শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়
গতকাল ম্যাচ রিপোর্টটা লেখার সময় একটা খুব স্পষ্ট ভাবে বলেছিলাম, শুরুতেই স্টিভ স্মিথকে ফেরাতে পারলে ভারতের কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। কারণ, ওয়ার্নার না থাকায় এমনিতেই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং গভীরতা কমে গিয়েছে। তার উপর ম্যাথু ওয়েড, জো বার্নসরা ফর্মে নেই। ফলে স্মিথের উপরেই ভরসা রেখেছিল টিম। মাঝখানে ধরে রাখার ক্ষমতাটা একমাত্র স্মিথেরই ছিল। বিরাটের টিম শুরুতেই ওকে ফেরানোর পরিকল্পনা নিয়েই নেমেছিল মাঠে। স্মিথের (১) মতো ব্যাটসম্যান যখন অশ্বিনের বলে রাহানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরল, তখনই নিশ্চিত ছিলাম, আর যাই হোক না কেন, অস্ট্রেলিয়া খুব বেশি দূর যাবে না। হলও তাই। অস্ট্রেলিয়া ১৯১-এ থামল। মানে, প্রথম ইনিংসে ভারত ৫৩ রানের লিড পেয়েছে। গোলাপি বলের টেস্টে এই লিডটা খুব কার্যকর হবে।
15 wickets fell on a fantastic day two! #AUSvIND pic.twitter.com/t2kmPyJ2hk
— cricket.com.au (@cricketcomau) December 18, 2020
অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেন একা কুম্ভ রক্ষা করার চেষ্টা করছিল। টিম পেইনের লড়াই দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, কাল মানে, অ্যাডিলেড টেস্টের তৃতীয় দিন ভারতের স্ট্র্যাটেজি কী হওয়া উচিত? আমার মনে হচ্ছে, পূজারাই বাজি হতে পারে ভারতের। এমনিতে ও উইকেটে থাকতে ভালোবাসে। সারা দিন অক্লান্ত খেলে যাওয়াটাই ওর ইউএসপি। সেটা যদি পূজারা করতে পারে, তা হলে বিরাট-রাহানের মতো ব্যাটসম্যানরা বাকি কাজটা সেরে ফেলবে। অস্ট্রেলিয়াকে চাপে রাখতে হলে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে দরকার অন্তত ২৭৫। সেটা যদি স্কোরবোর্ডে রাখতে পারে, তা হলে কিন্তু ভারতীয় বোলাররা আরও ঝাঁপাতে পারবে।
অ্যাডিলেডের উইকেট দ্বিতীয় দিন দেখার পর একটা জিনিস পরিষ্কার বুঝতে পারছি, আর যাই হোক না কেন পিচে কোনও জুজু নেই। ড্রাই উইকেট। সবুজের কোনও সামান্য আভাটুকুও নেই। বরং স্পিনারদের জন্য প্রচুর মশলা আছে। না হলে অশ্বিন এতটা কার্যকর ভূমিকা নিতে পারত না। কাল বিরাটরা যদি কামিন্স, স্টার্কদের নতুন বলটা সামলে দিতে পারে, বিশেষ করে প্রথম একটা ঘণ্টা, তা হলে কিন্তু ২৭৫ না তোলার কোনও কারণ দেখছি না।
আরও পড়ুন – করোনা আক্রান্ত টেস্ট দলে ১০ ক্রিকেটার
