লুসেইল : আল হিম…। কাতার বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল অবধি খেলা হয়েছে, ‘আল রিলা’ বলে। সেমিফাইনাল এবং ফাইনালের জন্য ব্যবহার হচ্ছে ‘আল হিম’। খুব বেশি পার্থক্য নেই। তবে নামেই যে বিশাল পার্থক্য। ‘আল হিম’ এর অর্থ ‘দ্য ড্রিম’। স্বপ্নই তো দেখছে আর্জেন্টিনা। দিয়েগো মারাদোনার সৌজন্যে শেষ বিশ্বকাপ এসেছিল। দু-বারের বিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্টিনার অপেক্ষা দীর্ঘ হয়েছে ক্রমশ। মারাদোনার পর যাঁকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি স্বপ্ন দেখেছে, যাঁর উপর ভরসা রেখেছে, যাঁর আলোয় আলোকিত হয়েছে, সেই লিওনেল মেসিও তো স্বপ্ন দেখছেন। কেরিয়ারের পঞ্চম তথা শেষ বিশ্বকাপ মেসির। শেষ সুযোগও। বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজের শ্রেষ্টত্ব প্রমাণ করার। তার জন্য প্রয়োজন বিশ্বকাপ জয়। সেই স্বপ্ন পূরণের শেষ ধাপে পৌঁছলো আর্জেন্টিনা এবং লিওনেল মেসি। ম্যাচের বিস্তারিত রিপোর্ট TV9Bangla-য়।
প্রতিটা ম্যাচে যে লাইনটা লিখতেই হয়, মেসি একা নন। সে কারণেই এ বার অন্যতম ফেভারিট ধরা হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। কিন্তু প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হার। এই লুসেইল স্টেডিয়ামেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হয়েছিল আর্জেন্টিনার। সেই লুসেইল যেমন অস্বস্তি তৈরি করেছিল, লুসেইল স্বস্তিও ফিরিয়েছে। এই মাঠে ৪ ম্যাচে ৪ গোল লিও মেসির। সব মিলিয়ে এ বারের প্রতিযোগিতায় ৫ গোল। গোল্ডেন বুটের দৌড়ে কিলিয়ান এমবাপের সঙ্গে রয়েছেন লিও মেসি। বিশ্বকাপের মঞ্চে রেকর্ডও গড়লেন। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার দিক থেকে ছুঁলেন জার্মান কিংবদন্তি লোথার ম্যাথাউজকে। এ দিন বিশ্বকাপে ২৫তম ম্যাচ খেললেন মেসি। আরও একটি রেকর্ড তাঁর ঝুলিতে। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে সবচেয়ে বেশি গোল। গত ম্যাচেই ১০ নম্বর গোল করে ছুঁয়েছিলেন গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে। এ দিন বিশ্বকাপের মঞ্চে সর্বাধিক গোল স্কোরার হলেন লিও মেসি।
আর্জেন্টিনা- ৩ (মেসি ৩৪’-পেনাল্টি, আলভারেজ ৩৯’, ৬৯’)
ক্রোয়েশিয়া-০
ম্যাচের ৩৪ মিনিটে পেনাল্টি গোলে রেকর্ড এবং আর্জেন্টিনাকে ১-০ এগিয়ে দেন লিও মেসি। বল নিয়ে প্রতিপক্ষ বক্সে এগোচ্ছিলেন জুলিয়ান আলভারেজ। ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্স লাইনের হিমসিম অবস্থা। আলভারেজকে আটকাতে এগিয়ে আসেন গোলকিপার লিভাকোভিচ। বল ছুঁতে না পারলেও আলভারেজকে ফাউল করা ছাড়া উপায় ছিল না। আর্জেন্টিনার ‘বিতর্কিত’ পেনাল্টি। জোরালো শটে গোল লিও মেসির। পেনাল্টি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও দ্বিতীয় গোলটি অনবদ্য। এমনকি এই গোলে মুগ্ধ ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার রোনাল্ডিনহো। প্রায় মাঝ মাঠের আগে থেকে সোলো রান জুলিয়ান আলভারেজের। কয়েকজনকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন। জুলিয়ানের সামনে ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডার সোসা। বল ক্লিয়ারের চেষ্টা করেন সোসা। ঠিকঠাক পারেননি। বল দখলে থাকে জুলিয়ানেরই। আর্জেন্টিনাকে ২-০ এগিয়ে দেন আলভারেজ। গ্যালারিতে ধরা পড়ে, রোনাল্ডিনহোর চওড়া হাসি এবং হাত তালি। ২-০ এগিয়ে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ২-০ এগিয়ে থেকেও টাইব্রেকারে গড়িয়েছিল ম্যাচ। সেই আতঙ্ক ছিলই।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে মূলত আক্রমণ আর্জেন্টিনারই। বেশ কিছু গোলের পরিস্থিতি তৈরি হয়। ব্য়বধান বাড়ছিল না যদিও। অবশেষে সেই ম্যাজিক মোমেন্ট। বক্সের ডান দিকে লিও মেসি। উইথ দ্য বল তিনি কতটা ভয়ঙ্কর, আর প্রমাণ করার বাকি রয়েছে কি? মেসির সঙ্গে লেগে রইলেন ক্রোয়েশিয়া ডিফেন্ডার গুয়ার্দিওল। তাঁকে কাটিয়ে বল নিয়ে লাইনের কাছ থেকে মেসির মাইনাস। জুলিয়ানের শুধু ফিনিশ করাই কাজ ছিল। মেসির সাজানো পাসে ফিনিশ করতে কোনও ভুল করেননি। দ্বিতীয় গোলে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ এগিয়ে দেন জুলিয়ান আলভারেজ।
সময় গড়ায়, অপেক্ষা বাড়ে, আর্জেন্টিনার ধৈর্য অনেক বেশি। ১৯৮৬-তে মারাদোনার আর্জেন্টিনা শেষ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ২০১৪ সালেও ফাইনালে উঠেছিল মেসির আর্জেন্টিনা। তৃতীয় ট্রফি আসেনি। লুসেইলে রবিবার তারই লক্ষ্য়ে নামতে চলেছে মেসির আর্জেন্টিনা। প্রতিপক্ষ কে, তা জানার অপেক্ষা কাল অবধি। ‘আল হিম’ পূরণের পথে আর একটা ম্যাচ জিততে হবে। গ্র্যান্ড ফিনালে।