Richarlison: মাদক কারবারিদের গান পয়েন্টে দাঁড়িয়ে, প্রাণ ভয়ে থরহরিকম্প ব্রাজিলের রিচার্লিসন
'রিচার্লিসন: দ্য আনটোল্ড স্টোরি'র শুরু ব্রাজিলের নোভা ভেনেসিয়া থেকে। মাদক আর কালো টাকার স্বর্গরাজ্য!
দোহা: সেই কিশোর বয়সেই প্রাণ খোয়াতে বসেছিলেন। মাদক কারবারিদের রক্তচক্ষুর সামনে পড়ে যান ব্রাজিলের রিচার্লিসন (Richarlison)। কাতার বিশ্বকাপে যাঁর দুরন্ত গোলে বিস্মিত বিশ্ব। বাইসাইকেল কিকে অসাধারণ গোলটিকে অনেকে চলতি বিশ্বকাপের (Qatar World Cup 2022) সেরা গোল বলেছেন। সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ম্য়াচ দিয়ে ফুটবল বিশ্বে নিজের আগমনী বার্তা দিয়েছেন রিচার্লিসন। সেদিন কোনওক্রমে প্রাণে রক্ষা পান। সমাজবিরোধীদের গান পয়েন্টে দাঁড়িয়ে প্রাণভয়ে ঠকঠক করে কেঁপেছিলেন। দারিদ্র্য, মাদক কারবারি, সমাজবিরোধীদের পাঁক থেকে উঠে এসে ব্রাজিল ফুটবলে (Brazil Football Team) পদ্ম হয়ে ওঠার যাত্রাটা কেমন ছিল। ‘রিচার্লিসন: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’র শুরু ব্রাজিলের নোভা ভেনেসিয়া থেকে। মাদক আর কালো টাকার স্বর্গরাজ্য!
বস্তি এলাকায় জন্ম। সমাজবিরোধী, মাদক কারবারিদের ছোঁয়া বাঁচিয়ে রাখা। সঙ্গে দু মুঠো ভাত বা মাথা গোঁজার ঠাঁই। প্রতিটি দিন আলাদা লড়াই। ওই নরক থেকে বেরোতে অনেকে ফুটবলকে আঁকড়ে ধরেন। জীবন আবর্তিত হয় শুধু ওই গোলাকার চামড়ার বস্তুটির চারপাশে। ভেসে যাওয়ার ভয়ে পারিপার্শ্বিক দিক থেকে চোখ ফেরাতে ফুটবলকেই ধ্যানজ্ঞান করে ফেলেন। ব্রাজিলের বেশিরভাগ ফুটবলারের নেপথ্য কাহিনীটা ঠিক এরকম। রিচার্লিসনের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। বল আঁকড়ে ধরে খালি পেটে ঘুমোতে যাওয়া অভ্যাসে দাঁড়িয়েছিল। পরিবারে পাঁচ সন্তানের মধ্যে রিচার্লিসন বড়। বাবার ছোট একটি সেলুন। যে নোভা ভেনেসিয়া এলাকায় রিচার্লিসনের জন্ম, জায়গাটি মাদক এবং কালো টাকার কারবারিদের রমরমার জন্য পরিচিত।ব্রাজিলের রিচার্লির কথায়, “আমার অধিকাংশ বন্ধু রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাদক বেচত। সেটিই ছিল প্রচুর টাকা রোজগার করার সহজ উপায়। আমি জানতাম ওটা ঠিক নয়। তাই আমি চকোলেট, আইসক্রম বেচতাম। গাড়ি পরিষ্কার করেছি। এভাবেই মাকে সাহায্য করার চেষ্টা করতাম।” ছোট ছোট ভাইবোনদের প্লেটে খাবার তুলে দিতে সারাদিনের হাড়ভাঙা পরিশ্রম।
তখন রিচার্লিসন ১৪ বছরের কিশোর। বাড়ির সামনের রাস্তায় বল নিয়ে অন্যান্য দিনের মতোই খেলায় ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ কয়েকজন এসে মাদক চোর সন্দেহে তাঁর মাথায় বন্দুক ঠেকায়! মাদক পাচারকারীদের কাছে খুন জখম কোনও ব্যাপার নয়। রিচার্লসন বলেন, “ওই মুহূর্তে ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম। ট্রিগারে চাপ দিলেই সব শেষ হয়ে যেত। তবে সেদিনের মতো লোকগুলো ছেড়ে দেয়। হুমকি দেয়, পরে আমাকে বা আমার বন্ধুদের কখনও দেখলে গুলি করে দেবে।” একদিন বাবা এসে সাতবছরের রিচার্লিসনের হাতে ফুটবল তুলে দিয়েছিলেন। ব্রাজিল ফুটবলারের বিশ্বাস, বাবার দেওয়া সেই উপহার তাঁকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। অতীতের স্মৃতি ঘেঁটে রিচার্লি বলেছেন, “আমার যখন সাতবছর বয়স, বাবা দশটি বল উপহার দেন। ওনার এতগুলো বল উপহার দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। কিন্তু চাইতেন আমি বড় ফুটবলার হই। বন্ধুদের সঙ্গে রাস্তার উপর ফুটবল খেলতাম। ফাবেলার মতোই বস্তি এলাকা সেটি।”
এক ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে রিচার্লিসনের সামনে আবির্ভূত হন ফুটবল দেবতা। ছেলেটির ফুটবল স্কিলে মুগ্ধ হয়ে এক জোড়া বুট কিনে দেন এবং আমেরিকার মিনেইরো নামে এক সেকেন্ড ডিভিশন ক্লাবে নিয়ে যান। নরক থেকে স্বর্গে উত্থানের প্রথম ধাপ। এরপর ফ্লুমিনেনসে থেকে ওয়ার্টফোর্ড, এভার্টন এবং চলতি বছরে ৬০ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে রিচার্লিকে দলে নিয়েছে টটেনহ্যাম। বিশ্বকাপে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্নও পূরণ হয়েছে। এখনও অনেকটা পথ বাকি। যুগে যুগে রিচার্লিসনদের শূন্য থেকে উত্থানের কাহিনী অনুপ্রেরণার মূলে।