ব্রিসবেন: ‘চিড়িয়াখানা’ থেকে মুক্তি তো মিললই না, উলটে ব্রিসবেন যেন আরও ভয়ঙ্কর! সফরের চতুর্থ টেস্ট খেলতে নেমে মঙ্গলবার ব্রিসবেনে পা রেখে পুরো ভারতীয় টিমই বেশ চাপে পড়ে গিয়েছে। গাব্বা থেকে চার কিলোমিটার দূরের এই পাঁচতারা হোটেল পুরোটাই ফাঁকা। যা দেখে মনে হয়েছে কোনও জেলখানাতে পা রেখেছেন অজিঙ্ক রাহানে-রোহিত শর্মারা। ভারতীয় টিমের সঙ্গে সফরকারী একজন বলেছেন, “আমরা নিজেদের ঘরে কার্যত বন্দিই আছি। বিছানা নিজেদেরই পরিষ্কার করে নিতে হচ্ছে। বাথরুম পর্যন্ত নিজেরাই পরিষ্কার করছি। হোটেলের যে ফ্লোরে আছি আমরা, তার বাইরে যাওয়া যাচ্ছে না। সুইমিং পুল কিংবা জিমও ব্যবহার করার অনুমতি নেই। আমাদের জন্য খাবার আসছে বাইরের একটি ভারতীয় রেস্তোরাঁ থেকে।”
যদিও এই ঘটনার পর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড হস্তক্ষেপ করে। যোগাযোগ করা হয় অজি বোর্ড ও হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। ভারতীয় ক্রিকেটাররা যাতে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা পান, সে ব্য়াপারে নিশ্চিত করা হয়েছে। এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কথা ছিল না। ব্রিসবেনে যাওয়ার আগে ভারতীয় বোর্ড এক চিঠিতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডকে জানিয়েছিল, ব্রিসবেনে ভারতীয় ক্রিকেটারদের যেন অস্ট্রেলিয়ান জনতার নিয়মই বরাদ্দ করা হয়। কার্যক্ষেত্রে তা দেখা যাচ্ছে না। ওই টিম মেম্বার বলেছেন, “টিমে এখন যে ভাবে চোট আঘাত রয়েছে, তাতে জিম, সুইমিং পুল ব্যবহার করতে না দিলে কী করে চলবে? সবচেয়ে বড় কথা হল, পুরো হোটেলে যখন আমরা ছাড়া আর কেউ নেই, তখন সে সব ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না-ই বা কেন?”
প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্বেও তা যে মানা হয়নি, সেটাও পরিষ্কার। ওই সদস্য বলেওছেন, “যা বলা হয়েছিল, তার উলটো ঘটছে আমাদের সঙ্গে। কোয়ারান্টিন পর্ব মিটে যাওয়ার পর নিয়ম শিথিল হওয়ার কথা ছিল। তা তো হয়ইনি, উলটে বেড়েছে। এখানে নিয়মের আরও বাড়াবাড়ি।”
করোনার জন্য ভারতীয় টিমকে অনেক বেশি সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। টিমের এক সদস্য তো বলেই দিয়েছেন, “যে দিন থেকে অস্ট্রেলিয়ায় পা দিয়েছি, সে দিন থেকে শুধু কোভিড টেস্ট চলছে। ১৫-২০ বার পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে পুরো টিমের। জানি না, আর কতবার হবে।”
পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, ভারতীয় ক্রিকেটারদের ধারাবাহিক চোট আঘাত নিয়ে। মহম্মদ সামির চোট দিয়ে শুরু, একের পর এক চোটের কবলে পড়েছেন উমেশ যাদব, লোকেশ রাহুল, রবীন্দ্র জাডেজা, হনুমা বিহারি, রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং সর্বশেষ জশপ্রীত বুমরা। বোর্ডের এক কর্তার কথায়, “ভারতীয় টিম এখন অনেকটা হাসপাতালের মতো। টানা খেলার ধকল তো আছেই। সামনে তাকিয়ে দেখুন, দেশে ফিরেই ইংল্য়ান্ড সিরিজ, তারপর আইপিএল, তারপর ইংল্যান্ড সফর, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। প্লেয়াররা তো মেশিন নয়, মানুষ। এত পরিশ্রমের ফল তো ভুগতেই হবে।’