কলকাতা: ভারতীয় ক্রিকেট যেন মহেন্দ্র সিং ধোনি জমানায় ফিরে যাচ্ছে। ভারতের ভবিষ্যৎ দৃঢ় করার জন্য মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ক্যাপ্টেন করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ধোনির হাত ধরেই ভারত বিশ্বকাপ জিততে চায়। ক্যাপ্টেন কুল সেই সময় একাধিক শর্ত চাপিয়েছিলেন। কাদের টিমে চান, কোচ হিসেবে কে আসবেন, কোন স্ট্র্যাটেজিতে খেলবে ভারত, এ সব শুরুতেই পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন। ধোনির এই গল্প ক্রিকেট মহলের জানা। সেই ক্যাপ্টেন ধোনির পথেই যেন হাঁটছেন গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir)। কেকেআরের মেন্টর ভারতের কোচ হচ্ছেন, এটা মোটামুটি বলে দেওয়া যায়। দায়িত্ব নেওয়ার আগে গম্ভীর রোজ নতুন নতুন তালিকা প্রকাশ করছেন। যে তালিকায় রয়েছে তাঁর একাধিক শর্ত। কাকে চান, কাকে চান না, কী হবে পরিকল্পনা, কারা থাকবেন কোচিং টিমে, এ সব তো বলেইছেন। এ বার গম্ভীর দিলেন তাঁর নতুন শর্ত।
মঙ্গলবার বোর্ডের সদর দফতরে ৪০ মিনিটের ইন্টারভিউ দিয়েছেন গম্ভীর। অন্য আবেদনকারী হিসেবে ডব্লিউভি রামনের নাম শোনা যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু গম্ভীরের সামনে তিনি ধোপেও টিকবেন না। ওই বৈঠকেই গম্ভীর পরিষ্কার করে দিয়েছেন, ভারতীয় টিমের কোচের পদে বসলে পুরে নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখবেন। ঠিক যেমনটা ক্যাপ্টেন হওয়ার সময় ধোনি রেখেছিলেন। অর্থাৎ টিমে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মার মতো তারকারা থাকলেও দল নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি থাকবে তাঁর হাতেই। কেন এমন ভাবনা? ভারতীয় ক্রিকেট তারকা নির্ভর টিম। আরও ভালো করে বললে ভারতীয় ক্রিকেটে তারকা পুজোর রীতি চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। লালা অমরনাথ, বিজয় মঞ্জরেকর, সুনীল গাভাসকর থেকে কপিল দেব, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সচিন তেন্ডুলকর থেকে বিরাট কোহলি যে যখন তারকা হয়েছেন, তিনিই রাজত্ব করেছেন। টিমের উর্ধ্বে জায়গা পেয়েছেন তিনি। এই অলিখিত নিয়ম গম্ভীর ভেঙে দিতে চান। ভারত কেন বিশ্ব ক্রিকেটের দাপুটে টিমগুলো চালান তারকারাই। কোচ অনেক ক্ষেত্রে দর্শক। গম্ভীর দর্শক থাকবেন না। কেকেআরের ক্যাপ্টেন থাকার সময়, লখনউ এবং কলকাতার মেন্টর থাকার সময় এই একই নীতিতে এগিয়েছেন তিনি। ভারতীয় টিমে ঢুকলেও গম্ভীরপন্থা বদলাবে না।
গম্ভীর নতুন শর্ত কী দিলেন? টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর অনুযায়ী, তিন ফর্ম্যাটে ৩টে টিম চাইছেন গম্ভীর। এর ভালো ও খারাপ দুই দিকই রয়েছে। ভালো যেটা হল, তারকা নির্ভরতা কমবে। পুল হিসেবে ক্রিকেটারদের লম্বা তালিকায় থাকবে নির্বাচকদের হাতে। অনেক নতুন মুখ উঠে আসার সুযোগ পাবেন। চোট-আঘাত সংক্রান্ত জটিলতা থেকে মুক্তি পাবে ভারত। সেই সঙ্গে দলে অপরিহার্য, এই ধারনা আর কোনও তারকাই পোষণ করতে পারবেন না। খারাপ দিক হল, টেস্ট, ওয়ান ডে ও টি-২০-র জন্য আলাদা টিম বাছতে হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা অনেক বেশি চালাতে হবে। সিনিয়র টিমের কোচিংয়ের দায়িত্বে থাকা কোচের পক্ষে সারাক্ষণ সেদিকে নজর রাখা সম্ভব কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন থাকবে। আর তিনটে ফর্ম্যাটের আলাদা প্লেয়ার হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যাবেন অনেকেই। ফলে টেস্টেই কেউ কেউ আটকে যাবেন।
গৌতম অবশ্য পজিটিভ দিকটাই দেখছেন। ভারতীয় টিমের কোচ হলে তাঁর উপর প্রবল চাপ থাকবে। এই একাধিক শর্তাবলী গম্ভীরের চাপ কিন্তু আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। সাফল্য দিতে পারলে জনতা মাথায় তুলে নেবে। না দিতে পারলে, গম্ভীরের সমালোচনা শুরু হতে সময় লাগবে না।