অভিষেক সেনগুপ্ত
ভারত ২১০-২ (২০ ওভারে)
আফগানিস্তান ১৪৪-৭ (২০ ওভারে)
কয়েক ঘণ্টার ফারাকে দুটো আশ্চর্য ঘটনাই কি আকস্মিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দিল? ম্যাচের ঠিক আগে কপিল দেবের প্রতিক্রিয়া ছিল, টিমের যে সব সিনিয়র পারফর্ম করতে পারছেন না, তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এ বার ভাবতে হবে নির্বাচকদের। এগিয়ে দেওয়া হোক তরুণ প্রজন্মকে! বিশ্বকাপজয়ী ক্যাপ্টেনের মন্তব্যের জেরে কিনা জানি না, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ভবিষ্যৎ ভাবনা শুরু করে দিল। রাহুল দ্রাবিড়কে দু’বছরের জন্য কোচ করে। কী আশ্চর্য, তখন রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) মতো সিনিয়র মুড়িমুড়কির মতো চার-ছয় মারছেন। যাঁকে বিরাট কোহলির (Virat Kohli) পরবর্তী ক্যাপ্টেন হিসেবে ভাবা হচ্ছে। টি-টোয়েন্টি তো বটেই, ওয়ান ডে অধিনায়কত্বও পেতে পারেন তিনি।
রোহিত কী করলেন? ৪৭ বলে ৭৪ রানের খুনখারাপি ইনিংস খেলে গেলেন। ৮টা চার ও ৩টে ছয় দিয়ে গেঁথেছেন মালা। পাকিস্তান ম্যাচে রান না পাওয়ার জন্য সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। নিউজিল্যান্ড ম্যাচে ওপেনিং থেকে সরিয়ে তিনে পাঠানো হয়েছিল। তাতেও মরুশহরে রানের খোঁজ পাননি। সেই আইপিএল (IPL) থেকে খরা চলছে ব্যাটে। আফগানিস্তান (Afghanistan) ম্যাচে এসে অবশেষে একটুকরো স্বস্তির হাসি হাসতে পারলেন। তার থেকেও বড় কথা, ‘গেল-গেল’ থেকে ‘ফিরে এল’তে নিয়ে এলেন ভারতকে!
India are off the mark ✅#T20WorldCup | #INDvAFG | https://t.co/ZJL2KKL30i pic.twitter.com/llszZPMNtH
— T20 World Cup (@T20WorldCup) November 3, 2021
ক্রিকেট আসলে প্রত্যাবর্তনের খেলা। ভুল শুধরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার খেলা। টি-টোয়েন্টির (T20) গতিশীল ফর্ম্যাটে এ সব আরও দ্রুত করতে হয়। না হলে একটা কিংবা দুটো হারের ধাক্কায় স্বপ্নভঙ্গ হতে পারে। ভারতের ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম দুটো ম্যাচ হেরে শেষ চার কঠিন করে ফেলেছেন বিরাট কোহলিরা। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে রোহিতের বিশাল ছক্কাগুলোর মতোই আফগানদের মাঠের বাইরে ফেলল ভারত। তাতেও কি সেমিফাইনালে উঠতে পারবেন বিরাটরা? ভারতের শেষ চারে যাওয়া না-যাওয়া নির্ভর করছে কেন উইলিয়ামসনদের উপর। রশিদ খানদের বিরুদ্ধে যদি হেরে যায় নিউজিল্যান্ড, তা হলে অসম্ভব সত্যিও হয়ে যেতে পারে।
