অভিষেক সেনগুপ্ত
বন্ধুত্ব। একটা শব্দ, অনেক আবেগ। এর মধ্যে লুকিয়ে বিশ্বাস, ভরসা, দায়বদ্ধতা। বন্ধুত্বের কোনও বয়স হয় না। শুধু হয়ে যায়। তবে অনেকেই বলেন, স্কুলের বন্ধুত্বই নাকি সেরা! সেখানে কোনও স্বার্থ থাকে না, চাওয়া-পাওয়া থাকে না, শুধুই থাকে নিখাদ ভালোবাসা। আচ্ছা বিরাট কোহলি এবং রবীন্দ্র জাডেজার বন্ধুত্বও কি এমনই? স্কুলের বন্ধু নন, তবে ছেলেবেলার সতীর্থ। এক সঙ্গে দেশের জার্সিতে বিশ্বকাপ জিতেছেন। আরও একটা বিশ্বকাপ ফাইনালে। বয়স বেড়েছে, প্রত্যাশাও। আমেদাবাদে হয়তো দুই বন্ধুর একসঙ্গে বিশ্বকাপ জেতার আরও একটা স্বপ্নপূরণ হল! কে জানে?
বহুদিন আগের কথা। একটি কমেডি শোয়ে বিরাট কোহলিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল টিমের মধ্যে, ‘কৌন জ়াদা ফেকতা হ্যায়!’ জবাব দিতে খুব বেশি সময় লাগেনি কোহলির। নির্দ্ধিধায় বলেছিলেন জাডেজার কথা। টিমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুল মারতে পারেন নাকি জাড্ডু। এমন এমন কথা বলেন, যা মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারে। এরকম কিছু ঘটনার উদাহরণও দেন। এখানে যেন বিরাটের সঙ্গে জাডেজার একটা মিল আছে। গুল মারার ক্ষেত্রে নয়, ‘ফেকতা’ হ্যায়-তে। আরে বল ছোড়ার কথা বলা হচ্ছে! তাই নয় কি?
ফিল্ডিংয়ের মাধ্যমেও যে টিমকে জেতানো যায়, যুবরাজ-কাইফ-সুরেশ রায়না তো দেখিয়েছেন। তার আগের উদাহরণে যাচ্ছি না। বর্তমান দলে? সেরা ফিল্ডারের প্রসঙ্গ উঠলে নিঃসন্দেহে বিরাটও বলবেন জাডেজার নাম। আর বিরাটের নাম জুড়বেন জাডেজা। ফিল্ডিংয়ে সবসময়ই চনমনে বিরাট-জাডেজা। তাঁদের থেকে ক্যাচ ফসকানো মানে বিরল ঘটনা। আর রানিং বিটউইন দ্য উইকেট! এই দু-জনের বন্ধুত্বের মতোই। এত সুন্দর বোঝাপড়া, চোখে চোখে ইশারায় কখন সিঙ্গলকে ডাবলে পরিণত করবেন, ধরতে পারবেন না। বোঝাপড়া তো একদিনে তৈরি হয়নি!
সালটা ২০০৮। তারও আগে থেকে পরস্পরকে চেনেন বিরাট-জাডেজা। ২০০৮ সালে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দলে বিরাট কোহলি ক্যাপ্টেন। জাডেজা টিমের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। কোহলির নেতৃত্বে অনূর্ধ্ব বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। ২০০৮ সালে সেই বিশ্বজয়ী দলের সদস্য জাডেজাও। স্কুলের বন্ধুত্ব নিবিড় হলেও পরবর্তীতে একই রকম যোগাযোগ থাকবে, নিশ্চয়তা নেই। তেমনই অনূর্ধ্ব ১৯ স্তরে এক সঙ্গে খেলা মানেই সিনিয়র দলেও হবে, এই নিশ্চয়তাও। বিরাট-জাডেজা সিনিয়র দলেও দীর্ঘ সময় এক সঙ্গে খেলছেন। টি-টোয়েন্টি, ওয়ান ডে ফরম্যাট মিলিয়ে বেশ কিছু বিশ্বকাপ খেলেছেন একসঙ্গে। বিরাটের নেতৃত্বেও খেলেছেন জাডেজা। কিন্তু সিনিয়র টিমের হয়ে এক সঙ্গে ট্রফি জেতা হয়নি।
আমেদাবাদে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টিম ইন্ডিয়া যেমন বিশ্ব জয়ের লক্ষ্যে নামবেন, দুই বন্ধুও। বিরাট কোহলি এবং রবীন্দ্র জাডেজা। লিগ পর্বে নিউজিল্যান্ড ম্যাচটা মনে পড়ে? বিরাটের সেঞ্চুরিটা যাতে কমপ্লিট হয়, মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন জাডেজাও। স্ট্রাইক পেলেও ব্লক করছিলেন। বিরাট এবং দলের প্রয়োজনীয় রান যে একই! সেই ম্যাচে অবশ্য অল্পের জন্য বিরাটের সেঞ্চুরিটা হয়নি। বিরাট আউট হতেই দ্রুত ম্যাচ ফিনিশ করেন। আজ নামবেন একসঙ্গে আবারও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে। সতীর্থ, বন্ধু এবং ভারতীয় দলের ক্রিকেটার হিসেবে। যেন একে অপরকে বলে নামবেন, বন্ধু চল…কাপ জিতি!