আষাঢ় মাসের ( Asadh Month) শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে জগন্নাথ দেব রথযাত্রা করেন। এই সময় সারা দেশ জুড়ে চলে গুপ্ত নবরাত্রী। আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষে রথযাত্রা থেকে উল্টোরথ পর্যন্ত তৃতীয়া থেকে নবমী তিথির মধ্যে যে কোন শনিবার ও মঙ্গলবার পড়়ে সেই দিনেই বিপত্তারিণী পুজা (Bipadtarini Puja) হয়। এই ব্রত পালিত হয়। বারো মাসে যত ব্রত আছে, তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বিপত্তারিণী ব্রত (Bipadtarini Vrat)। এই ব্রত পালন করলে জীবনে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি বজায় থাকে। শ্রী শ্রী নারদমুনি দেবাদিদেব মহাদেবকে জিজ্ঞাসা করায় উত্তর পেয়েছিলেন, আমাদের বিভিন্ন রূপের পুজো করা দেব-দেবীর মধ্যে এই ‘দুর্গে দুর্গতি নাশিনী অভয়বিনাশিনী বিপদতারিণী মা দুর্গে’, এই মা দুর্গারই একটা রূপ বিপত্তারিণী’।
যে নারী ভক্তিভরে এই ব্রত পালন করেন, ভবসুন্দরী তার সব বিপদ দূর করেন। সে নারীকে কখনও বৈধব্য যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না। মামলা, মোকদ্দমা, বিরহ যন্ত্রণা ইত্যাদি সকল বিপদ থেকে মা উদ্ধার করেন। গ্রামাঞ্চলে বিপত্তারিণী পূজা চারদিন ধরে চলে। প্রথম দিনে দেবীর “আরাধনা” (পূজা) করা হত। মেয়েরা দণ্ডী কাটে। তারপর দুই রাত্রি ধরে রাতে বাংলা লোকগান, ভজন ও কীর্তন চলে। চতুর্থ দিনে বিসর্জন হয়। বিপত্তারিণী পূজা উপলক্ষে মেয়েরা উপবাস করে। প্রথা অনুসারে হাতে এক গুচ্ছ পবিত্র লাল সুতো ও দূর্বাঘাস বাঁধে।
ব্রতের উপকরণ:
ব্রতপালনের উপকরণ সামান্য । পুজোর উপকরণের পুষ্প, ফল, ইত্যাদি। মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুসারে এই সবকিছুই ১৩টি করে নিবেদন করতে হয়। হাতে ধারণ করার লালসুতোটিতেও ১৩টি গাঁট দেওয়ার বিধান রয়েছে। ঘট‚ আমের পল্লব‚ শীষ সমেত ডাব‚ একটি নৈবেদ্য‚ তেরো রকম ফুল, তেরো রকম ফল (আনারস নয় ভাগ করে অবশ্যই)‚ দু ভাগে কাটা তেরো রকম ফল । আলাদা চুবড়়িতে তেরোটা গোটা ফল‚ তেরো গাছি লালসুতো‚ তেরোটি দুর্বা‚ তেরোটি পান ও তেরোটি সুপুরি দিতে হয় । তেরো গাছি লাল কস্তাসুতো, তেরোটি পৈতা, তেরোটি লবঙ্গ, তেরোটি ছোট এলাচ, তেরোটি বড় এলাচ এবং পুজোর শেষে পুরোহিতকে যথাসাধ্য দান-ধ্যান ও দক্ষিণা দিতে হয় এবং পুজোর শেষে মন দিয়ে ব্রত কথা শুনতে হবে।
বিপত্তারিণী ব্রতের মন্ত্র:
মাসি পূণ্যতমেবিপ্রমাধবে মাধবপ্রিয়ে। ন বম্যাং শুক্লপক্ষে চবাসরে মঙ্গল শুভে। সর্পঋক্ষে চ মধ্যাহ্নেজানকী জনকালয়ে। আবির্ভূতা স্বয়ং দেবীযোগেষু শোভনেষুচ।নমঃ সর্ব মঙ্গল্যেশিবে সর্বার্থসাধিকে শরণ্যে ত্রম্বক্যে গৌরী নারায়ণী নমস্তুতে।।
বিপত্তারিনী ব্রত পালনের নিয়ম
১. ব্রতের আগের দিন নিরামিষ খাবার খেতে হয়।
২. ব্রতের দিন ফুল, মিস্টি, তেরটি লুচি, খেয়ে উপবাস ভাঙতে হয়।
৩. পূজা দিতে হয় তেরো প্রকার ফল আর তোরো প্রকার ফুল দিয়ে।
৪. লাল সুতোয় তেরোটি গাঁট ও আট পাতার দুর্বা (অষ্টদুর্বা)দিয়ে বেঁধে একটা ডুরি তৈরি করে মেয়েদের বাম হাতে ও ছেলেদের ডান হাতে বাঁধতে হয়। এটাকে সবাই মনে করেন বিপদে রক্ষাকবচ।
৫. যজমানেরা সাধ্যমতো দানদক্ষিণা দেন পুজারী ব্রাহ্মণকে।
৬. প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লা তৃতীয়া থেকে নবমী তিথির মধ্যে যে কোনও শনিবার বা মঙ্গলবার এই ব্রত পালন করা হয়।
৭. এই ব্রত শুরু করলে তিন বছর, পাঁচ বছর, নয় বছর পালন করা উচিত।
৮. ব্রতের আগের দিন নিরামিষ বা একবার হবিষ্যান্ন গ্রহণ করা উচিত।
৯. দেবী ভগবতী শুধু জবা ফুলেই তুষ্ট থাকেন, তাই মায়ের পুজোয় লাল জবা অতি আবশ্যক, লাল জবা ফ,লের পুষ্পাঞ্জলি দ্বারাই মায়ের পুজো সম্পন্ন হয়
১০. এই ব্রতর প্রভাবে পূজারি ব্রাহ্মণকে দিয়ে ঘট স্থাপন করে হলুদ সুতো দিয়ে দুর্বা-সহ ঘটের মুখে বাঁধতে হয়। তারপর স্বস্তিবাচন করে নামগোত্র ধরে সংকল্প সৃক্ত উচ্চারণ করতে হবে। অঙ্গশুদ্ধি, করশুদ্ধি করে পঞ্চদেবতার পাদ্যার্ঘ দিয়ে পুজো করতে হবে বিপত্তারিণী রূপী দুর্গার।