কলকাতা: সালটা ২০০৭। প্রথমবার টি২০ বিশ্বকাপ (T20 World Cup) অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকায় সে বার মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আরও একটা টি২০ বিশ্বকাপের উদ্বোধন হল। হোক না অনূর্ধ্ব-১৯ মেয়েদের, কিন্তু এটাও তো বিশ্বকাপই। আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ মেয়েদের টি২০ বিশ্বকাপের (ICC U19 Women’s T20 World Cup) উদ্বোধনী সংস্করণে চ্যাম্পিয়ন হল শেফালি ভার্মার ভারত। এ বারও সেই দক্ষিণ আফ্রিকাতেই। এই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলে রয়েছেন তিন বঙ্গকন্যা। যাঁদের বাড়ি, পাড়া এখন কার্যত উৎসবে মেতে উঠেছে। তারই ফাঁকে TV9Bangla-কে আইসিসি মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে ম্যাচের সেরার পুরস্কার জেতা বাংলার তিতাস সাধুর বাবা-মা জানালেন তাঁদের অনুভূতির কথা।
বাংলার মেয়ে আজ বিশ্বমঞ্চে দাপট দেখিয়ে সেরার পুরস্কার জিতে নিয়েছে। মেয়ের পারফরম্যান্স ভালো হওয়ায় ভীষণ খুশি তিতাসের বাবা রনদীপ সাধু। ফাইনালে সব চেয়ে কম ইকোনমি রেট তিতাসেরই। তাঁর বাবা ফাইনালের পারফরম্যান্স নিয়ে বলেন, “আমার মতে, যে জায়গায় বল করা উচিত ছিল, ৮০ শতাংশ ডেলিভারি ও সেখানেই করেছে। খেলাটা তো আসলে টিম গেম। ফাইনালে ভারত ফিল্ডিং বোলিং সবদিকেই ভালো করেছে। দলের সব বোলার একসঙ্গে এত ভালো বল করেছে যে, প্রতিপক্ষকে দাঁড়াতেই দেয়নি। তার সঙ্গে এই ম্য়াচে ভারতের মেয়েরা কয়েকটা দারুণ ক্যাচ নিয়েছে। ম্যাচের আগে ওর সঙ্গে যখন কথা হয়েছিল, বলেছিলাম- যেমন খেলো তেমনই খেলবে।”
বড় মঞ্চে তিতাসের সেরা হওয়ার একটা প্রবণতা বরাবরই রয়েছে, এমনটাই বলছেন তাঁর বাবা রনদীপ সাধু। তিতাসের বাবা আরও যোগ করেন, “ওর ওপর যেহেতু কোনও চাপ থাকে না, তাই বড় টুর্নামেন্টে ভালো খেলার প্রবণতা সব সময় রয়েছে তিতাসের। আমরা জানতাম ও ভালো পারফর্ম করবে। টুর্নামেন্টের শুরুর দিকটা ওর ততটা ভালো হয় না। কিন্তু টুর্নামেন্ট যত এগোতে থাকে ও তত ভালো পারফর্ম করতে থাকে।”
সিনিয়র দলে কি ডাক পাবেন তিতাস? এই প্রশ্নে তিতাসের বাবা বলেই দিলেন, “আরও প্র্যাক্টিস করতে হবে ওকে। নিজেকে আরও ভালো করে পরিণত করে তুলতে হবে। সিনিয়র দলে ডাক পাওয়ার আশা রাখার থেকে যে বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার, সেটি হল তৈরি হতে হবে ভালো করে। তৈরি থাকলে ডাক পাবেই।”
বাড়ি ফিরলে কেমন সেলিব্রেশন হবে দেশের নাম গর্বিত করা তিতাসের জন্য? এর উত্তরে তাঁর বাবা বলেন, “খুব বেশি কিছু সেলিব্রেশবন হবে বলে মনে হয় না। আমরা একসঙ্গে সময় কাটাব। সামনে আরও বড়, শক্ত টুর্নামেন্ট। ও যদি আইপিএলে সুযোগ পায়, তা হলে ওকে আরও শারীরিক দিক থেকে শক্তিশালী হতে হবে। আমরা এ বছর একসঙ্গে সময় কাটাতে পারিনি।”
আইপিএলে সুযোগ পেলে, তিতাসের অভিজ্ঞতা বাড়বে। এমনটাই বলছেন তাঁর বাবা। তিনি বলেন, “মেয়েদের বিশ্বকাপে ১৯ বছরের মেয়েরা খেলেছে। প্রতি দলেই হয়তো এক দু-জন সিনিয়র প্লেয়ার রয়েছে। আইপিএলে সমস্ত দেশের পেশাদার প্লেয়াররা খেলবে। সেখানে ও বাচ্চা। সেখানে জায়গা করাটাই আসল। তার জন্য তিতাসকে তৈরি হতে হবে।”
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তিতাস সাধুর মা ভ্রমর সাধু বলেন, “তিতাস সবে খেলা শুরু করেছে। ও ভালো পারফর্ম করেছে। আমরা সকলে খুব খুশি। তবে এখানেই শেষ নয়। ওর সামনে অনেক লম্বা রাস্তা রয়েছে। ও যেন ভালো খেলে সেটাই চাই।” আরও জানান, একজন ভারতীয় হিসেবে তিনি খুবই আনন্দিত। পাশাপাশি বলেন, “মেয়ে হিসেবে ভারতের এই জয়ে আমি বিশেষ খুশি। ভারতের মেয়েদের এর আগে বিশ্বকাপ ছিল না। এটাই ভারতের মেয়েদের জেতা প্রথম বিশ্বকাপ। যে কারণে আমি ভীষণ খুশি।” মা হিসেবে তিতাসের এই সাফল্যে কতটা খুশি জানতে চাওয়া হলে, তিনি বলেন, “একটা বাচ্চা ভালো রেজাল্ট করলে ঠিক যেমনটা লাগে, তেমনই মা হিসেবে আমার ভালো লাগছে। ও অনেক পরিশ্রম করেছে, ভালো খেলেছে এটাই সব।”