হিন্দুদের বিশ্বাস, যোগিনী একাদশী ব্রত পালনের মধ্যে দিয়ে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সেই বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে ও পরলোকে মোক্ষলাভের আশায় এই দিন উপবাস করেন হিন্দুরা। পুরাণে, একাদশী তিথির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হিন্দু পঞ্জিকা মতে, আষাঢ় মাসের কৃষ্পক্ষের একাদশীকে যোগিনী একাদশী বলা হয়। বলা হয়, বছরের সমস্ত একাদশী তিথিই ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশে নিবেদিত। এই দিনটিতে নিষ্ঠাভরে ভক্তরা তাঁর পূজা করে থাকেন। হিন্দুমতে, এই পবিত্র দিনে একাদশীর ব্রত পালন করলে ৮৮ হাজার ব্রাহ্মণকে ভোজন করিয়ে পূণ্যলাভের সমতুল্য ফল পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, বছরে মোট ২৪টি একাদশী থাকে। ২০২১ সালে কবে, কখন যোগিনী একাদশী ব্রত পালন করা হবে এবং এই ব্রত পালনের গুরুত্ব কী, তা জেনে নিন একঝলকে…
তারিখ ও শুভক্ষণ
হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথিতে যোগিনী একাদশী পালিত হয়। আগামী ৫ জুলাই, সোমবার একাদশী তিথি। তবে একাদশী তিথি শুরু হচ্ছে ৪ জুলাই, রাত ০৭টা ৫৫ মিনিটে।
আরও পড়ুন: পুজোর সময় শঙ্খ বাজানো ও স্বস্তিক চিহ্ন দেওয়ার রীতি, কেন জানেন?
গুরুত্ব
পৌরানিক কাহিনি অনুযায়ী, হেম নামে একজন মালী ছিলেন। প্রতিদিন শিব পূজার জন্য তিনি ফুল তুলে যক্ষরাজ কুবেরকে দিতেন। হেমমালির এক পরমা রূপবতী পত্নী ছিল। একদিন তিনি তাঁর স্ত্রীর প্রতি কামাসক্ত হয়ে পড়লেন, আর রাজভবনে যাওয়ার কথাও ভুলে গেলেন। এদিকে পূজার সময় চলে যাচ্ছে দেখে রাজা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন। দূত পাঠিয়ে রাজা জানতে পারলেন মালির দেরি হওয়ার আসল কারণ। শুনে রাজা আরও ক্রুদ্ধ হলেন এবং তাঁকে দেখা মাত্র রাজা ক্রোধবশে তাঁকে অভিশাপ দিলেন। অভিশাপের কারণে তাঁর কুষ্ঠ রোগ হয়ে যায়। ফলে হেম মালি দীর্ঘকাল যাবৎ কুষ্ঠরোগ ভোগ করতে লাগলেন। রোগের যন্ত্রণায় বহুকষ্টে তিনি জীবনযাপন করতে লাগলেন। এরপর এক তিনি ঋষির কাছ থেকে তিনি যোগিনী একাদশী ব্রত সম্পর্কে অবহিত হন। এই ব্রত করার ফলে তাঁর কুষ্ঠরোগ নিরাময় হয় এবং তখন থেকেই এই একাদশীর গুরুত্ব লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে। মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠরকে যোগিনী একাদশী ব্রতর গুরুত্ব বলতে গিয়ে জানিয়েছিলেন যে, ৮৮ হাজার ব্রাহ্মণকে ভোজন করানোর পরে যে পুণ্য পাওয়া যায় তার সমান পুণ্য প্রাপ্তি যোগিনী একাদশী ব্রত করলে পাওয়া যায়। যে ব্যক্তি এই মহাপাপ বিনাশকারী ও পুণ্যফল প্রদায়ী যোগিনী একাদশীর কথা পাঠ এবং শ্রবণ করে সে অচিরেই সর্বপাপ থেকে মুক্ত হয়।
যোগিনী একাদশীর পুজাবিধি
যোগিনী একাদশী ব্রত পালনের জন্য খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান করে পরিষ্কার বা নতুন পোশাক পরুন। গঙ্গা জল ছিটিয়ে পূজা ঘর শুদ্ধ করে নিন। এরপর ভগবান বিষ্ণুর স্মরণ করুন এবং একাদশী ব্রত পালনের সঙ্কল্প নিন। সব একাদশীর মত এটিও ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশে নিবেদিত। তাই এই দিন ভগবান বিষ্ণুর পূজা করুন। এই দিন বিষ্ণু মন্ত্র বা বিষ্ণু সহস্রনাম জপ করা শুভ ফলদায়ক। ভগবান বিষ্ণুর কাছে তুলসী খুবই প্রিয়, তাই তুলসী পাতা তাঁর পুজোতে অবশ্যই ব্যবহার করুন। ভগবান বিষ্ণুর আরতির মাধ্যমে পূজা সম্পন্ন করুন। বার আগে ভগবান বিষ্ণুকে ভোগ অর্পণ করুন। ভোগের জন্য আপনি কিছু মিষ্টি প্রস্তুত করতে পারেন। হিন্দুদের বিশ্বাস, যোগিনী একাদশী ব্রতের প্রভাবে কোনও ব্যক্তির কুষ্ঠরোগ থেকে মুক্তি মেলে। পাপ থেকে মুক্তি মেলে। পূর্ণ বিশ্বাস ও নিষ্ঠার সঙ্গে যে ব্যক্তি এই ব্রত পালন করেন, তিনি ৮৮ হাজার ব্রাহ্মণকে ভোজন করানোর সমান পুণ্য ফল লাভ করেন।