হিন্দু ধর্মে দেবী দুর্গার আরাধনাকারী ভক্তদের কাছে চৈত্র নবরাত্রির (Chaitra Navratri) গুরুত্ব অনেক। এই নবরাত্রিতে, অনেকেই শক্তিপীঠগুলিতে যান এবং তাঁদের ইচ্ছা পূরণের জন্য মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন। হিন্দুধর্ম (Hindu Mythology) অনুসারে, শক্তিপীঠ মানে সেই পবিত্র স্থান যেখানে দেবীর ৫১টি অংশের টুকরো পড়েছিল। ভারত ছাড়াও এই শক্তিপীঠগুলি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, চীন, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে। শ্রীলঙ্কাতেও (Sri Lanka) রয়েছে দেবীর একটি শক্তিপীঠ। এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন লঙ্কার রাজা রাবণ। শ্রীলঙ্কার সংকরি দেবীর মন্দিরটি রাজধানী কলম্বো থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে ত্রিকোনামালি নামক স্থানে একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত। এই মন্দিরটি গত কয়েক শতাব্দী ধরে হিন্দুদের বিশেষ করে তামিল ভাষী হিন্দুদের বিশ্বাসের কেন্দ্র হয়ে আছে। ত্রিকোনামালীতে আসা মানুষেরা একে শান্তির স্বর্গও বলেন।
শ্রীলঙ্কার ত্রিকোনামালি জেলায় ১ লক্ষ হিন্দুর বাস এবং এই মন্দিরটি তাঁদের বিশ্বাসের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র। এখানে চৈত্র ও কার্তিক মাসের নবরাত্রিতে নানা বিশেষ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ভারত থেকে বিশেষ করে তামিলনাড়ু থেকেও ভক্তরা এই অনুষ্ঠানে যোগদান করতে যান। নবরাত্রির সময় এখানে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১০০০ মানুষের ভিড় হয়। তবে অষ্টমী এবং নবমীতে এই ভিড় আরও দ্বিগুণ হয়ে যায়।
কথিত আছে, এখানে মা সতীর দেহের উসন্ধি, অর্থাৎ পেট ও উরুর মধ্যবর্তী অংশ পড়ে গিয়েছিল। তাই এই মন্দিরটিকে শক্তিপীঠ হিসাবে বিবেচনা করা হত। কোনও কোনও গ্রন্থে এখানে সতীর গলা ও নূপুর পড়ার কথাও লেখা হয়েছে। এখানে শক্তি ইন্দ্রাক্ষী এবং ভৈরব রাক্ষসেশ্বর। শঙ্করী দেবীর মন্দিরটি রাবণ নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। এখানে শিবের একটি মন্দিরও রয়েছে, যাকে ত্রিকোনেশ্বর বা কোনেশ্বরম বলা হয়। তাই শিব ও শক্তি উভয়ের পূজাতেই এই স্থানটির গুরুত্ব রয়েছে।
আদি শঙ্করাচার্য কর্তৃক নির্ধারিত ১৮টি মহা-শক্তিপীঠেও এই স্থানটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই মন্দিরে বহুবার হামলা হয়েছে, যার কারণে মন্দিরের গথন বদলাচ্ছে, কিন্তু প্রতিবারই মূর্তি রক্ষা পেয়েছে। চোল ও পল্লব রাজারা এই মন্দিরের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে অনেক কাজ করেছিলেন।
প্রকৃতপক্ষে, এই বিশাল মন্দিরটি ১৭ শতকে পর্তুগিজ আক্রমণকারীরা ভেঙে দিয়ে ছিল, তারপরে মন্দিরের একমাত্র স্তম্ভ ছাড়া এখানে কিছুই ছিল না। স্থানীয়দের মতে, দক্ষিণ ভারতের তামিল চোল রাজা কুলাক্কোত্তন এই মন্দিরটি পুনরায় সংস্কার করেন, তারপর ১৯৫২ সালে শ্রীলঙ্কায় বসবাসকারী তামিল হিন্দুরা এটিকে বর্তমান রূপ দেন।
আরও পড়ুন: দোলে ভাঙ ব্যবহারের পিছনে রয়েছে মহাদেবের যোগ! জানুন ভাঙ খাওয়ার তাৎপর্য