কলকাতা: ধোনির বায়োপিকের সেই সংলাপ মনে পড়ে? যেখানে ছোটু ভাইয়াকে মাহি জিজ্ঞেস করেছিল- আচ্ছা সচিন যে এমআরএফ-এর ব্যাট ব্যবহার করে তার দাম কত? ছোটু ভাইয়া বুঝিয়েছিলেন, ওরা তো ব্যাট বানায় না! স্টিকার লাগানোর জন্য সচিন টাকা পান। এখন যেমন রোহিত, বিরাটরা পান। আর ব্যাট তৈরি করেন কারা! ব্যাট তৈরি হয় বিশেষ একটি গাছের কাঠ থেকে। উইলোর নাম প্রায় সকলেরই জানা। আর কাশ্মীর উইলো! সারা বিশ্বের ক্রিকেটারদের মধ্যে বেশির ভাগেরই হাতে খড়ি হয় কাশ্মীর উইলোতেই। তাঁদের স্তর বাড়ে, ব্যাটের ও গ্রেড। ক্রমশ সস্তার উইলো থেকে দামি ব্যাটে ঝোঁকেন। কিন্তু এর মূল উপাদান তো কাশ্মীর উইলোই। বিশ্ব ক্রিকেটে ক্রিকেটারদের একটা অংশ ইংলিশ উইলোও ব্য়বহার করেন। কিন্তু কাশ্মীর উইলোর ব্যাট দিয়ে যখন বলে সজোরে আঘাত করা হয়! সেই আঘাতের শব্দ গ্য়ালারিতে আলোড়ন তোলে। বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে কবে! ভুলে যান। বাংলায় যেমন শারোৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে, তেমনই ব্যাট প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলোর কাছেও ঠিক একই পরিস্থিতি। ব্যাটের চাহিদায় ঘুম উড়েছে তাদের। এত ব্যাট কীভাবে জোগান দেওয়া হবে? বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
আইসিসির কোনও টুর্নামেন্ট এলেই কাশ্মীর উইলোর কদর সেনসেক্সের চেয়েও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। এ বার ভারতে বিশ্বকাপ। তাও আবার ওয়ান ডে ফরম্যাটের বিশ্বকাপ এক যুগ পর! চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। মীরাটের এক ব্যাট প্রস্তুতকারী ‘শিল্পী’ সুনীল কুমারের কথায়, ‘বিশ্বকাপের দিন যত এগিয়ে আসছে, চাহিদা বেড়েই চলেছে। আমরা জোগান দিয়ে উঠতে পারছি না।’
সুনীল কুমারের এই উদ্বেগের কারণ আর্থিক বিষয় নয়। আইসিসির টুর্নামেন্টে তাঁর তৈরি ব্যাট ব্যবহার হবে! বিশ্ব ক্রিকেটের সুপার স্টাররা চার ছক্কা-মারবেন, রেকর্ড গড়বেন, সেঞ্চুরি করবেন, এটাই সবচেয়ে বড় তৃপ্তি সুনীলের। তাঁর কথায়, ‘২০ বছর ধরে ব্য়াট বানাচ্ছি। অভিজ্ঞতা কম নয় বোধ হয়। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল, আন্দ্রে রাসেল, ডোয়েন ব্র্যাভোর মতো তারকারা আমার তৈরি ব্যাট ব্যবহার করেন।’
কাশ্মীর উইলো প্রসঙ্গে কথা হবে, আর সেখানকার তৈরি ব্যাট নিয়ে! অবশ্যই বলতে হবে। দেশ-বিদেশের কেউ কাশ্মীর বেড়াতে গেলে এবং তিনি যদি ক্রিকেট ভালোবাসেন, কিংবা তাঁর পরিবারের কেউ! সেরা উপহার ব্যাট ছাড়া আর কী হতে পারে? কাশ্মীরের ক্রিকেট ব্যাট প্রস্তুতকারী সংস্থার মুখপাত্র ফয়জল কবির বলছেন, ‘আমাদের এখানে একশো বছরের বেশি সময় ধরে ব্যাট প্রস্তুত হয়। তবে এত দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার স্বীকৃতি ছিল না। ২০২১ সালে আইসিসি আমাদের এখানে তৈরি ব্যাটকে স্বীকৃতি দেয়। এখন আইসিসির প্রতিযোগিতাতেও আমাদের ব্যাট ব্যবহার হয়। এর পর চাহিদা আকাশছোঁয়া।’
ব্যাট-বলের লড়াই শুরু হচ্ছে আজ থেকেই। বিশ্বকাপের ওয়ার্ম আপ ম্যাচে নামছে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলি। বিরাট কোহলিরা যখন মাঠে নামবেন, তখন হয়তো ব্যাট প্রস্তুত করা কর্মীদের মুখটাও সকলের সামনে ভেসে উঠবে। তাঁদের হয়তো কেউ চেনে না, জানে না, কতগুলো অবয়ব!