AIFF AGM: কুশল কি নেশাগ্রস্থ ছিলেন, প্রশ্নে তোলপাড় ফেডারেশনের সভা
অন্য সময় হলে কুশল-বিতর্ক হয়তো ধামাচাপা পড়ে যেত। হয়তো, ফেডারেশন সচিবকে প্রশ্নের মুখে পড়তেই হত না। কিন্তু এশিয়ান কাপের আবহই তাঁকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। মেয়েদের এশিয়ান কাপের জন্য এএফসির প্রায় সব বড় মাপের কর্তারাই মুম্বইয়ে হাজির ছিলেন। যে হোটেলে ফেডারেশন কর্তারা উঠেছিলেন, সেখানেই রাখা হয়েছিল তাঁদের। শুধু তাই নয়, এএফসি বেশ কিছু বড় কর্তা এআইএফএফের সাধারণ সভায় আমন্ত্রিতও ছিলেন। তাঁদের সামনেই ঘটেছে পুরো ঘটনা।
কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়
শনিবার ফেডারেশনের (AIFF) সভা এক আশ্চর্য ঘটনার সাক্ষী থাকল। যাকে কলঙ্কিত অধ্যায় বললেও ভুল হবে না। আর তা ঘিরে রীতিমতো তোলপাড়় ভারতীয় ফুটবল। দু’দিন আগে, মুম্বইয়ের সভার ওই ঘটনার কেন্দ্রে খোদ সচিব কুশল দাস (Kushal Das)। সভায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন রাজ্যের অনেক কর্তার দাবি, ফেডারেশন সচিব নাকি নেশাগ্রস্থ ছিলেন। এতটাই অপ্রকৃতস্থ অবস্থায় দেখা গিয়েছে তাঁকে যে, ভালো করে নাকি কথাও বলতে পারছিলেন না। সভা চলাকালীনই যা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। পরিস্থিতি এমনই জটিল হয়ে যায়, প্রেসিডেন্ট প্রফুল প্যাটেলকে (Praful Patel) আসরে নামতে হয়। ওই ঘটনার জেরেই রবিবার মুম্বইয়ে মেয়েদের এএফসি এশিয়ান কাপের ফাইনালে হাজির ছিলেন না কুশল। এমনও শোনা যাচ্ছে, তাঁকে নাকি পদত্যাগ করতেও বলা হয়েছে। অবশ্য এই কলঙ্ক নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে নারাজ।
অন্য সময় হলে কুশল-বিতর্ক হয়তো ধামাচাপা পড়ে যেত। হয়তো, ফেডারেশন সচিবকে প্রশ্নের মুখে পড়তেই হত না। কিন্তু এশিয়ান কাপের আবহই তাঁকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। মেয়েদের এশিয়ান কাপের জন্য এএফসির প্রায় সব বড় মাপের কর্তারাই মুম্বইয়ে হাজির ছিলেন। যে হোটেলে ফেডারেশন কর্তারা উঠেছিলেন, সেখানেই রাখা হয়েছিল তাঁদের। শুধু তাই নয়, এএফসি বেশ কিছু বড় কর্তা এআইএফএফের সাধারণ সভায় আমন্ত্রিতও ছিলেন। তাঁদের সামনেই ঘটেছে পুরো ঘটনা। এশিয়ান ফুটবলে প্রফুল এখন প্রভাবশালী কর্তা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট এ দেশে আয়োজন করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছেন। সেই তাঁরই ঘরে এমন কাণ্ড দেখে এএফসি কর্তারাও তাজ্জব। যে কারণে কুশল ইস্যু বিরাট আকার নিয়েছে।
শনিবার কী ঘটেছিল? ৫ ফেব্রুয়ারি মুম্বইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে এআইএফএফের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়ম মতো, সমস্ত রাজ্যের প্রতিনিধিরাই সেখানে ছিলেন। সেই সভায় কুশল সশরীরে উপস্থিত হননি। ঘটনা হল, তিনি মুম্বইয়ের ওই হোটেলেই ছিলেন। তাও কেন অংশ নেননি কুশল? খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, সভার আগে কুশল জানিয়েছিলেন, তিনি অসুস্থ বোধ করছেন। কোভিডের উপসর্গ নাকি দেখা দিয়েছে শরীরে। সদস্যদের সুরক্ষার কারণেই ভার্চুয়ালি মিটিংয়ে অংশ নেবেন। কথা মতো তাই-ই করেছিলেন কুশল। আর সেখানেই বিপত্তি। ভার্চুয়ালি কুশলকে দেখে অনেকেরই নেশাগ্রস্থ মনে হয়েছে।
ফেডারেশনের বার্ষিক সাধারণ সভার শুরু থেকেই বিপত্তি। প্রতি বছর বার্ষিক সভা শুরুর আগে সেই বছরে প্রয়াত ফুটবলারদের উদ্দেশ্যে নীরবতা পালন করা হয়। নাম লেখা যাবে না এই শর্তে এক কর্তা জানাচ্ছেন, নীরবতা পালনের সময় ফেডারেশন সচিবের কাছে প্রয়াত ফুটবলারদের তালিকাই ছিল না। এক একটি রাজ্য সংস্থা এক একজন প্রয়াত ফুটবলারের নাম ঘোষণা করে। ফলে সভার শুরুতেই একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এর জেরে তীব্র অস্বস্তিতে পড়ে যান প্রফুল।
সভা যত গড়ায়, তত শুরু হয় গোলমাল। আর তার কেন্দ্রে কুশলই। ফেডারেশন সচিবকে কথা বলার সময়ও বেশ অসংলগ্ন মনে হয় সদস্যদের। যা দেখে মেজাজ হারান ফেডারেশনের অনেক কর্তা। প্রফুলের কাছে সরাসরি অভিযোগ জানাতে দ্বিধা করেননি তাঁরা। তারই জের পড়ে রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) মেয়েদের এএফসি এশিয়ান কাপের ফাইনালে। রবিবার সকালেই দিল্লিতে ফেরত পাঠানো হয় কুশলকে। শোনা যাচ্ছে, শনিবারের মিটিংয়ের পর নাকি তীব্র চটেছিলেন এআইএফএফ প্রেসিডেন্ট। সভায় কেন তিনি অপ্রকৃতস্থ ছিলেন, তার জবাবও চাওয়া হয়। এমনকি এও বলা হচ্ছে, এআইএফএফ সচিবকে নাকি পদত্যাগের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
হালফিলে প্রফুল ফেডারেশনে বেশ কোণঠাসা। সমর্থনের জমি ভালোই নড়বড়ে। দীর্ঘদিন কোনও নির্বাচন হয়নি ফেডারেশনে। ১২ বছর ধরে প্রেসিডেন্ট পদে নিরঙ্কুশ বহাল তিনি। যা নিয়ে এতদিন ফিসফাস থাকলেও এখন অনেকেই বিরুদ্ধাচারণ শুরু করেছেন। নির্বাচন দাবি করা সঙ্গে ফেডারেশনের অন্দরে প্রফুল বিরোধী লোকের সংখ্যা বাড়ছে। যা বেশ চিন্তায় রেখেছে প্রেসিডেন্টকে। আর তারই মধ্যে কুশল-কাণ্ড চাপ বাড়াচ্ছে। প্রফুল এখন মান রাখবেন না কুল, তাই দেখার।