India vs England 2021: সেলিম হতে পারলেন না সাম

গত ২৫ বছরে ভারতের মাটিতে একদিনের সিরিজ জিততে পারেনি ইংল্যান্ড। সেই রেকর্ড অক্ষত থাকল এ বারও।

India vs England 2021: সেলিম হতে পারলেন না সাম
সৌজন্যে-বিসিসিআই

Mar 28, 2021 | 10:45 PM

কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়

ভারত: ৩২৯
ইংল্যান্ড: ৩২২/৯

১৯৮৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। ইডেন গার্ডেন্সে অবিস্মরণীয় ইনিংস খেলে ভারতের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছিলেন সেলিম মালিক। ক্রিকেটের নন্দনকাননে সে দিনের রাতকে এখনও ভোলেনি তিলোত্তমা। ৮ ওভারে বাকি ৭৮ রান। হাতে ৫ উইকেট। সেখান থেকে বিধ্বংসী ব্যাটিং করে পাকিস্তানকে জেতান সেলিম মালিক। কোহলিদের (Virat Kohli) কোচ রবি শাস্ত্রী (Ravi Sastri)) মাঠে দাঁড়িয়ে সে দিনের হার দেখেছিলেন। মাঠের বাইরে বসে এ দিন হয়তো সেই রাতের কথাই ভাবছিলেন তিনি। সাম ক্যুরানের অবিশ্বাস্য লড়াই চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল আসমুদ্রহিমাচলকে। তবে ইয়র্কার স্পেশালিস্ট নটরাজনের শেষ ওভার রুদ্ধশ্বাস জয় এনে দিল ভারতকে। ৭ রানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে একদিনের সিরিজ জয় কোহলিদের। বলা যেতেই পারে, ইংরেজদের সিরিজ হোয়াইটওয়াশ করল ভারত।

ভারতের সিরিজ জয়ের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সাম ক্যুরান। জিম্বাবোয়ের প্রাক্তন ক্রিকেটার কেভিন ক্যুরানের ছেলে সাম, টম আর বেন ক্যুরান। আফ্রিকায় কালো চামড়ার মানুষদের ওপর অত্যাচারের সময় ঘর-বাড়ি ছেড়ে ইংল্যান্ডে বন্ধু অ্যালান ল্যাম্বের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল ক্যুরান পরিবার। ইংল্যান্ডে অ্যালান ল্যাম্বের সঙ্গে কাউন্টি খেলতেন কেভিন ক্যুরান। নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি দিয়েও ক্যুরান পরিবারের ওপর অভিশাপ যেন লেগেই ছিল। আচমকাই মারা যান কেভিন। সাম, টম আর বেনকে বড় করে তোলার ভার তুলে নেন অ্যালান ল্যাম্ব। আজকের ম্যাচের পর অ্যালান ল্যাম্বের সেই যুদ্ধ হয়তো কিছুটা হলেও সার্থক। ইংল্যান্ড জিততে না পারলেও সাম ক্যুরানের অবিশ্বাস্য লড়াইকে কুর্নিশ। হেরে যাওয়া ম্যাচকেও জেতার মতো জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ৮৩ বলে ৯৫ রানে অপরাজিত থাকেন সাম। একদিনের ক্রিকেটে আট নম্বরে ব্যাট করতে নামা কোনও ক্রিকেটারের এটাই সর্বোচ্চ রান।

 

 

