নয়াদিল্লি: একটা সময় ভারতের বিমান বাহিনীর কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই কাজ ছেড়ে ক্রিকেটের পিছনে ছোটেন তিনি। সেখান থেকে সুযোগ পেয়েছেন ভারতের টেস্ট দলে। কথা হচ্ছে সৌরভ কুমারকে (Saurabh Kumar) নিয়ে। গতকালই (১৯ ফেব্রুয়ারি) শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) বিরুদ্ধে টি-২০ ও টেস্ট সিরিজের জন্য স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বিসিসিআই। সেখানেই বড়সড় চমক উত্তরপ্রদেশের সৌরভ কুমারের নাম। সৌরভের জীবনের সাত বছর আগে ফিরে গেলে দেখা যাবে, নিজের প্যাশনকে ফলো করবেন নাকি ভবিষ্যত নিরাপদ করবেন, সেই নিয়ে বেশ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে গিয়েছিলেন সৌরভ। তবে শেষ পর্যন্ত প্যাশনকেই অকুপেশন বানানোর পথে হাঁটেন ভাগপতের ছেলে। সৌরভের বাবা আকাশবাণীর অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার। বরাবর বাবা-মার সমর্থন পেয়েছেন সৌরভ। যার জন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন তিনি।
ভারতের টেস্ট দলে ডাক পাওয়ার পর সম্প্রতি সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে এক সাক্ষাৎকারে সৌরভ বলেন, “জীবনে এমন একটা মুহূর্ত আসে যখন আপনাকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যাই হোক না কেন, সেই সিদ্ধান্তটা নিতেই হয়। সার্ভিসেসের হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে খেলা ছেড়ে দেওয়াটা কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। আমি ভারতীয় বিমান বাহিনীর সদস্য ছিলাম। এবং ভারতের ডিফেন্সের অংশ হওয়াটা বেশ উপভোগ করতাম। কিন্তু আমার মনের মধ্যে একটা জায়গা ছিল, যেখানে আমি অনুভব করতাম, আমি কঠোর পরিশ্রম করলে ভারতের হয়েও খেলতে পারব।”
তিনি আরও বলেন, “আমার পোস্টিং দিল্লিতে হয়েছিল। আমি রঞ্জি ট্রফিতে সার্ভিসেসের হয়ে এক বছর (২০১৪-১৫ মরসুম) খেলেছিলাম, যখন রজত পল্লিওয়াল আমাদের অধিনায়ক ছিলেন। যেহেতু আমার স্পোর্টস কোটায় এন্ট্রি হয়েছিল, তাই আমাকে সার্ভিসেসের জন্য খেলা ছাড়া আর কোনও দায়িত্ব পালন করতে হয়নি। তখন আমি যদি ক্রিকেট ছেড়ে দিতাম, তা হলে আমাকে পুরোদমে অন্য দায়িত্ব পালন করতে হত।”
ক্রিকেটের জন্য এয়ার ফোর্সের চাকরি ছেড়ে দেবেন যখন ঠিক করে ফেলেছিলেন সৌরভ, জানিয়েছিলেন তাঁর বাবা-মাকে। এবং পূর্ণ তাদের সমর্থন পেয়েছিলেন তিনি। সে কথা মনে করে সৌরভ বলেন, “আমি যখন বাবা-মাকে বলেছিলাম, আমি এয়ার ফোর্সের চাকরি ছেড়ে দিচ্ছি। তারা আমাকে একবারের জন্যও সিদ্ধান্ত বদলানোর কথা ভেবে দেখতে বলেনি। ওই সময় ভীষণ অবাক হয়েছিলাম আমি। তারা দু’জনই আমাকে ভীষণভাবে সমর্থন করেছিল। এর পর আমার স্বপ্নকে তাড়া করার ইচ্ছেটা আরও জোরাল হয়ে ওঠে।”
একটা সময় সকাল সকাল ট্রেন ধরে দিল্লি আসতেন সৌরভ ক্রিকেটের ট্রেনিংয়ের জন্য। সেই সব দিনের কথা মনে করে তিনি বলেন, “আমরা এখন গাজিয়াবাদে থাকি। কিন্তু দিল্লিতে ক্রিকেট খেলার প্রথম দিনগুলো আমার কাছে অগ্নিপরীক্ষার সমান ছিল। বাগপত জেলার আমার শহর বারাউতে আমাদের খুব ভালো কোচিং সুবিধা ছিল না।”
দ্রোণাচার্য পুরষ্কারপ্রাপ্ত একমাত্র মহিলা ক্রিকেট কোচ সুনীতা শর্মার কাছে প্রথমে ট্রেনিং নিতেন সৌরভ। তিনি বলেন, “২টোর সময় নেট প্র্যাক্টিস থাকলে আমি বাড়ি থেকে সকাল ১০টায় বেরোতাম। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার ট্রেন জার্নি করতে হত। তারপর আরও আধ ঘণ্টা লেগে যেত স্টেডিয়ামে পৌঁছোতে। এবং ফেরার সময়ও একই ঘটনা হত। বেশ কঠিন সময় ছিল, তবে তা সত্ত্বেও এখন যখন পিছন ঘুরে তাকাই তখন দেখতে পাই কীভাবে ওই দিনগুলোর পরিশ্রমের ফল পেয়েছি।”
তারপর বিষেণ সিং বেদীর নজরে পড়েন সৌরভ। তাঁর কাছেই এর পর ট্রেনিং শুরু করেন সৌরভ। সেখান থেকে রঞ্জি ট্রফিতে উত্তরপ্রদেশের হয়ে খেলা এবং এ বার ডাক ভারতীয় দলে।