Virat Kohli Birthday Special: তুমি কেমন করে ‘রান’ করো হে গুণী…
King Kohli: প্রত্যাবর্তনের নতুন মঞ্চে বিরাট বিশ্বকাপটা তুলে ধরুক। ভক্ত হিসেবে আর কী চাই! জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা কিং কোহলি।
দীপঙ্কর ঘোষাল
সাংবাদিক হওয়ার অনেক জ্বালা! কখনও বায়াসড হওয়া যাবে না। ফ্যান তো কোনও ভাবেই নয়। তা হলে তো মন খুলে লেখাই যাবে না। যাকে দেখছ, যে ভাবে দেখছ, সে ভাবেই তুলে ধরতে হবে। সবচেয়ে বড় শর্ত হল, যদি সাংবাদিক হও, তোমাকে নিরপেক্ষ হতেই হবে! কিন্তু নীতি, নিয়ম, বিধি কিংবা আদর্শ- যাই বলা হোক না কেন, সাংবাদিক হৃদয় কি তাতেই আটকে থাকে? সচেতন ভাবে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব ঝলমল মুহূর্তগুলো? কোনও টেস্ট বাঁচানো ইনিংস দেখতে দেখতে কি-প্যাডে চলতে থাকা আঙুল কি কখনও থমকে যায় না? অবিন্যস্ত হয়ে যায় না ভাবনা? টাটকা বাতাসের মতো একরাশ আবেগ হানা দেয় না পেশাদারি মনে? দেয় তো! দিয়েছে! দেবেও! পেন, নোটবুক, ল্যাপটপ, এমনকি পেশা সরিয়ে রেখে সাংবাদিকও তখন নির্ভেজাল ভক্ত। স্রেফ গুণমুগ্ধ ভক্ত।
ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে সানির উত্থান, কপিলের হাতে বিশ্বকাপ, সচিনের শারজা-বিস্ফোরণ, আজহারের কবজির মোচড়, দ্রাবিড়-সভ্যতা, লর্ডসে সৌরভের জামা ঘোরানো…! অতর্কিতে কিছু মুহূর্ত হানা দেয়। টিভি সেটের সামনে বসে থাকা আমভারতীয়, গ্যালারিতে পতাকা-পোস্টারে রাঙানো দর্শকের সঙ্গে তখন কি খুব একটা ফারাক থাকে সাংবাদিকের? না, সাংবাদিকও তখন স্রেফ ভক্ত। কখনও উল্লসিত হয় সে। কখনও উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে। হাততালি দিয়ে ওঠে। অজান্তে ভিজে আসে চোখ। ভারতীয় হিসেবে অহঙ্কার না থাকলেও প্রচ্ছন্ন গর্ব তো আছেই। ক্রিকেট খেলিয়ে এই দেশ তারকার জন্ম দিয়েছে নিয়মিত। না হলে এই একটা খেলা ঘিরে আপামর জনতা প্রায় অর্ধশতাব্দী বুঁদ হয়ে থাকত না। সুনীল গাভাসকর, কপিল দেব যে সাম্রাজ্য জয় করেছিলেন, সচিন তেন্ডুলকরের হাত ধরেই সম্প্রসারিত হয়েছে। বিরাট কোহলি হাত ধরে এই ভারত ক্রিকেট দুনিয়া দখলের জন্য এগিয়ে গিয়েছে।
সারা বছর তো অনেক লেখাই লিখি। সাংবাদিক হিসেবে। পেশা, ভাবনা, দর্শন সরিয়ে রেখে না আজ ভক্তই হলাম! এই লেখা বিরাট অবধি পৌঁছবে না, জানি। ক্রিকেটের সেরা ছাত্র জানতেও পারবে না, কলকাতার কোনও এক কোণে তাঁর আদ্যন্ত ভক্ত রয়েছে। তাঁর সাফল্য, ব্যর্থতা বিরাটের মতো যে ভক্তকেও ছুঁয়ে যায়। প্রাইম টাইমে সচিনকে দেখার সুযোগ হয়নি। কিন্তু বিরাট? প্রেস বক্স, প্র্যাক্টিস সেশন, পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মহাতারকাকে দেখে কতবার যে থমকে গিয়েছি, ইয়ত্তা নেই। সাংবাদিক সম্মেলনে আরও কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা। না, বিরাটের সঙ্গে কোনও ছবি নেই। তোলার ইচ্ছে হলেও সংযত থাকতে হয়েছে। প্লেয়ারের সঙ্গে সাংবাদিককে দূরত্ব রাখতে হয় যে! তবু এত মুগ্ধতা কেন? এই পেশায় পা রাখার গল্পে খোদ বিরাট মিশে রয়েছেন যে!
