এটিকে মোহনবাগান-৩ : কেরালা ব্লাস্টার্স-০
(বোমাস ৩ ও ৩৯, কৃষ্ণা ২৭, লিস্টন ৫০) (সাহাল ২৪, পেরেইরা ৬৯)
কলকাতা: ইভান ভুকোমানোভিচ কি জানতেন, তাঁর সাড়ে তিন মাসের স্বপ্ন চুরমার করে দিতে পারে একটা জুটি? কেরালা ব্লাস্টার্সের সার্বিয়ান কোচের কথা থাক। লাল-হলুদ কোচ মানুয়েল দিয়াজ শুক্র রাত থেকে কতটা টেনশনে থাকবেন? ২৭ নভেম্বর আইএসএলের মেগা ম্যাচ। যে জুটি চারটে গোল ফলাতে পারে, ডার্বিতে নামার আগে তাঁদের নিয়ে ভীতি, অঙ্ক থাকবে না, হয় নাকি!
আইএসএলের (ISL) উদ্বোধনী ম্যাচে কেরালাকে ৪-২ উড়িয়ে দিল এটিকে মোহনবাগান (ATK Mohun Bagan)। তার থেকেও বড় হয়ে উঠেছে যে স্বপ্ন, তা হল হুগো বোমাস (Hugo Boumous) ও রয় কৃষ্ণার (Roy Krishna) দুরন্ত ফর্ম। গোল করানোই নেশা বোমাসের। আইএসএলে ২৫টা গোল করালেন। কিন্তু গোল, তাতেও পিছিয়ে রাখা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে ২১ গোল তাঁর পকেটে। আর রয় কৃষ্ণা, আইএসএলে ৩০তম গোল এল তাঁর পা থেকে। জুটি তিন গোল। ফিজির স্ট্রাইকার আবার দুরন্ত একটা গোল করালেন লিস্টন কোলাসোকে দিয়ে।
Presenting our 'Hero of the Match'
Who else but @adnan_hugo !! ??#ATKMohunBagan #JoyMohunBagan #আমরাসবুজমেরুন #HeroISL #ATKMBKBFC pic.twitter.com/ho4BnxJqfP
— ATK Mohun Bagan FC (@atkmohunbaganfc) November 19, 2021
জয় দিয়ে যে কোনও টুর্নামেন্ট শুরু করতে চান কোচরা। আন্তনিও হাবাসও তা-ই চেয়েছিলেন। বাগানের ভারসাম্য, বিদেশি-দেশি কম্বিনেশন, গভীরতা, অভিজ্ঞতাই শুরু থেকে ছন্দের বারান্দায় এনে ফেলল সবুজ-মেরুনকে। এতটাই যে মরসুমের শুরু থেকে ট্রফির স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিলেন সমর্থকরা। কোচ হাবাসের একটা প্লাস পয়েন্ট, কখনওই দূরের কথা ভাবেন না। যে ম্যাচ খেলতে নামবেন, সেটা ঘিরেই থাকে যাবতীয় পরিকল্পনা। ইভানের কেরালা সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য হাতে না থাকলেও নিজের টিমের উপরে আস্থা ছিল। ৪-৩-৩ ছকে জয় তুলে নিলেন স্প্যানিশ কোচ।
First points on the board! ?⚽️
After an enthralling 90 minutes, the Mariners take full points in the @IndSuperLeague opener against @KeralaBlasters
WE MOVE! ?❤️FT:
ATK Mohun Bagan 4-2 Kerala Blasters#ATKMohunBagan #JoyMohunBagan #আমরাসবুজমেরুন #HeroISL #ATKMBKBFC pic.twitter.com/YUJDd4fwv6— ATK Mohun Bagan FC (@atkmohunbaganfc) November 19, 2021
ম্যাচের শুরুতেই গোল পেয়ে যায় মোহনবাগান। ৩ মিনিটের মাথায় বিপক্ষের বক্সের ঠিক বাইরে থেকে নেওয়া বাঁকানো শট আচমকাই ঢুকে যায় গোলে। এর পর আর রোখা যায়নি বাগানকে। দুটো প্রান্তের চমৎকার ব্যবহার। মনবীর-কৃষ্ণা-লিস্টন তিন ফরোয়ার্ডের গতি আর পিছন থেকে ক্রমাগত থ্রু বাড়িয়ে যাওয়া হুগো। কেরালা ডিফেন্স ফালাফালা হয়ে যাচ্ছিল। গতির বিরুদ্ধে গিয়ে ২৪ মিনিটে ইভানের টিম ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল। ডান দিক থেকে রাহুল কেপির সেন্টার বক্সের মধ্যে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা আব্দুল সাহাল পেয়ে যান। তাঁর শট থেকেই ১-১ করে কেরালা ব্লাস্টার্স।
তিন মিনিটের মধ্যে আবার ২-১ মোহনবাগানের। মাঝমাঠ থেকে বোমাসের বাড়ানো দুরন্ত থ্রু কেরালার বক্সে পেয়ে যান কৃষ্ণা। কিপার আলবিনো গোমস তাঁকে ফাউল না করলে গোলই করে ফেলতেন তিনি। পেনাল্টি থেকেও কোনও ভুল করেননি কৃষ্ণা। ৩৯মিনিটে আবার বোমাসেরই ৩-১। ডান প্রান্ত ধরে বল ধরে একাই উঠে এসে গোল করে যান বোমাস। বিরতির আগেই ৩-১ করে ফেলা মোহনবাগান বিরতির পর পরই আবার ৪-১ করে ফেলল। এ বার পেনাল্টি বক্সের মধ্যে থেকে কৃষ্ণার ব্যাক পাস। বক্সের মাথা থেকে কোলাসোর ভাসানো বল গোলে ঢুকে যায়। ৬৯ মিনিটে আদ্রিয়ান লুনার পাস থেকে পেরেইরা দিয়াজ গোল করেন ঠিকই, কিন্তু এ সব ম্যাচে দুরন্ত ফিরে আসার জন্য যে মশলা থাকা দরকার, তা কেরালা টিমে ছিল না।
দুরন্ত জয়ের পরও প্রশ্ন কিছু থেকে যাচ্ছে তবু বাগানে… এক, ডিফেন্স। তিন ডিফেন্ডারের বন্ধনীতে ফাঁক থেকে যাচ্ছে অনেকখানি। কেরালার সাহালের গোলটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেল। রাহুলের সেন্টারটা যে সাহাল পেয়ে যেতে পারেন, তা অনুমানই করেননি ম্যাকহিউ-দীপক-প্রীতম-শুভাশিসরা। কেরালার মতো ভুল সব টিম করবে না। দুই, মাঝমাঠে লেনি রড্রিগেস ও জনি কাউকোর যুগলবন্দি নজর কাড়ল না। দু’জনকে একেবারেই ছন্দে মনে হল না। তবে মরসুমের প্রথম ম্যাচ।
মরসুমের প্রথম ম্যাচ কিছু জড়তা, কিছু তালমিলের অভাব থাকবে। কিন্তু শুরু থেকেই বাগান বোমাস-কষ্ণা জুটির দাপট দেখিয়ে দিল। স্কোরলাইন যতই বলুক, ৪-২ জিতেছে হাবাসের টিম, ৬-২ বা ৮-২ হলেও আশ্চর্যের কিছু ছিল না। এই ছন্দ যদি থাকে, ফাঁকফোকর ভরাট যদি করে ফেলতে পারেন বাগান কোচ, গতবার আইএসএল ফাইনালে হারের আক্ষেপ এ বার মিটিয়ে নিতে পারেন কৃষ্ণা-বোমাসরা।
মোহনবাগান: অমরিন্দর, প্রীতম, ম্যাকহিউ, শুভাশিস, দীপক, লেনি, জনি (বিদ্যানন্দ ৭৮), বোমাস (উইলিয়ামস ৭৮), মনবীর, কৃষ্ণা (কিয়ান ৮৮), লিস্টন (প্রবীর ৬৯)।