বার্মিংহ্যাম : সোনা, রুপোর গল্পে কত যে চোখের জল মিশে থাকে, তার হিসেব আর কে রেখেছে! যদি রাখা হত, তাহলে সংকেত (Sanket Sargar) যে কষ্টের অসীম সাগর পার করে এসেছেন, তার খবর অনেকেরই জানা থাকত। পদকের আলো, সাফল্যের পোডিয়ামে যখন কেউ ওঠেন, তখন হয়তো তাঁর অতীত ফিরে দেখা হয়। আর তখনই জানা যায় সোনা, রুপোর গল্পে কতটা চোখের জল মেশে! একুশ বছরের সাংলির ছেলে বার্মিংহ্যাম গেমস (Commonwealth Games 2022) থেকে দেশকে এনে দিলেন প্রথম পদক। সোনা হয়তো আসেনি। চোট যদি না পেতেন, তাহলে সংকেতের গলায় থাকত সোনারই পদক। ভারোত্তোলনে (Weightlifting) তাঁর এই রুপোও সোনার চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।
এই সংকেতই কী না পানের দোকান চালাতেন। সালটা ২০১৮। এপ্রিলের ৫ তারিখ। ভারতীয় সময় সকাল ৬টার আশেপাশে। গোল্ড কোস্ট কমনওয়েলথ গেমসে ভারোত্তোলনের ইভেন্ট চলছিল। সাংলির অহল্যাদেবী হোলকার রোডের কোনায় একটা পানের দোকান। সঙ্কেত পান টপরিতে টিভি চলছিল সে সময়। ৫৬ কেজি বিভাগে নেমেছেন ভারতীয় ভারোত্তলক পুজারি গুরুরাজা। কাস্টমারের জন্য পান বানাচ্ছিলেন সংকেত। চোখ ছিল টিভির পর্দায়। গুরুরাজাকে দেখেই সঙ্কেত সারগর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, পরবর্তী কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নেবেন।
কথা রাখলেন সংকেত। অংশই শুধু নিলেন তা নয়, ভারতকে প্রথম পদকের স্বাদ পাইয়ে দিলেন। গত কমনওয়েলথ গেমসে গুরুরাজাকে ভারোত্তলনে রুপোর পদক জিততে দেখেছিলেন। তার আগে পাঁচ বছর ধরে অনুশীলন করছিলেন সংকেত। যদিও ভারোত্তোলনে আসার সিদ্ধান্ত তাঁর ছিল না। বাবা মহাদেব সারগারের স্বপ্নের ভার নিয়েই ভারোত্তোলনে সংকেত। তাঁর ইচ্ছে ছিল ক্রীড়াবিদ হবেন, এই খেলাকেই বেছে নিতে হবে, এমনটা ভাবেননি। ১৯৯০’র দিকে গ্রাম থেকে সাংলিতে এসেছিলেন মহাদেব সারগার। প্রথমে ঠেলা গাড়িতে করে ফল বিক্রি করতেন। টাকা জমিয়ে পান দোকান দেন। ধীরে ধীরে সংকেত পান দোকানের পাশে চা-জলখাবারের দোকানও খোলেন। স্বাভাবিকভাবেই খুব ছোটবেলায় সংকেতকেও দুটি দোকানেই সহযোগিতা করতে হয়েছে বাবাকে। সংকেতের যখন ১২ বছর বয়স, দিগ্বিজয় ব্যায়ামশালায় নিয়ে যান মহাদেব। নিজের ইচ্ছে থাকলেও খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত হতে পারেননি। ছেলের মধ্যে দিয়ে নিজের ইচ্ছে পূরণের চেষ্টা করেন মহাদেব। কমনওয়েলথ গেমসে রুপো জয়, দেশের স্বপ্নের পাশাপাশি বাবার স্বপ্নকেও পূর্ণতা দিলেন সংকেত।