২০১১ সাল। বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে। মীরপুরে ভারতের প্রথম ম্যাচ। দেখার সুযোগ নেই। মেস লাইফে টেলিভিশন ছিল না। রেডিওতে কমেন্ট্রি শুনছি। একদিকে বীরেন্দ্র সেওয়াগ, উল্টোদিকে বিরাট কোহলি। জুটিতে লুটি চলছে তখন। তখনই একটা ফোন পেলাম। একটি দৈনিক সংবাদপত্রে কাজ করার অফার। একেবারে ক্রীড়া বিভাগেই। খেলা দেখা আর খেলা নিয়ে লেখা!
সময়ের সঙ্গে বদলে যায় অনেক কিছু। বিরাট পারফর্ম করলে লিখতে হয়েছে। খারাপ খেললে করতে হয়েছে সমালোচনা। ভুলতে হয়েছে, বিরাটও আমার মতোই মানুষ। ব্য়র্থতা আসতে পারে। অভিমান, কষ্ট, দুঃখ, আনন্দ তাঁরও হয়। আসলে, আবেগের, অনুভূতির অলি-গলি দিয়ে যেতে যেতে কাউকে যদি অনুভব করা যায়, হয়তো সে বড্ড বেশি ছাপ ফেলে যায় মনে। বিরাট কখন যে আমার হৃদয়ে পাকাপাকি জায়গা করে ফেলেছেন, বুঝতেই পারিনি। ওঁর আগ্রাসন, চোখে চোখ রেখে লড়াই, সতীর্থের পাশে দাঁড়ানো, ভীষণ টানত। ক্যাপ্টেন তো এমনই হয়!
ইডেনে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগের দিন। আপার টায়ারে দাঁড়িয়ে দেখছি। বিরাটকে দেখে এগিয়ে এলেন শাহিদ আফ্রিদি ও মহম্মদ আমির। বিরাটের হাত থেকে ব্যাট নিয়ে শ্যাডো করছিলেন আমির। বিরাট সেটা উপহার দিলেন আমিরকে। বিরাটের থেকে ব্যাট উপহার! আমিরের আনন্দ ছিল দেখার মতো। হয়তো সে দিনই সাংবাদিক থেকে ফ্যান হয়ে গিয়েছিলাম!
ভাইজ্যাগে ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ। প্রথম ইনিংসে ১৬৭, দ্বিতীয় ইনিংসে ৮১। গোগ্রাসে গিলেছিলাম বিরাটকে। সেই একই রকম আচ্ছন্ন করে গেল ২০১৭ সালে ফেব্রুয়ারির একটা দিন। ভারতের মাটিতে প্রথম বার টেস্ট খেলতে এসেছে বাংলাদেশ। হায়দারাবাদে ম্যাচ। উপ্পল স্টেডিয়ামে প্রেসবক্সের বাইরে একটা ব্যালকনি আছে। প্রেসবক্সের ভিতর থেকে মাঠের অ্যাম্বিয়েন্সটা বোঝা যাচ্ছিল না। বিরাটের ব্যাট দেখতে ব্যালকনিতেই চলে গেলাম। প্রথম ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি। টেস্ট নয়, ওয়ান ডে মেজাজে মাত্র ২৪৬ বলে ২০৪ রানের ইনিংস। ম্যাচটা গড়িয়েছিল শেষ দিন অর্থাৎ ১৩ ফেব্রুয়ারি। খেলা শেষেই সাংবাদিক সম্মেলনে এলেন বিরাট। ইচ্ছে হয়েছিল, একবার বলি, বিরাট, সেলফি প্লিজ!
মোহালিতে কেরিয়ারের শততম টেস্ট খেলবেন বিরাট। সাংবাদিক হিসেবে পাড়ি দিলাম মোহালি। সাংবাদিক সত্ত্বা সরিয়ে রেখে মনে-প্রাণে চাইছিলাম, শততম টেস্টে একটা সেঞ্চুরি হবে না! বিরাট তৃপ্তি পাবে। আমিও তো! ৪৫ রানে আপাত নিরীহ একটা ডেলিভারিতে বিরাট ফিরে গেলেন।
রাতের পর যেমন সকাল হয়, ব্যর্থতার পর তেমন সাফল্য আসে। তিন বছরের ব্যর্থতা কাটিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্বপ্নের ছন্দে বিরাট। হঠাৎ ফুরিয়ে তিনি যাবেন না, জানতাম। যাওয়ার কথা নয়। প্রত্যাবর্তনের নতুন মঞ্চে বিরাট বিশ্বকাপটা তুলে ধরুক। ভক্ত হিসেবে আর কী চাই! জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা কিং কোহলি।