প্রেমের চেয়ে সুন্দর আর কিছু হয় না। আবার প্রেমের মতো ঝুঁকি আর কিছুতে নেই। মিয়াঁ-বিবি রাজি হলেও এতে হুমকি থাকে। চোখরাঙানি থাকে। কথা না শুনলে বেদম প্রহারও জোটে অনেক সময়। ঘরবন্দি, ফোন কেড়ে নেওয়া, পাড়ায় ঢুকলে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেবে দাদ্দারা— আরও কত কত কী! প্রেমের জয় বোধহয় এখানেই। প্রতিবন্ধকতার পাহাড় ঠেলে, অসংখ্য বিনিদ্র রজনী পেরিয়ে প্রেম ঠিক আলোয় এসে পা দেয়। প্রেমিক-প্রেমিকা থেকে মিয়াঁ-বিবি হয়ে যান তাঁরা। কিন্তু ভুলে যান কি প্রেমের সেই যন্ত্রণাময় দিনগুলো? ভরা ফ্রেব্রুয়ারি মানে হিমেল বাতাসে প্রেমের গন্ধ। বসন্ত এসে গ্যাছে! আর এই বসন্তে বাছাই কিছু প্রেমের গল্প তুলে ধরল TV9 Bangla। পঞ্চম কিস্তিতে মহেন্দ্র সিং ধোনির (MS Dhoni) প্রেমকাহিনি।
কাঁধ ছাপানো চুল, বলিষ্ঠ চেহারার রাঁচির এক তরুণ ক্রিকেটারে মাতোয়ারা গোটা দেশ। মহিলারা দুমদাম ক্রাশ খাচ্ছেন। ২০০৭ সালের টি-২০ বিশ্বকাপ জেতানোর পর মহেন্দ্র সিং ধোনি মোটামুটি তরুণীদের হৃদয়ে পাকা জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্তু ধোনির হৃদয়ে প্রেম আসা তখনও বাকি। তাঁর প্রথম প্রেম ক্রিকেটের দিকেই যাবতীয় ফোকাস। বিশ্বজয়ের মাসতিনেক পর ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল ইডেন গার্ডেন্সে। ভারতীয় দল আস্তানা গেড়েছিল তাজ বেঙ্গল হোটেলে। সেখানেই ইন্টার্নশিপ চলছিল হোটেল ম্যানেজমেন্টের ছাত্রী সাক্ষী সিং রাওয়াতের। অসমে জন্ম, রাঁচি ও দেরাদুন মিলিয়ে পড়াশোনা ও বেড়ে ওঠা সাক্ষীর কলেজ ছিল ঔরঙ্গাবাদে। কলকাতায় এসেছিলেন ইন্টার্নশিপের জন্য। ক্রিকেট নিয়ে তাঁর বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা ছিল না। মোটামুটি সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে চিনলেও মহেন্দ্র সিং ধোনির বিষয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহী ছিলেন না। এদিকে সাক্ষীর মা ধোনির বড় ভক্ত। সেদিন তাজ বেঙ্গলে সাক্ষীর ইন্টার্নশিপের শেষদিন। কিছুটা মায়ের ইচ্ছেতেই ধোনির সেইসময়কার ম্যানেজার যুধাজিৎ দত্তের (কমন ফ্রেন্ড) মাধ্যমে কাঁধ ছাপানো চুলের ক্রিকেটারের সঙ্গে আলাপ করেন সাক্ষী।
কেমন ছিল প্রথম দেখা? এক সাক্ষাৎকারের সাক্ষী বলেছিলেন, “খুব সাধারণ দেখতে একটা ছেলে। পাশ দিয়ে পেরিয়ে গেলেও কেউ হয়তো তাকাবে না। আমার কমন বন্ধুর মাধ্যমে আলাপ করি। ততদিনে লম্বা চুল কেটে ফেলেছে। মাকে বলেছিলাম, তোমার পছন্দের ক্রিকেটার চুল কেটে ফেলেছে।” বোঝাই যাচ্ছে, প্রথম দেখায় খুব একটা পাত্তা দেননি সাক্ষী। বিপরীতদিকের অবস্থাটা একেবারেই উল্টো। বাবলি গোছের সাক্ষীকে দেখেই বুকের বাঁ দিকটা চিনচিন করে উঠেছিল। ম্যানেজারকে ম্যানেজ করে সাক্ষীর ফোন নম্বরটা জোগাড় করতে পেরেছিলেন মাহি। তারপর একের পর এক টেক্সট। কেউ মজা করছে ভেবে প্রথমদিকে পাত্তা দেননি মিস রাওয়াত। একদিন বুঝলেন, শুরু হল রাত জেগে গল্প, ফোনালাপ।
কথায় কথায় সাক্ষী ও মাহি জানতে পারেন, ছোটবেলায় তাঁরা রাঁচিতে একই স্কুলে পড়তেন। ধোনি ছিলেন সিনিয়র। তবে বন্ধুত্ব ছিল না। মাহি ও সাক্ষীর বাবা রাঁচিতে একই কোম্পানিতে চাকরি করতেন। এরপর সাক্ষীর বাবা বদলি হয়ে চলে যান দেরাদুনে। ২০০৮ সালে মাহি-সাক্ষীর প্রেম শুরু। তবে ঘূণাক্ষরেও বাইরের কেউ সেকথা জানতে পারেননি। এদিকে ধোনির সঙ্গে প্রায়শই বলিউডের কোনও না কোনও নায়িকার লিঙ্ক আপের খবর ছড়াতো। সেই গুজব উড়িয়ে হাজারো তরুণীর হৃদয় ভেঙে ২০১০ সালে দেরাদুনে সাক্ষীর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন ধোনি।
দুই ভিন্ন জগতের মানুষ, এতটা পথ পেরিয়ে আলাপ, প্রেম ও বিয়ে। মাহি-সাক্ষীর প্রেম সিনেমাকেও হার মানায়। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের বিরুদ্ধে ইডেন টেস্ট জেতা হয়নি ভারতের। টেস্ট ড্র হলেও ধোনির হৃদয় পাকাপাকিভাবে জিতে নিয়েছিলেন এক তরুণী। তিলোত্তমার বুকে শুরু হয়েছিল ক্রিকেট জগতের অন্যতম মিষ্টি প্রেমের গল্প।