টেস্ট, টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ান ডে। ভারতীয় দলের সিরিজ সারভাইভার এখন একজনই। ঋষভ পন্থ। যে কোনও ফরম্যাটেই ব্যাট হাতে বিধ্বংসী রূপ নিচ্ছেন তিনি। ভারতের একদিনের সিরিজ জয়ের পিছনেও সেই ঋষভের অবদান। উইকেটের পিছনেও তিনি এখন অনেক সপ্রতিভ। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হার্দিকের থ্রো। বল ধরেই উডকে রান আউট করলেন পন্থ। ব্যাট হাতে আগেই ভরসা জোগাচ্ছিলেন। উইকেটকিপার পন্থকে ধোনি পরবর্তী যুগে এ বার আশ্বস্ত হতে পারে দেশবাসী। সকালে পন্থের চওড়া ব্যাট আর রাতে ‘গোল্ডেন গ্লাভস’ই এনে দিল জয়। তাঁর ভয়ডরহীন ক্রিকেটই এখন ভারতীয় দলের সম্পদ। পন্থ যখন ব্যাট করতে এসেছিলেন তখন ভারতের স্কোর ১১৭-২। এরপর অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল দ্রুত প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। ১৫৭-৪ হয়ে যায় ভারতের স্কোর। হার্দিক পান্ডিয়াকে সঙ্গে করে সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর ইনিংস খেলতে শুরু করেন ঋষভ পন্থ। ইংরেজদের বোলিং আক্রমণের সামনে জবুথবু নয়। বরং পাল্টা মারেই আদিল রাশিদ, মঈন আলিদের দমিয়ে রাখলেন পন্থ। হার্দিক-পন্থ জুটিতে উঠল ৯৯ রান। ৬২ বলে ৭৮ রানের দুরন্ত ইনিংস উপহার ঋষভ পন্থের। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে সাজানো ৪টে ছয় ও ৫টা চার।

একা ঋষভ নন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করলেন হার্দিক পান্ডিয়াও। ৪৪ বলে ৬৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস হার্দিকের। ইনিংসে সাজানো ৪টে ছয় ও ৫টা চার। এ দিনও টসে হারেন কোহলি। টানা ৬টি টস হারলেন ভারত অধিনায়ক। ওপেনার শিখর ধাওয়ান আর রোহিত শর্মা জুটি ভিত মজবুত করলেও পরপর চার উইকেট খুইয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারত। ৬৭ রান করেন ধাওয়ান। বিরাট কোহলি আউট হন ৭ রানে। রোহিত করেন ৩৭ রান। প্রথমে ব্যাট করে ৩২৯ রানে শেষ হয়ে যায় ভারতের ইনিংস।

 

 

আগের ভুল এ দিন করেনি ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। কুলদীপ যাদবকে বাইরে রাখে থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। তাঁর বদলে নেওয়া হয় নটরাজনকে। চার পেসার সঙ্গে মিডিয়াম পেসার হার্দিক। পাঁচ জোরে বোলারেই এ দিন ইংল্যান্ড বধের পরিকল্পনা কষে টিম ম্যানেজমেন্ট। গত ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিয়ে মাঠে নামতেই সফল কোহলিরা। গত ম্যাচে রান পাওয়া বেয়ারস্টো, বেন স্টোকসদের দ্রুত সাজঘরে ফিরিয়ে দেন ভুবনেশ্বর কুমার, নটরাজনরা। ক্রিজে জমে যাওয়া মালানকে ফেরান শার্দূল ঠাকুর। শার্দূলকে এ দিন শুরুতে ব্যবহার করেননি কোহলি। মাঝের দিকে নিয়ে আনেন। আর তাতেই বাজিমাত। মালান, বাটলার, লিভিংস্টোন আর আদিল রাশিদ। শার্দূলের শিকার চার। ইংল্যান্ডের হয়ে একা লড়াই চালান অলরাউন্ডার সাম ক্যুরান। টেল এন্ডারদের সঙ্গে নিয়েই লড়াই চালাতে থাকেন। লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৭ রান দূরে থেমে যায় ইংল্যান্ডের ইনিংস। গত ২৫ বছরে ভারতের মাটিতে একদিনের সিরিজ জিততে পারেনি ইংল্যান্ড। সেই রেকর্ড অক্ষত থাকল এ বারও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত ৩২৯ (পন্থ ৭৮, ধাওয়ান ৬৭, হার্দিক ৬৪, উড ৩/৩৪, আদিল ২/৮১), ইংল্যান্ড ৩২২/৯ (সাম ক্যুরান , মালান ৫০, শার্দূল ৪/৬৭, ভুবনেশ্বর ৩/৪২)। ভারত জয়ী ৭ রানে। ২-১ সিরিজ জয় ভারতের।