অভিষেক সেনগুপ্ত
দুবাই: যে সম্ভাবনার ফল্গুধারা বইতে শুরু করেছিল তিরতির করে, তাই জলোচ্ছ্বাসের মতো আছড়ে পড়ল। টি-টোয়েন্টি (T20) ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দিলেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। তবে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে (T20 World Cuo) ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব করবেন। তারপর আর ক্যাপ্টেন হিসেবে দেখা যাবে না। তবে, ওয়ান ডে (ODI) এবং টেস্টে (Test) জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করবেন।
টুইটারে নিজের বিবৃতিতে বিরাট লিখেছেন, ‘এই সিদ্ধান্তে আসতে অনেকখানি সময় লেগেছে। কাছের লোকজনদের সঙ্গে, রবি শাস্ত্রী, রোহিত শর্মার মতো যারা ভারতীয় টিমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বে আছে, তাদের সঙ্গে অনেক আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর আর টি-টোয়েন্টিতে ক্যাপ্টেন্সি করব না। একই সঙ্গে বোর্ড সচিব জয় শাহ, প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, নির্বাচকদের সঙ্গে কথাও বলেছি। নিজের যোগ্যতা মতো আমি ভারতীয় ক্রিকেটের সেবা করে যাব।’
?? ❤️ pic.twitter.com/Ds7okjhj9J
— Virat Kohli (@imVkohli) September 16, 2021
কেন বিরাট হঠাৎ অধিনায়কত্ব ছাড়লেন বিরাট? বৃহস্পতিবার সন্ধেয় বিরাটের টুইট বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়ে গেল।
আইপিএলে রোহিতের মুম্বই ইন্ডিয়ান্স পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন। ক্যাপ্টেন হিসেবে ধারাবাহিক ভাবে সফল। শুধু তাই নয়, তরুণ ক্রিকেটার তুলে আনার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছেন। সাম্প্রতিক অতীতে মহেন্দ্র সিং ধোনি পরবর্তী প্রজন্মকে তুলে আনার ক্ষেত্রে দুরন্ত ছাপ রেখে গিয়েছেন। ততটা না হলেও রোহিত নিজের গণ্ডিতেও সেই কাজটা করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন মহল থেকে বারবার বলা হচ্ছিল, রোহিতকে ক্যাপ্টেন্সির দায়িত্ব দিয়ে বিরাটকে খোলা মনে খেলার সুযোগ করে দেওয়া হোক। তাতে টিমেরই লাভ হবে। সেটাই কি কারণ?
আইসিসি টুর্নামেন্ট এখনও জিততে পারেননি। বরং বিশ্বকাপের আসরে টিমকে মোটিভেট করতে পারেন না, এমনও বলা হয়। তাঁর আগ্রাসী মনোভাব টিমে সঞ্চার হয় ঠিকই, কিন্তু কঠিন সময়ে ঠান্ডা মাথায় ম্যাচ বের করার মতো পরিণত তিনি নন। এই কারণেই মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো প্রাক্তন ক্রিকেটারকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মেন্টর করা হয়েছে। যাতে নরমে-গরমে টিম চালাতে সুবিধা হয় পরিচালক সমিতির। এমনকি, অতীতেও দেখা গিয়েছ, ফিল্ডিংয়ের সময় ধোনির উপরেই যাবতীয় দায়িত্ব দিতেন বিরাট। ফিল্ডিং সাজানো থেকে, বোলিং চেঞ্জ— সব কিছুতেই বাড়তি দায়িত্বে থাকতেন।
অনেকেই এই দুটোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগ খুঁজে পাচ্ছেন। শাস্ত্রীর খুব কাছের ছেলে বিরাট। বিরাটকে সঙ্গে নিয়েই গত পাঁচ বছর ধরে ভারতীয় টিমকে সাফল্য দিয়েছেন শাস্ত্রী। সেই তিনিই ইংল্যান্ড সফরে অত্যন্ত সমালোচিত হয়েছেন। তাঁর বই প্রকাশ অনুষ্ঠান থেকেই করোনার প্রবেশ হয়েছিল ভারতীয় টিমে, এমনও বলা হচ্ছিল। যার জেরে ম্যাঞ্চেস্টারে পঞ্চম টেস্ট বাতিল হয়ে যায়। আর তার জন্য শাস্ত্রীকেই দায়ী করা হয়েছে। ক্রিকেটমহলের অনেকেই বলছেন, এতে অত্যন্ত অপমানিত হয়েছে শাস্ত্রী। তাই বোর্ডের অনুরোধ সত্ত্বেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা নাকি বোর্ডকে জানিয়েও দিয়েছেন। শাস্ত্রী থাকছেন না বলেই কি বিরাট টি-টোয়েন্টি ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দিলেন?
ঘটনা হল যে, দিন তিনেক আগেই মিডিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়েছিল, বিরাট সাদা বলের ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দিতে পারেন। তা নিয়ে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হতেই বোর্ড সচিব জয় শাহ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, এখনই ক্যাপ্টেন্সি ভাগাভাগি নিয়ে ভাবছেন না তাঁরা। তা হলে কী এমন ঘটল, যার জেরে বিরাট সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন? নাকি, রোহিতকে বিকল্প হিসেবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ভেবে রাখার জন্যই তিনি সরে গেলেন?
বিরাট নিজের বিবৃতিতে বলছেন, ‘ক্রিকেটে এখন ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট একটা বড় ব্যাপার। গত ৮-৯ বছর ধরে ব্যাপক পরিমাণ ওয়ার্কলোড নিয়ে খেলছি, একই সঙ্গে তিনটে ফর্ম্যাটে ক্যাপ্টেন্সিও করছি। আমার মনে হয়েছে, এই মুহূর্তে আমার নিজেকে কিছুটা বিশ্রাম দেওয়া উচিত। তবে, আমি ওয়ান ডে ও টেস্ট টিমের ক্যাপ্টেন্সির জন্য বরাবরের মতো তৈরি আছি।’
একই সঙ্গে বিরাট নিজের কথায় লিখেছেন, ‘আমি খুব ভাগ্যবান যে, ভারতীয় টিমে খেলার সুযোগ পেয়েছি, নেতৃত্ব দিতে পেরেছি। যাঁরা এই যাত্রাপথে আমার পাশে থেকেছেন তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ। টিমের সবাই আমার পাশে না থাকলে যতটুকু সাফল্য পেয়েছি, সেটা সম্ভব হত না।’
অনেকেই বলছেন, বিরাট ওয়ান ডে ক্যাপ্টেন্সিও ছেড়ে দেবেন। আর সেটাও নাকি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরই ঘোষণা করে দেবেন। ঘটনা যে দিকেই গড়াক না কেন, বিশ্বকাপের মাসখানেক আগে, আইপিএলে যে টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে, তার দিন তিনেক আগে এই সিদ্ধান্ত কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য ভালো নয়। বরং, এতে টিমের বাঁধন নষ্ট হবে। যার আশঙ্কা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
বিরাট আবেগতাড়িত, বিরাট আগ্রাসী, বিরাট সাফল্যমুখর, বিরাট রানমেশিন, বিরাট এই প্রজন্মের সেরা ক্রিকেটার। এই বিরাট আবার মানুষও। ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে পড়েই হয়তো হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেন, কুড়ি-বিশের ক্যাপ্টেন্সি আর করবেন না!