দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে নবরাত্রি উৎসব। নবরাত্রির নয় দিনে দেবী দুর্গার নয়টি রূপের পূজা করা হয়। নবরাত্রির তৃতীয় দিনে দুর্গার তৃতীয় রূপ, দেবী চন্দ্রঘণ্টার পূজা করা হয়। এই দিন চন্দ্রঘণ্টা এবং কুশমণ্ডা পূজা করার নিয়ম। উগ্র ও ক্রোধের প্রতীক হলেন দেবী দুর্গার তৃতীয় অবতার।
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী,দেবী চন্দ্রঘণ্টাকে বলা হয় অসুরের হত্যাকারী। হিন্দুদের বিশ্বাস, ভক্তদের দুঃখ-অভাব দূর করতে তাঁর হাতে ত্রিশূল, তলোয়ার ও গদা সজ্জিত থাকে। কপালে ঘণ্টার আকৃতি অর্ধচন্দ্রের চিহ্ন থাকে, যার কারণে নাম হয়েছে চন্দ্রধণ্টা। এই নয়ারূপের বাহন হল সিংহ। রয়েছে ১০টি হাত। চার হাতের মধ্যে রয়েছে পদ্মফুল. ধনুক, জপমালা ও তীর। পঞ্চম হাতে কোনও অস্ত্র নেই, রয়েছে অভয়া মুদ্রা। একই সঙ্গে অপর চার হাতে থাকে, ত্রিশূল, গদা, কমন্ডুল ও তলোয়ার। পঞ্চম হাতেদেবীর ভারদা মুদ্রা রয়েছে। হিন্দু মতে,দুর্গার এই রূপ ভক্তদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পুজোয় মিষ্টি ও খির নিবেদন করা হয়।
বাড়িতেই কীভাবে দেবী চন্দ্রঘণ্টা পূজা করবেন
এই দিনে মা চন্দ্রঘণ্টার পূজা করার সময় দেবী দুর্গার তৃতীয় অবতারের মূর্তি বা ছবি রাখুন। এরপর গঙ্গাজল বা গোমূত্র দিয়ে পরিশোধন করতে পারেন। রূপো বা তামার পাত্রের মধ্যে নারকেল নাড়ু, মিষ্টি অর্ঘ্য হিসেবে পুজো করুন। বৈদিক ও সপ্তশতী মন্ত্রের মাধ্যমে মা চন্দ্রঘণ্টা-সহ সকল দেবতার পূজা করুন।
পূজার সময়, আহ্বান, আসন, পদ্য, আধ্য, আচমন, স্নান, পোশাক, সৌভাগ্যের সূত্র, চন্দন, রলি, হলুদ, সিঁদুর, দূর্বা, বিল্বপত্র, অলঙ্কার, ফুলের মালা, সুগন্ধযুক্ত পদার্থ, ধূপ-প্রদীপ, নৈবেদ্য, ফল পান, আরতি, প্রদক্ষিণা, মন্ত্রপুষ্পঞ্জলি ইত্যাদি তারপর সবার মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করার নিয়ম।
ব্রত-কাহিনি
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, অসুরদের দৌরাত্ম্য শেষ করতে দেবী দূর্গা চন্দ্রঘণ্টার রূপ ধারণ করেছিলেন। মহিষাসুর নামে এক অসুর দেবরাজ ইন্দ্রের সিংহাসন দখল করেছিলেন। অসুররাজ মনোবাসনা ছিল দেবতাদের জায়গা স্বর্গ থাকবে তাঁর দখলে। তাঁর এই ইচ্ছের কথা জানতে পেরে দেবতারা খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন। দেবতারা এই কঠিন সমস্যার জন্য ত্রিদেব অর্থাৎ ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশের সাহায্য চেয়েছিলেন। অসুরের কথা শুনে চটে যন ত্রিদেব। অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে তিনজনের মুখ থেকেই একটি শক্তি সৃষ্টি হয়, সেখান থেকেই দেবীর জন্মগ্রহণ করে। মহাদিদেব তাঁকে তাঁর ত্রিশূল এবং ভগবান বিষ্ণু তাঁর চক্র নয়া সৃষ্টিকে উপহার দেন। তারপর একইভাবে অন্য সব দেবতারাও তাদের অস্ত্র দেবীর হাতে তুলে দেন। ইন্দ্রের কথা মতো দেবীর হাতে ছিল মাত্র এক ঘণ্টা সম। সেই সময়টুকুর মধ্যেই মহিষাসুরকে বধ করতে হবে। অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ ও রাগান্বিত হয়ে অসুরকে বধ করার জন্য আক্রমণ করলে মহিষাসুর বুঝতে পারে যে তাঁর সময় ঘনিয়ে এসেছে। দুই শক্তিশালী যোদ্ধার মধ্যে বেশ কঠিন লড়াই চলে। স্বর্গের দেবতাদের রক্ষা করতে একজন নারীর শক্তি ছিল অসামান্যা।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: নবরাত্রির দ্বিতীয় দিনে মনের শান্তি, আত্মবিশ্বাস ফেরাতে এই দেবীর আরাধনা করার নিয়ম!