পাকিস্তান এবং নিউজিল্যান্ড— ধারেভারে দুটো টিমের সঙ্গে কোনও তুলনাই হবে আফগানিস্তানের। তা যতই মহম্মদ নবির টিম লিগ টেবলের দুইয়ে থাকুক। অভিজ্ঞতার ভাঁড়ার এখনও শূন্যই আফগানদের। তা না হলে পাকিস্তান ম্যাচ হারতেন না রশিদরা। কোণঠাসা, চাপে বিপর্যস্ত ভারত যে আগ্রাসী হয়ে নামবে, সেটা ভালোই জানতেন রশিদরা। কিন্তু রোহিত-রাহুলদের থামানোর মতো অস্ত্র এখনও তাঁদের হাতে নেই। হলও তাই। টস তখনই ফ্যাক্টর হয়, যখন টিমে বোলিং গভীরতা থাকে। রান তাড়া করে জেতার মতো ব্যাটার থাকে। আফগানিস্তানের টসে জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠানো তাই বুমেরাং হয়ে গেল। এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান করে ফেলল ভারত।
টি-টোয়েন্টিতে এমনই হয়, ওপেনিং জুটি যদি রান দিয়ে যেতে পারে, বাকি কাজটা চোখের পলকে সেরে ফেলা যায়। রোহিত আর রাহুলের দুরন্ত শুরুটাই ম্যাচের গল্প বদলে দিল। ওপেনিং জুটিতে ১৪০ রান এল মাত্র ১৪.৪ ওভারে। রোহিতের উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে আফগান শিবিরে হানা দিলেন লোকেশ রাহুলও। ৪৮ বলে ৬৯ করে গেলেন। ঋষভ পন্থ ১৩ বলে নট আউট ২৭, হার্দিক পান্ডিয়া ১৩ বলে নট আউট ৩৫ করে ২১০-২ তুলে দিয়ে গেলেন। এরপর জেতা কঠিন। আফগানিস্তান হলে তো আরও কঠিন।
সেমিফাইনালে যদি জেতে হয় ভারতকে, অনেক অঙ্কের হিসেব মেলাতে হবে। নিউজিল্যান্ডকে শুধু হারলে হবে না, রানরেটেও এগিয়ে থাকতে হবে ভারতীয় টিমকে। আর সেই কারণেই আফগানদের বিরুদ্ধে দুরন্ত বোলিংও দেখা গেল। আগের দুটো ম্যাচে বিপক্ষের ২টো উইকেট ফেলতে পেরেছিল ভারতের বোলিং ইউনিট। বুমরা ছাড়া সবাই ব্যর্থ হয়েছিলেন। এই ম্যাচে ভারত টিম হিসেবে খেলল। মহম্মদ সামি, বুমরারা উইকেট তো পেলেনই, স্পিনাররাও সফল হলেন। চোটের কারণে এই ম্যাচে খেলতে পারেননি বরুণ চক্রবর্তী। রবিচন্দ্রন অশ্বিন কেন ক্রিকেটের ছোট ফর্ম্যাটেও অপরিহার্য হতে পারেন, তারই ঝলক রেখে গেলেন। ৪ ওভার বল করে ১৪ রান দিয়ে নিলেন ২টো উইকেট। রবীন্দ্র জাডেজা নিলেন ১টা।
তবু, প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে দুটো। এক, আগের দুটো ম্যাচে অশ্বিনকে প্রথম একাদশে রাখা হয়নি কেন? বড় ম্যাচের চাপ সামলানোর জন্য যে অভিজ্ঞতা লাগে, রবি শাস্ত্রী, মহেন্দ্র সিং ধোনিরা বোঝেননি? তার থেকেও বড় প্রশ্ন, টিম যখন আফগানিস্তান ম্যাচ খেলতে ব্যস্ত, তখনই কেন নতুন কোচ হিসেবে রাহুল দ্রাবিড়ের নাম ঘোষণা করে দিল বিসিসিআই (BCCI)?
ক্রিকেট প্রত্যাবর্তনের গল্প শোনায়। কিন্তু কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে ‘টাইমিং’টাই আসল। সঠিক সময়ে সঠিক ম্যাচ জিততে না পারলে কিন্তু লিগ টেবল নির্মম হয়ে ওঠে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত ২১০-২ (রোহিত ৭৪, রাহুল ৬৯, হার্দিক নট আউট ৩৫, পন্থ নট আউট ২৭, করিম ১-৭, গুলাবদিন ১-৩৯)। আফগানিস্তান ১৪৪-৭ (করিম নট আউট ৪২, নবি ৩৫, সামি ৩-৩২, অশ্বিন ২-১৪, জাডেজা ১-১৯, বুমরা ১-২৫)।