T20 World Cup 2021: অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে তুলে দিলেন পাকিস্তানের ‘গিবস’

TV9 Bangla Digital | Edited By: সঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্ত্তী

Nov 12, 2021 | 12:16 AM

ক্রিকেট এমনই, হিসেব উল্টে দেওয়ার খেলা। রবিবার বিশ্বকাপের ফাইনালে আরও একবার রং বদলাবে না, কে বলতে পারে!

T20 World Cup 2021: অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে তুলে দিলেন পাকিস্তানের ‘গিবস’
মার্কাস স্টোইনিস আর ম্যাথু ওয়েড জুটি অজিদের পৌঁছে দিল ফাইনালে

Follow Us

অভিষেক সেনগুপ্ত

পাকিস্তান ১৭৬-৪ (২০ ওভারে)
অস্ট্রেলিয়া ১৭৭-৫ (১৯ ওভারে)

হার্সল গিবসরা আজও আছেন! ক্রিকেটের আনাচে কানাচে! চাপের গভীরে!

১৯৯৯ সালের ওয়ান ডে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের সেই ম্যাচটা মনে পড়িয়ে দিলেন হাসান আলি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওই ম্যাচটা জিততেই পারত দক্ষিণ আফ্রিকা। হ্যান্সি ক্রোনিয়ের টিম বিপুল চাপও তৈরি করেছিল। কিন্তু ওই যে ক্রিকেটে বরাবর বলা হয়— পিকচার অভি বাকি হ্যায়…!

৩-৪৮ হয়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার সে দিন হারারই কথা। স্টিভ ওয়া ছিলেন শেষ ভরসা। এবং কী আশ্চর্য, হার্সল গিবস ক্রিকেট জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করে বসেছিলেন বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। স্টিভ ওয়ার ক্যাচটা ফেলে। ১২০ রান করে অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়ে দিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন স্টিভ। অন্ধকার থেকে আলোয় আর কোনও দিন ফেরা হয়নি গিবসদের। দক্ষিণ আফ্রিকারও। চিরকালীন চোকার্স হয়ে থেকে গিয়েছে প্রোটিয়ারা।

বহু বছর পর কোনও তরুণ গবেষক যখন ক্রিকেট ইতিহাসের পাতা ওল্টাবেন, গিবসের মতোই হাসান আলি নামক এক হতভাগ্য ক্রিকেটারের খোঁজ পাবেন। গিবসের মতোই যিনি ক্যাচ আর বিশ্বকাপটা দুটোই হাত থেকে ফেলে দিয়েছিলেন! ইতিহাসের কী আশ্চর্য সমাপতন— এ বারও প্রতিপক্ষ সেই অস্ট্রেলিয়া!

একুশের এই কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপে সেরা টিম যদি বাছতে হয়, বাবর আজমের পাকিস্তান থাকবে এক নম্বরে। একের পর এক ম্যাচে দুরন্ত পারফরম্যান্স। ভারত, নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে পড়া। এই বিশ্বকাপ যারা চিরস্মরণীয় করে রাখতে পারত, তারাই জাস্ট একটা ক্যাচের জন্য সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে গেল।

এই বিশ্বকাপে দুরন্ত পাকিস্তানে শুধু একজনই তেমন ছন্দে ছিলেন না। সেই হাসান আলিই ১৭তম ওভারে বল করতে এসে ১৫ রান দিয়েছিলেন। পরের ওভারে শাহিন আফ্রিদির বলে ডিপ মিডউইকেটে ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচটা মিস না করলে ম্যাচের ফল অন্য রকম হতে পারত। পাকিস্তানের ১৭৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে তার আগে পর্যন্ত আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল না অজিদের। ওয়ার্নার, ফিঞ্চ, স্মিথ, ম্যাক্সওয়েলরা ফিরে গিয়েছেন। শেষ জুটি হিসেবে মার্কাস স্টোইনিস আর ম্যাথু ওয়েড লড়ছেন। কিন্তু তাঁদেরও দেখে মনে হচ্ছিল না, ম্যাচটা জেতার জন্য নিউজিল্যান্ডের জিমি নিস্যাম কিংবা ড্যারেল মিচেল হয়ে উঠতে পারেন। হাসানের ক্যাচ মিসটাই সব হিসেব পাল্টে দিল। পরের তিন বলে ছয়ের হ্যাটট্রিক করে ওয়েডই নায়ক হয়ে গেলেন!

ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট কি হাসানের ক্যাচ মিসই? কমেন্ট্রি বক্স, গ্যালারি, ক্রিকেট দুনিয়ার মতো পাক ক্যাপ্টেন বাবরও মেনে নিলেন। ম্যাচের পর পাক ক্যাপ্টেন বলে গেলেন, ‘ওই ক্যাচটা মিস না হলে অনেক কিছু হতে পারত। নতুন ব্যাটার আসত। সে পর পর তিনটে ছয় নাও হতে পারত!’

ক্রিকেট এই কারণে মহান অনিশ্চয়তার খেলা! সাদা চোখে যতই মনে হোক, ম্যাচ বড্ড বেশি স্নেহশীল হয়ে উঠেছে কোনও একটা টিমের পক্ষে। তখনই ক্রিকেট ঈশ্বর বোধহয় হিসেব উল্টে দেন। না হলে ম্যাচ জিততে হলে ৩০ বলে ৬২ রান দরকার, হাতে পাঁচটা উইকেট, চার-ছয়ের দেখা নেই, এমন পরিস্থিতিতেও পাকিস্তানকে আচমকা হারিয়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে পড়ে!

টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ফিঞ্চের টিমকে চাপেই ফেলে দিয়েছিল পাকিস্তান। বাবর ৩৯ করে ফিরে গেলেও মহম্মদ রিজওয়ান আর ফখর জামান ঝড়ঝাপটা বইয়ে ১৭৬-৪ তুলে দিয়েছিলেন স্কোরবোর্ডে। রিজওয়ান ৫২ বলে করে গেলেন ৬৭। আর ফখর ৩২ বলে নট আউট ৫৫। অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের মধ্যে অ্যাডাম জাম্পা ছাড়া আর কেউ পাত্তাই পাননি।

ফাইনালে ওঠার তাগিদ নিয়ে মাঠে নেমে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ওভারেই চাপে পড়ে গিয়েছিল। শাহিন আফ্রিদি তখন ভারত ম্যাচের অ্যাকশন রিপ্লে শুরু করে দিয়েছেন। বল নড়ছে। গতি মিলছে। ফিঞ্চকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন প্রথম ওভারে। মিচেল মার্শ (২৮) একটু লড়তে না লড়তে আউট। স্টিভ স্মিথ (৫), গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা (৭) আউট হতেই গল্প ওখানেই শেষ বলে মনে হচ্ছিল। একদিকে দাঁড়িয়ে ৪৯ রানের ইনিংস শুধু এল ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাট থেকে। ৯৬-৫ থেকে খেলা ঘুরিয়ে দিলেন স্টোইনিস ও ওয়েড। ৩১ বলে নট আউট ৪০ স্টোইনিস। আর ওয়েড যেন নিউজিল্যান্ডের জিমি নিস্যাম! ১৭ বলে নট আউট ৪১ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। শাহিনকে পর পর তিনটে বল হারানো ছক্কা মেরে ৬ বল বাকি থাকতেই জিতিয়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়াকে।

চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দুটো অবিস্মরণীয় ম্যাচ। হারতে হারতে একটাতে অবিশ্বাস্য জয় নিউজিল্যান্ডের। হারতে হারতে আর একটাতে জয় অস্ট্রেলিয়ার। যে দুটো টিম ফেভারিট-বন্ধনীতেই ছিল না, তারাই নামবে ফাইনাল খেলতে!

ক্রিকেট এমনই, হিসেব উল্টে দেওয়ার খেলা। রবিবার বিশ্বকাপের ফাইনালে আরও একবার রং বদলাবে না, কে বলতে পারে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর‌: পাকিস্তান ১৭৬-৪ (রিজওয়ান ৬৭, ফখর নট আউট ৫৫, বাবর ৩৯, স্টার্ক ২-৩৮, জাম্পা ১-২২)। অস্ট্রেলিয়া (১৭৭-৫)

Next Article