়ম-কানুন মেনে পুজো করেন, তার ওপর দেবীর আশীর্বাদ বর্ষণ হয় খুব দ্রুত। এই পরিস্থিতিতে, বগলামুখী জয়ন্তীর দিন, দেবীর আশীর্বাদ পেতে, তাঁর ভক্তদের বিশেষ করে হলুদ কাপড়ে কিছু ফুল ও ফল ইত্যাদির সঙ্গে সামান্য হলুদ নিবেদন করা উচিত।
দুরন্ত উপায়
বিশ্বাস করা হয় যে বগলামুখী জয়ন্তীর দিন যদি কোনও ভক্ত হলুদের মালা অর্পণ করেন ও ওম বগলামুখী দেব্যায় হ্লীন ক্লীন শত্রু নাশম কুরু মন্ত্র উচ্চারণ করেন, তার মনস্কামনা শীঘ্রই পূরণ হয়। এইভাবে উপাসনা করলে আদালত মামলায় দ্রুত জয়লাভ হয় এবং শত্রুদের বিনাশ হয়।
Disclaimer: এখানে উপলব্ধ তথ্য শুধুমাত্র বিশ্বাস এবং তথ্যের উপর ভিত্তি করে। এখানে উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে টিভিনাইন বাংলা কোনও বিশ্বাস বা তথ্য নিশ্চিত করে না। কোনও তথ্য বা বিশ্বাস অনুশীলন করার আগে একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন।