তিনি সর্বশক্তি, তিনি মহামায়া! তাঁর আগমন বার্তায় খুশিতে মুখোরিত হয়ে ওঠে চারিদিক। তিনি আদিশক্তি দেবী দুর্গা। সিংহবাহিনী তিনি। গিরিরাজ হিমালয়ের প্রদান করা বাহনের পিঠে চেপেই মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন দেবী। তাঁর সেই দশভুজা রূপেই পুজিত হন এই ধরাধামে। সঙ্গে আসেন উমার চার ছেলেমেয়ে।
তবে কেবল সিংহ নয়, অনেক বনেদি বাড়ির পুজোতেই সিংহের জায়গায় দেখা মেলে ঘোড়ার। কলকাতার প্রসিদ্ধ মিত্র বাড়ি থেকে, নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পুজো, এমন ঘোড়ারূপী সিংহের। কিন্তু কেন এমন প্রথা? জানেন সেই রহস্য?
সিংহ হল সাহস এবং বিক্রমের প্রতীক। শোনা যায় ১৬০১ সালে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রাজ্যের মঙ্গলকামনায় মহালয়া থেকে শুরু করে একটানা নবমী পর্যন্ত যজ্ঞ করেন। দেবী সেখানে যোদ্ধারূপে পুজিত হন বলেই দেবীর বাহনের স্থান নেয় ঘোড়া।
আবার অনেক ইতিহাসবিদের মতে ঘোটকমুখী সিংহ হওয়ার পিছনে নাকি রয়েছে ইংরেজদের হাত। আসলে সেই সময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতীক ছিল ঘোড়া। সেই আমলে জমিদার বাড়িগুলিতে দুর্গাপুজোর জৌলুস বেশি থাকায় কোম্পানিকে খুশি করতে, প্রতীক ঘোড়াকে বাহনরূপে রাখা হয়।
আবার কেউ কেউ বলেন ১৮২৬ সালে চুঁচড়ায় একটি বারোয়ারি পুজোকে কেন্দ্র করে চরম বিরোধ বাঁধে শাক্ত এবং বৈষ্ণবদের মধ্যে। কোন মতে পুজো হবে সেই নিয়ে ঝামেলা। শেষে সেই সময় পণ্ডিতেরা একই প্রতিমাকে দু’বার দুই মতে পুজো করার বিধান দেন। কিন্তু তাতে অখুশি হয়ে শেষে পুজো দুই ভাগে ভেঙে যায়। শাক্ত মতে দুর্গার বাহন হয় সিংহ। বৈষ্ণবদের দুর্গাপুজোয় মায়ের বাহন হয়ে দেখা দেন ঘোড়া। আজও বহু জায়গায় সেই পুরনো প্রথা মেনেই বহু জায়গায় দুর্গার বাহন হিসাবে ঘোড়াকেই পুজো করা হয়।