বেঙ্গালুরু: কর্ণাটক রাজ্য সংস্থার সভাপতি থেকে ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পদে। ৮৩’র বিশ্বজয়ী দলের সদস্য, প্রাক্তন টেস্ট ক্রিকেটার, বর্তমানে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (BCCI) সভাপতি। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এবং ক্ষমতাশালী বোর্ডের সভাপতি হলেও নিজেকে বদলাতে নারাজ। প্রাক্তন প্লেয়ার হিসেবে, প্লেয়ারদের স্বার্থ দেখাই প্রধান লক্ষ্য। বোর্ডের দায়িত্ব নিয়ে আপাতত ফিরেছেন বেঙ্গালুরুতে। ক’দিন আগেও তিনি ছিলেন কর্ণাটক ক্রিকেট সংস্থার (KSCA) সভাপতি। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে নানা বিষয়ে কথা বললেন বোর্ড সভাপতি রজার বিনি (Roger Binny)। তাঁর পরিষ্কার বার্তা, ‘প্লেয়ারদের’ সভাপতিই থাকতে চান। রজার বিনির এই সাক্ষাৎকার তুলে ধরল TV9Bangla।
আপনাকে যখন এই পদে মনোনয়ন দিতে বলা হয়েছিল, আপনার প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
আমাকে মনোনয়ন জমা দিতে বলায় বিস্মিত হয়েছিলাম। বোর্ডের কোনও পদের দৌঁড়ে থাকতে পারি, এটুকু প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু শীর্ষ পদের জন্য় নয়। যখন আমাকে বলা হয় যে, আমি প্রেসিডেন্ট হতে চলেছি। সারা রাত কেটে গিয়েছিল ব্য়াপারটাতে ধাতস্থ হতে।
পদ গ্রহণ করার বিষয়ে আপনার কি কোনও শঙ্কা ছিল?
না। গত পাঁচ দশকের বেশি আমি ক্রিকেট প্রশাসনে বিভিন্ন পদে যুক্ত রয়েছি। এটা নতুন কিছু নয়। আমি চ্য়ালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি এবং এই নতুন চ্যালেঞ্জও উপভোগ করব। সবাই বলছে,এটা চ্য়ালেঞ্জিং হবে। আমি আমার সব ক্রিকেটীয় অভিজ্ঞতা এখানে ঢেলে দেব। সারা দেশে অনেক ঘুরেছি । জানি,আমাদের কোথায় সমস্যা। আমার ৩ বছরের মেয়াদ। সমস্ত কিছু যাতে মসৃণ করা যায়, নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী চেষ্টা করব।
একজন ক্রিকেটার প্রশাসনে কতটা পরিবর্তন আনতে পারে?
অনেকটা। আমি প্রশাসনে ১৯৯৮ সালে আসি। তখন আমার মতো অনেক ক্রিকেটার একসঙ্গে প্রশাসনে আসেন। কেন না সে সময় আমাদের মনে হয়েছিল, কর্ণাটক ক্রিকেট সংস্থায় ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন রয়েছে। আমরা ছিলাম পরিচালন কমিটির সদস্য। জানতাম, আমরা পারব পরিবর্তন আনতে। বিশেষ করে জেলার খেলার উন্নয়নে। সেই প্রথমবার। শিখেছি অনেক। প্লেয়ারদের উন্নতি হবে এমন ব্যবস্থা করেছি। কর্নাটকে কেউ যদি একটি রঞ্জি ম্যাচও খেলে থাকেন, তিনিও পেনশন পান। এই পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল দু দশক আগে।
ক্রিকেটাররা চাইলেই কী বিসিসিআই সভাপতির কাছে যেতে পারেন?
বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য, প্রাক্তন টেস্ট ক্রিকেটার হলেও অহঙ্কার বয়ে বেড়াই না। আমি কখনই নিজেকে পরিবর্তন করব না। যদি চাইতাম, অনেক আগেই করে ফেলতাম। আমি সবসময় ক্রিকেটারদের বলি, আমার দরজা খোলা। আজ পর্যন্ত কোনও ক্রিকেটারকে না বলিনি, এখনও বলব না।
ঘরোয়া ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আপনার কী মত?
এখন রঞ্জির হাল দেখে দুঃখ হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টানা খেলা। রঞ্জি ট্রফির প্রতি তাদের আগ্রহও খুব কম। আমাদের সময় এখনকার ক্রিকেটারদের মতো এত ঘনঘন ম্যাচ থাকত না, তবে দেশের হয়ে খেলার বিরতিতে সুযোগ পেলেই ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতাম। সেটা রাজ্য দল হোক বা ক্লাব ক্রিকেট। আমরা এটা করতাম নতুন ক্রিকেটারদের কথা ভেবে। টেস্ট ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলার সুযোগ পেলে ওদের উন্নতি হত। আগে যে তাগিদ নিয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলা হত, অনেক দিন ধরে তা হচ্ছে না। এটা ফিরিয়ে আনা খুব দরকার। সব থেকে দুঃখের বিষয়ে হল, এখনকার প্রজন্ম ফ্র্যাঞ্চাইজি কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বেশি প্রাধান্য দেয়।
ক্রিকেটাররা কোচ হওয়ার বিষয়ে অনেক বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন এবং হচ্ছেনও, এ বিষয়ে আপনার কী মত?
জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে কোচিংয়ের অনেক কোর্স রয়েছে। প্রচুর কোচ আছে, কিন্ত চাকরি বেশী নেই। আমাদের একটাই কাজ, তাদের চাকরির খোঁজ দেওয়া। কর্নাটকে আমরা একটা বিষয় নিশ্চিত করেছিলাম, প্রত্য়েক দলের যাতে কোচ থাকে। আমরা স্কুল টিমদেরও একই পরামর্শ দিয়েছি। সারা দেশ জুড়ে একই পরাকাঠামো থাকলে, কোর্স করা কোচেদের এটা খুবই সুবিধের হবে।