বাংলা ক্যালেন্ডার হিসেবে বছরের শেষ মাস হল চৈত্র (Chaitra)। আর পঞ্জিকা মতে এই চৈত্র মাস মল মাস হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ যে মাসে কোনও রকম শুভ কাজ হয় না। তাই বলে কিন্তু পুজো-পার্বণ থেমে থাকে না। এই চৈত্র মাসেই গাজন হয়। শিবের পুজো হয়। থাকে বাসন্তী পুজো। চৈত্র নবরাত্রিও উদযাপন করা হয় এই সময়। দেশজুড়েই কিন্তু পালন করা হয় এই নবরাত্রি, যা হিন্দু উৎসবের (Hindu Festival) মধ্যে অন্যতম। শরীরের আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিশুদ্ধতার উপর নির্ভর করে কিন্তু পালন করা হয় ৯ দিনের এই উৎসব। অনেকেই নবরাত্রির ব্রত রাখতে পছন্দ করেন। নবরাত্রির সময় যে কোনও রকমের আঁশ খাবার থেকে দূরে থাকা, চুল কাটা ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে বলা হয়। আসলে মনকে শান্ত রাখার জন্য এবং নিজের মধ্যেকার ধৈর্য বাড়িয়ে তোলার জন্য একরকম সংযম হল এই নবরাত্রি। উল্টোদিকে দেখতে গেলে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিন্তু শরীরের ডিটক্সিফিকেশন (Detoxification) করা হয়। শরীর থাকে সুস্থ। কারণ এই সময়েই বাড়ে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। তবে চৈত্র মাসে দোকান-বাজার এবং কেনাকাটায় প্রচুর ছাড় থাকলেও এই সময় কিন্তু কোনও শুভ কাজ হয় না। অর্থাৎ বিয়ে, অন্নপ্রাশন, পৈতে, গৃহপ্রবেশ সব রকম অনুষ্ঠান থাকে বন্ধ। বিশেষত জোর দেওয়া হয় বিয়ের অনুষ্ঠানের উপর। কিন্তু কেন এই রকম হয়, তা জানা আছে কি?
চৈত্র নবরাত্রির ব্রত হিন্দুদের কাছে অন্যতম প্রধান ব্রত। অনেকেই এই কয়েকটা দিন নিজের মতো করে উপবাস করেন। ব্রত-উপবাসের জন্য প্রয়োজন একাগ্রতা। আর শাস্ত্র বলে, এই চৈত্র মাসেই মানুষের মধ্যে কামউত্তেজনা থাকে সবচাইতে বেশি। শীতের পর বসন্তের ফুরফুরে হাওয়ায় মনে বাড়ে যৌন উত্তেজনা। কিন্তু শাস্ত্র মতে এই সময় কোনও রকম যৌন মিলন নিষিদ্ধ। সেই চিন্তাভাবনা এড়াতেই কিন্তু চৈত্র মাসে বিবাহ-বন্ধন থেকে দূরে থাকার কথা বলা হয়।
ধর্ম মতে, নবরাত্রির কয়েকটা দিন মা দুর্গা পৃথিবীতে আসেন এবং বাস করেন সমস্ত মহিলার মধ্যে। যে কারমে এই ব্রত কমবয়সী মেয়েদেরই বেশি পালন করতে দেখা যায়। একরকম বাধ্য করা হয় বলা চলে। বলা হয় এই ব্রত পালন করলে জীবনের অনেক বাধা-বিপদ কেটে যায় এবং মনস্কামনা পূরণ হয়।
বিজ্ঞান মতে অবশ্য অন্য যুক্তি। শীতের পর আসে বসন্ত। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে শরীরে একাধিক সমস্যা দেখা যায়। সেই সঙ্গে অনেকেরই শীতে ওজন বাড়ে। আর তাই শরীরের ডিটক্সিফিকেশনের জন্য সেরা এই বসন্ত। সেই সঙ্গে শরীরে জলের অভাব হওয়ায় এই সময় প্রায়শই লেগে থাকে ক্লান্তি। কাজ করার এনার্জি পাওয়া যায় না। যৌন সঙ্গমের জন্যও তো শরীরে শক্তির প্রয়োজন। যে সব কারণে চৈত্র মাসে যৌনতা নিষিতদ্ধ। আর সংক্রমণ জনিত অসুখ ঠেকাতেও যৌনতা নিষিদ্ধ করা হয় এই সময়। আর বাংলা বছরের শেষ মাস হওয়ায় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান লেগেই থাকে, আর তাই এই সময় বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।