কলকাতা: শুক্রবার কলকাতার (Kolkata) মাঠে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন বিহারের এক তরুণ ক্রিকেটার। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচেই ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন সাকিবুল গনি (Sakibul Gani)। রঞ্জি ট্রফি (Ranji Trophy) তো বটেই, গোটা বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে এ এক নজির। বিহারের এই প্রতিভাকে তুলে এনেছিলেন প্রাক্তন ভারতীয় কিপার অজয় রাত্রা (Ajay Ratra)। গনির সাফল্যে গর্বিত তিনি। তবে কাজটা যে একেবারেই সহজ ছিল না। গরিব চাষীর ছেলেকে ২২ গজে টিকিয়ে রাখার জন্য ক্রমাগত লড়াই করে যেতে হয়েছে রাত্রাকে। সঙ্গে ছিলেন সাকিবুলের দাদা ফয়জল। বাবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে ভাইয়ের ক্রিকেটের সব দায়িত্ব নিয়েছিলেন ফয়জল। তিনি নিজেও ছিলেন একজন ক্রিকেটার। অর্থের অভাবে খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি কোচবিহার ট্রফিতে বিহার দলের প্রতিনিধিত্ব করা ফয়জলের। ভাইয়ের রেকর্ডের দিনে তার মুখে পুরনো সেই দিনের কথা। “আমি নিজেও একজন ক্রিকেটার ছিলাম। ২০০৯-১০ সালে কোচবিহার ট্রফিতে বিহার দলের হয়ে খেলেছি। তারপর ভিজি ট্রফিতে পূর্বাঞ্চলের দলকে নেতৃত্ব দিয়েছি। কিন্তু সেই সময় বিহারে ক্রিকেটের কোনও ভবিষ্যত্ ছিল না। তাই খেলা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। তবে সাকিবের যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেটা সব সময় খেয়াল রেখেছি আমি। এক দিনও অনুশীলনে ফাঁকি দিতে দিইনি। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সাকিবকে রাঁচি পাঠিয়ে দেব। যাতে ও ঝাড়খণ্ড দলের হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলতে পারে।”
কেন ছেলেদের ক্রিকেটের পক্ষে ছিলেন না সাকিবের বাবা। কারণ একটাই অর্থের অভাব। ছোট জমিতে চাষ করে পরিবার চালাতে হত সাকিব-ফয়জলের বাবা। বিহার (Bihar) থেকে উঠে ক্রিকেটে কেউ নাম করতে পেরেছেন এমনটা তিনি শোনেনি। তাই নিজের ছেলেদের সে পথে যেতে দিতে চাননি। চাইতেন ছেলেরা পড়াশোনা শিখুক বা তাঁকে চাষের কাছে সাহায্য করুক। খেলা ছাড়ার পর ফয়জল বাবার পাশে দাঁড়াতে একটা দোকান খুলে ফেললেন। খেলার সরঞ্জাম বিক্রির দোকান।
সাকিবকে স্পট করেছিলেন অজয় রাত্রা। প্রাক্তন ভারতীয় কিপার তখন বিহার অনূর্ধ্ব ২৩ দলের কোচ। সিকে নাইডু ট্রফির দল তৈরির জন্য বিহারের বিভিন্ন প্রান্তের ছেলেদের দিকে নজর ছিল তাঁর। পাটনার মইন-উল-হক স্টেডিয়ামে গনির খেলা দেখে ভালো লাগে রাত্রার। সব থেকে বেশি নজর কেড়েছিল সাকিবের মন খুলে শট নেওয়ার ক্ষমতা। সেই বছর বিহারের অনূর্ধ্ব ২৩ দলের হয়ে ৬৮৫ রান করেছিলেন সাকিব। সর্বোচ্চ রান ছিল ২৮২। রাত্রার ভয় ছিল একটা জায়গাতেই, সাকিবের উইকেট ছোঁড়ার প্রবণতা। “সে বার ও এক হাজারের বেশি রান করতে পারত। কিন্তু বারবার উইকেট ছোঁড়ার প্রবণতা ছিল ওর। আমার একটাই পরামর্শ ছিল সাকিবকে, উইকেটে থাক। রান নিজে থেকেই আসবে। এখনও ওর সঙ্গে যোগাযোগ আছে। আমি খুব খুশি ওর সাফল্য দেখে। আশা করি আগামী দিনেও ওর কথা শুনতে পারবেন আপনারা।”
আরও পড়ুন: ICC World Test Championship: বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পাঁচেই ভারত, মগডালে শ্রীলঙ্কা