কলকাতা: এই মুহূর্তে ভারতে খবরের শিরোনাম হয়ে গিয়েছেন রোহিত শর্মা। আগামী আইপিএল মরসুমে তাঁর বদলে ক্যাপ্টেন করা হয়েছে হার্দিক পান্ডিয়াকে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের নতুন নেতাকে নিয়ে যেন তাপ-উত্তাপই নেই ক্রিকেট মহলের! উল্টে রোহিতকে ছাঁটাই করার জন্য প্রবল বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। মালিক পক্ষ থেকে টিম ম্যানেজমেন্ট, কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে সকলকে। ২০১৩ সালে রিকি পন্টিং নেতৃত্ব ছাড়ার পর ক্যাপ্টেন করা হয়েছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে। কঠিন সময়ে দায়িত্ব নিয়েছিলেন রোহিত। তার পরই আসে সাফল্য। ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল ধরলে, ৭ বছরে পাঁচবার টিমকে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করেছেন রোহিত। আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে ধারাবাহিক টিম হয়ে উঠেছিল মুম্বই। গত তিনটে মরসুমে হয়তো ট্রফির দেখা মেলেনি, কিন্তু মুম্বইকে বরাবরই শক্ত ভিতের উপর রেখে দিয়েছিলেন রোহিত। সেই তাঁকেই আচমকা সরানো সিদ্ধান্তে ভারতীয় ক্রিকেট মহলে তুমুল আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। কী ভাবে ক্যাপ্টেন্সি থেকে সরানো হল রোহিত শর্মাকে? বিস্তারিত জেনে নিন TV9 Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
রোহিতকে ছেঁটে ফেলার পর বেশ কিছু অজানা তথ্য উঠে আসছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গোড়ালির চোট নিয়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। তখন থেকেই আসরে নামে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। হার্দিককে আবার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে ফেরার অফার দেওয়া হয়। গুজরাট টাইটান্সকে পর পর দুটো মরসুমে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স করা এইচপি পাল্টা শর্ত রেখেছিলেন, তাঁকে ক্যাপ্টেন করা হলে ভাবতে পারেন। ৩৬ বছরের রোহিত হয়তো আর তিন-চারটে মরসুম আইপিএল খেলতে পারেন। ভারতীয় টিমের নেতৃত্বের দায়ভার কাঁধে থাকায় রোহিতের উপর বাড়তি চাপ হতে পারে মুম্বইয়ের ক্যাপ্টেন্সি। শোনা যাচ্ছে, এই যুক্তি নাকি কাজ করেছিল। তখনই ঠিক করা হয়, রোহিতের বদলে ক্যাপ্টেন করা হবে হার্দিককে। ঘরের মাঠে তখন বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছে ভারত। বলা হচ্ছে, সেই সময় মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের তরফে নাকি রোহিতকে জানিয়ে দেওয়া হয়, আগামী আইপিএলে তাঁর বদলে ক্যাপ্টেন হবেন হার্দিক। বিশ্বকাপের পর এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। কিছু রিপোর্টে এও বলা হচ্ছে, বিশ্বকাপ মেটার পরই টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনায় বসেন রোহিত। তাঁকে রাজি করানো হয়। তার পরই টিমের নেতৃত্বের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হার্দিককে।
ঘটনা হল, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স যখন রিটেন প্লেয়ারের তালিকা প্রকাশ করেছিল, সেই সরকারি বিবৃতিতেও রোহিতকেই ক্যাপ্টেন রাখা হয়েছিল। তেমনই গুজরাট টাইটান্সের রিটেন লিস্টে ছিল হার্দিকের নাম। একই ভাবে তাঁর নামের পাশেও ক্যাপ্টেন লেখা। যদিও রিটেন তালিকা প্রকাশের ২ ঘণ্টার মধ্যেই চিত্রটা বদলে যায়। ট্রেডিংয়ে হার্দিককে নেয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। ক্যামেরন গ্রিনকে ট্রেডিংয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্য়াঙ্গালোরকে। সূত্রের খবর, হার্দিককে নেওয়া নিয়ে রোহিতের সঙ্গে তখনও আলোচনা চলছিল মুম্বই টিম ম্যানেজমেন্টের। কার্যত বাধ্য হয়েই কি এই সিদ্ধান্তে সবুজ সংকেত দিয়েছিলেন রোহিত শর্মা?
হার্দিককে নেতা হিসেবে রোহিত মেনে নিয়েছেন কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ১৫ ডিসেম্বর অর্থাৎ শুক্রবার সন্ধেয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের নতুন নেতা হিসেবে ঘোষণা করা হয় হার্দিকের নাম। তারপর থেকে এখনও প্রকাশ্যে মুখ খুলতে দেখা যায়নি রোহিতকে। আগামী মরসুমে নতুন কোনও টিমে খেলতে পারেন, এমন সম্ভাবনা কেউই উড়িয়ে দিচ্ছেন না। এও বলা হচ্ছে, অনেক আইপিএল টিমই রোহিতের কাছে নেতৃত্বের প্রস্তাব রেখেছে। তেমনই কোনও টিম বেছে নেবেন কিনা, সময় বলবে। নিলামের পরই ফের খুলবে ট্রেডিং উইন্ডো।
একটা প্রশ্ন এখন ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে ক্রিকেট মহলে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের নেতৃত্ব থেকে রোহিতকে ছেঁটে ফেলার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। আগামী বছর জুন মাসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ওই টুর্নামেন্টেও নাকি ক্যাপ্টেন করা হবে হার্দিককে। বলা হচ্ছে, বোর্ড নাকি এমন কিছু এখনও ভাবেনি। লাল বল তো বটেই, সাদা বলের ক্রিকেটেও রোহিতই নেতা হিসেবে প্রথম পছন্দ বিসিসিআইয়ের। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটে ‘যদি-কিন্তু’ কিছু হয় না। ভবিষ্যতের অলিগলিতে বহু সম্ভাবনা হারিয়ে গিয়েছে অতীতে। রোহিতের ক্ষেত্রে তেমন কিছু হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।