অভিষেক সেনগুপ্ত
মহেন্দ্র সিং ধোনি কি কেপ টাউনে ফোন করেছিলেন তাঁকে? বিরাট কোহলি যখন তাঁর মতো তরুণ, মাহি টিপস দিয়েছিলেন— দুটো ভুলের মধ্যে যেন ছ-সাত মাসের তফাত থাকে। কাগিসো রাবাডাকে জো’বার্গ টেস্টে পাল্টা আক্রমণ করতে গিয়ে উইকেট দিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। সেই তিনিই উঠে দাঁড়ালেন কেপ টাউনে। হেলমেট খুলে যখন প্রশংসা কুড়োচ্ছিলেন, গ্যালারিতে তৃপ্ত দেখাচ্ছিল সতীর্থদের। প্রত্যাবর্তনকে আসলে সেঞ্চুরি নামে চেনে ক্রিকেট। জবাব দেওয়ার ভাষাও সেঞ্চুরি!
???@RishabhPant17 #SAvIND pic.twitter.com/yIbfZ2BXhQ
— BCCI (@BCCI) January 13, 2022
কেপ টাউনের বাইশ গজে দাঁড়িয়ে থাকা মাঝারি উচ্চতার ছেলের নাম যে ঋষভ পন্থ, মনেই হচ্ছিল না। যেন ধোনির ছায়া আঁকড়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। ঠান্ডা মাথা। চাপহীন। একেবারে শেষ মুহূর্তে আগ্রাসী। যেন নিজের সেঞ্চুরি ইনিংসের স্ক্রিপ্ট নিজেই লিখলেন। ১০০ নট আউট টেস্ট কেরিয়ারে হয়তো চতুর্থ। কিন্তু এই ইনিংসে দেখিয়ে দিয়ে গেলেন, পন্থ আসলে বড় ম্যাচের প্লেয়ার। এক-দুটো আউট দিয়ে বিচার করা যাবে না তাঁকে। ইংল্যান্ডে সেঞ্চুরি করেছেন কেরিয়ারের একেবারে শুরুর দিকে। অস্ট্রেলিয়াতেও পেয়েছেন। এ বার দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠেও শতরানের স্মৃতি রেখে গেলেন ভারতীয় কিপার। আর রেকর্ড? প্রথম এশিয়ান কিপার হিসেবে প্রোটিয়াদের দেশে করলেন সেঞ্চুরি।
A brilliant innings from @RishabhPant17 as he brings up his 4th Test ?.#SAvIND #TeamIndia pic.twitter.com/eo1iTysemP
— BCCI (@BCCI) January 13, 2022
গত বছর আমেদাবাদের ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০১ করেছিলেন পন্থ। ১৫টা ইনিংস পর আবার সেঞ্চুরি বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানের। কমেন্ট্রি বক্সে বলে সুনীল গাভাসকরের মতো বিশ্লেষক উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, ‘দুরন্ত ইনিংস। ঠান্ডা মাথায় নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এই ইনিংসটা ও অনেকদিন মনে রাখবে।’
শুধু পন্থ কেন, ভারতীয় ক্রিকেটও মনে রাখবে। না হলে বীরেন্দ্র সেওয়াগের মতো প্রাক্তন টুইটারে লিখবেন কেন, ‘ছেলেটাকে একাই ছেড়ে দাও। বিশ্বের অন্যতম সেরা টেস্ট ম্যাচ উইনার।’
Incredible ? from #RishabhPant . Just two other batsmen reached double fingers and has single -handedly kept India in the game. Not just an ex-factor but one of India’s biggest match-winner in Test cricket. pic.twitter.com/8FqX1FrIIK
— Virender Sehwag (@virendersehwag) January 13, 2022
পন্থকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেওয়ার পিছনে অনেক কারণ আছে। ১৩৯ বলে ১০০ নট আউট দিয়ে এই ইনিংসটাকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। পর পর ব্যর্থতায় ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা সিনিয়র কিপার ঋদ্ধিমান সাহা নামক চাপটাও জুড়তে হবে। আগের ইনিংসে উইকেট ছুড়ে আসার ভাঙচুর সমালোচনা রাখতে হবে। থাকবে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫২-৫ হয়ে যাওয়া। বিরাট কোহলিকে উল্টো দিকে পেয়ে নিজেকে সংযত রেখেছিলেন। ক্যাপ্টেন আউট হওয়ার পরও ১৯৮ তুলবে, আশাই করা যায়নি। পন্থ করেছিলেন। অশ্বিন, শার্দূল, উমেশ, সামি, বুমরাদের উইকেট হারানোর খেলার মাঝেও নিজের ব্যাটিং-মোড বদলাননি। বিরাট আউট হওয়ার সময় ৭১ রানে ক্রিজে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত নট আউট থেকে গেলেন সেঞ্চুরি ছুঁয়ে। শুধু তাই, সেঞ্চুরির কাছে হেরে হারিয়ে যান, এই অভিযোগও তো ওড়ালেন পন্থ।
কিছু ইনিংস চিরকাল মনে থেকে যায়। আর সেই কারণেই টি-টোয়েন্টি যুগেও টেস্ট ক্রিকেট সমান প্রাসঙ্গিক। যেমন মনে থেকে যাবে পন্থের এই সেঞ্চুরি। ঠিক তেমনই মনে থেকে যাবে, হাত থেকে ব্যাট ছিটকে যাওয়ার পর যত্ন করে তা তুলে আনা। তারপর ওই ব্যাটকে চুমুতে ভরিয়ে দেওয়া। ব্যাটকে আদর করতে হয়। না হলে ব্যাট ভালোবাসবে কেন!