গত কাল ২৩৩-৬-এ শেষ করেছিল ভারত। ভেবেছিলাম, অন্তত ২৬০-২৭০ হবে। তা হল না। ঋদ্ধিমান (৯), অশ্বিনরা (১৫) দাঁড়াতেই পারেনি। ২৪৪-এ ভারতের প্রথম ইনিংস শেষ হওয়ার পরও কিন্তু মনে হয়েছিল, অস্ট্রেলিয়াকে ভারত চাপটা দিতে পারবে। স্মিথ সমেত অস্ট্রেলিয়া ৪৫-৩ হয়ে যাওয়ার পর আর কোনও সন্দেহ ছিল না। শুধু দেখার ছিল, লাবুসেন আর পেইন কতটা লড়াই করে। লাবুসেনের ক্যাচ যদি পর পর না পড়ত, তা হলে অস্ট্রেলিয়া আরও আগে শেষ হয়ে যেত। তবে, পেইনের লড়াকু ব্যাটিং মুগ্ধ করল। ওকে নিয়ে অনেকে বলে অস্ট্রেলিয়া এমন একজনকে ক্যাপ্টেন করেছে, যার টেস্টে কোনও সেঞ্চুরিই নেই। পেইন অধিকাংশ সময় টেলএন্ডারদের নিয়ে ব্যাট করে। ফলে সেঞ্চুরির সুযোগটাই পায় না। আজ কিন্তু অজি ক্যাপ্টেন যদি এক দিকে দাঁড়িয়ে লড়াইটা না করত, তা হলে ওর টিম এত দূর যায়ই না। নট আউট ৭৩ রানের ইনিংসটা সব অর্থে সেঞ্চুরির মতো।
ভারতীয় বোলারদের নিয়ে দুটো জিনিস বলতেই হবে। অশ্বিন আজও যে ম্যাচ উইনার, প্রমাণ করল। ১৮-৩-৫৫-৪, ওর বোলিং বিশ্লেষণটা দেখলেই বোঝা যাবে বিপক্ষ ওকে সামলাতে যথেষ্ট ঝামেলায় পড়েছে। স্মিথ, ট্র্যাভিস হেড (৭), ক্যামেরন গ্রিন (১১), লিয়ঁদের উইকেট ঝুলিতে। এই অশ্বিন কিন্তু চতুর্থ ইনিংসে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। ওর সঙ্গে উমেশ যাদবও সফল। ৪০ রানে ৩ উইকেট নিয়েছে। উমেশ প্রতিভাবান বোলার। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, লাইন-লেন্থটা প্রায়ই হারিয়ে ফেলে। অ্যাডিলেডে কিন্তু সমানে এক জায়গায় বলটা রেখে গিয়েছে উমেশ। সেই সঙ্গে বুমরা নিয়েছে দুটো উইকেট। উইকেট না পেলেও সামি খারাপ বল করেনি।
Castled! Of course Pat Cummins delivered the goods at the close of play again! @hcltech | #AUSvIND pic.twitter.com/v0maFHBg2r
— cricket.com.au (@cricketcomau) December 18, 2020
ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে পৃথ্বীর আউট হওয়াটা মেনে নিতে পারছি না। আবার একটা ভিতরে আসা বলে উইকেট দিল ছেলেটা। নিউজিল্যান্ড সফর থেকে এই এক সমস্যা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ওকে। নেটে আরও বেশি সময় দিতে হবে পৃথ্বীকে। না হলে কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে রানের দেখা পাবে না ও। আমি অবশ্য পৃথ্বীর বদলে শুভমনকে খেলানোর পক্ষপাতী। ছেলেটার টেকনিক অনেক ভালো। তা ছাড়া ফর্মেও আছে। পরের টেস্টে ওকে খেলানোর কথা ভাবতেই পারে ভারত।
আজকের সকালটা ভারতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটা ঘণ্টা পার করে দিতে পারলে, পূজারা একটা উইকেটে পড়ে থাকা ইনিংস খেলতে পারলে কিন্তু এই অ্যাডিলেডেই ১-০ করে ফেলতে পারে ভারত।
ভারত ২৪৪ (বিরাট ৭৪, পূজারা ৪৩, রাহানে ৪২, স্টার্ক ৪-৫৩, কামিন্স ৩-৪৮, হ্যাজেলউড ১-৪৭, লিয়ঁ ১-৬৮)।
অস্ট্রেলিয়া ১৯১ (পেইন নট আউট ৭৩, লাবুসেন ৪৭, অশ্বিন ৪-৫৫, উমেশ ৩-৪০, বুমরা ২-৫২)।