Yogini Ekadashi 2023: কামাসক্তে লিপ্ত মালিকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যক্ষরাজ কুবের! হিন্দুধর্মে যোগিনী একাদশীর গুরুত্ব জানলে অবাক হবেন
Mythological Story: কথিত আছে, যোগিনী একাদশীর উপবাস করলে ভক্তদের সমস্ত পাপ দূর হয়, দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি সম্ভব হয়। এই উপবাসের পিছনে রয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাহিনি। তাই ব্রতপাঠ করার সময় কোন পৌরাণিক কাহিনি।

সব কিছুর পিছনে আলাদা আলাদা কারণ থাকে। তাই পুজোপার্বনে যে সব রীতি, উপবাসের নিয়মের কথা উল্লেখ রয়েছে, তাতেও কোনও না কোনও কারণ থাকে। আজ যোগিনী একাদশী ব্রত ও উপবাসেরও রয়েছে নানা পৌরাণিক কাহিনি। ব্রতকথার গুরুত্ব। বাংলার ব্রতপাঠে উপবাস করা হয়, পুজোর পরে ব্রতপাঠ করার রীতি রয়েছে। কাহিনি ছাড়া কোনও উপবাস অসম্পূর্ণ। পঞ্চাঙ্গ মতে, আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথিতে যোগিনী একাদশী উপবাস পালন করা হয়। এ বছর এই উপবাস পালিত হচ্ছে এই ১৪ জুন, বুধবার। হিন্দু ধর্মে, এই উপবাসটি ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে পুজো করা হয়। কথিত আছে, যোগিনী একাদশীর উপবাস করলে ভক্তদের সমস্ত পাপ দূর হয়, দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি সম্ভব হয়। এই উপবাসের পিছনে রয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাহিনি। তাই ব্রতপাঠ করার সময় কোন পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে, তা জেনে নিন একনজরে…
যোগিনী একাদশীর পৌরাণিক কাহিনি
স্বর্গধামের অলকাপুরী নগরীতে কুবের নামে এক রাজা বাস করতেন। তিনি শিবের অত্যন্ত ভক্ত ছিলেন। প্রতিদিন ভক্তিভরে শিবের পুজোপাঠ করতেন। হেম নামে এক মালী যক্ষরাজ কুবেরের বাড়িতে পুজোর জন্য মানসসরোবর থেকে ফুল নিয়ে আসতেন রোজ। বিশালাক্ষী নামে সুন্দরী, রূপবতী পত্নী ছিল হেমের। রোজকার মতো ফুল আনতে গিয়েছিলেন হেম। সেই সময় তাঁর স্ত্রীর প্রতি কামাসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। এদিকে রাজার ভবনে যেতে ভুলে গেলে অত্যন্ত ক্রদ্ধ হন কুবের। বেলা বয়ে গেলে দূত পাঠানোর আদেশ দেন। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও না আসার কারণ জানতে দূত পাঠালে সেই দূত ফিরে এসে বলেন, গৃহে স্ত্রীর সঙ্গে আনন্দে মত্ত রয়েছেন মালি। তাই এই বিলম্ব। এই কথা শুনে অত্যন্ত রেগে গিয়ে তত্ক্ষণাত্ তাঁকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।
এদিন মালি নিজের কর্মকাণ্ড বুঝতে পেরে অত্যন্ত ভয় পেয়ে থাকেন। তাই স্নান-আহার না করেই রাজভবনে চলে যান। রাজা কুবের রেগে গিয়ে বলে ওঠেন- ‘ওরে পাপী! কামী ! তুমি আমার পরম পূজনীয় ভগবান শিব মহারাজকে অসম্মান করেছ, তাই আমি তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি যে তুমি নারী থেকে বিচ্ছেদ ভোগ করবে ও মৃত্যুভূমিতে গিয়ে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হবে।’
কুবেরের অভিশাপে হেম মালি স্বর্গ থেকে পতিত হন ও ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি পৃথিবীর মাটিতে পড়ে যান। মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই গোটা শরীর শ্বেতকুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হোন। সেই সময় থেকে তাঁর স্ত্রীও নিখোঁজ হোন। মৃত্যুর প্রবেশদ্বারে গিয়ে মালি অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। ঘন জঙ্গলে গিয়ে অনাহারে থেকে আরও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
মৃত্যুর মুখে পড়ে, ঘুরতে ঘুরতে একদিন তিনিহিমালয়ের কোলে অবস্থিত ঋষি মার্কন্ডেয়ের আশ্রমে পৌঁছে যান। হেম মালি সেখানে গিয়ে তাঁর পায়ে পড়ে প্রাণভিক্ষা চান। তাঁকে দেখে ঋষি মার্কণ্ডেয় বললেন, কী পাপ করেছ, যার কারণে এই অবস্থা হয়েছে। এরপর, পুরো ঘটনা খুলে বললেন হেম মালি। একথা শুনে ঋষি বললেন- নিশ্চয়ই তুমি আমার সামনে সত্য কথা বলেছ, তাই তোমার মুক্তির জন্য আমি উপবাসের কথা বলছি। আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষের যোগিনী নামের একাদশীতে উপবাস করলে সমস্ত পাপ বিনষ্ট হবে।
এই কথা শুনে হেম মালি অত্যন্ত খুশি হলেন ও ঋষিকে প্রণাম করলেন। মুনি তাঁকে সস্নেহে তুলে নিলেন। হেম মালি ঋষির নির্দেশ অনুসারে যোগিনী একাদশীর উপবাস পালন করেন। এই উপবাসের প্রভাবে তিনি তার পুরনো রূপ ফিরে পান ও স্ত্রীসুখ পেতে শুরু করেন।
