কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়
নেই নেই নেই। ইস্টবেঙ্গলে যেন কিছুই নেই। ভালো ফুটবলার নেই, প্রত্যাশাপূরণের সম্ভাবনা নেই, সাফল্যের ধারেকাছে নেই। পেশাদার কর্তা? আশ্চর্যের হল, তাও নেই! এই ইস্টবেঙ্গলের বাস যেন নেই রাজ্যে। আইএসএলে চরম খারাপ পারফরমেন্স ফুটবলারদের। মাঠের বাইরে কর্তাদের পারফরম্যান্সও তেমনই খারাপ। দিনের পর দিন টিম জয়ের মুখ দেখছে না। আর কর্তাদের দায়সারা মনোভাবে ট্রান্সফার ব্যানের গেরো থেকে বেরোতে পারছে না লাল-হলুদ। আশা হারাচ্ছেন সমর্থকরাও। কলকাতায় খেলা থাকলে এর আগে প্রিয় দলের ম্যাচের দিন মাঠে ভিড় জমাতেন সমর্থকরা। সব কাজ ফেলেও ছুটতেন দলের জন্য গলা ফাটাতে। এখন সে সব হুজুগও যেন কমেছে। কিন্তু এ কোন ইস্টবেঙ্গল?
কবে ঘুম ভাঙবে কর্তাদের? নাকি জেগে জেগে ঘুমোচ্ছেন তাঁরা? ওমিদ সিং ইস্টবেঙ্গলের জার্সি পরেননি। অথচ সেই ইরানের ফুটবলারের জন্যই নিয়ম করে ৬ মাস অন্তর অন্তর বেকায়দায় পড়ে লাল-হলুদ। ওমিদ ইস্যুর জল গড়ায় ফিফার ক্রীড়া আদালতে। যে ঘটনায় গত অগাস্টেই হলুদ কার্ড দেখেছিল ইস্টবেঙ্গল। তাও হুঁশ ফেরেনি কর্তাদের! ক্লাবকে বলা হয়েছিল, পরবর্তী ট্রান্সফার উইন্ডোর আগে ওমিদের বকেয়া না মেটালে নির্বাসনের কবলে পড়বে ইস্টবেঙ্গল। ৫ মাসেও কর্তাদের ঘুম ভাঙল না! আর তাতে যা হওয়ার তাই-ই হল।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে ইরানের ব্যাঙ্কে আর্থিক লেনদেনে অনেক সমস্যা রয়েছে। ৬ মাস আগেই অন্য দেশের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পাঠিয়েছিলেন ওমিদ। দেখা যায়, সেটা ওমিদের নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নয়। ওই ফুটবলারের বাবার অ্যাকাউন্ট। ওমিদের নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না হওয়ায় বকেয়া মেটাতে পারেনি শ্রী সিমেন্ট। চরম হুঁশিয়ারি পাওয়ার পরও এই ক’মাসে ওমিদের বকেয়া মেটানোর কোনও উদ্যোগই নিলেন না ক্লাব কর্তারা? সমস্যা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই পড়ে রইল। নতুন বিদেশি দলের সঙ্গে অনুশীলন করছেন, অথচ তাঁর নাম নথিভুক্তই করানো যাচ্ছে না।
ক্লাব কর্তাদের এ হেন আচরণে ঘনিষ্ঠমহলে বিরক্তি প্রকাশও করেছেন ইনভেস্টর ইমামির কর্তারা। ওমিদের বকেয়া মেটানোর জন্য উঁচু পর্যায়ে আলোচনা চালাচ্ছেন ক্লাব কর্তারা। তাতে নাকি সহযোগিতা করছেন ইনভেস্টর কর্তারাও। ইনভেস্টরদের লিগ্যাল সেল আসরে নেমেছে। তাঁরাও বুঝে গিয়েছেন, দলের ব্যর্থতার দায় তাঁদের উপর এসেই পড়বে। তড়িঘড়ি জট কাটানোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল। ওমিদের আইনজীবীর সঙ্গেও আলোচনা চালাচ্ছে ক্লাব। আগের ইনভেস্টর শ্রী সিমেন্ট জানিয়ে দিয়েছে, ওমিদ বকেয়া পেয়ে গিয়েছেন, সেই চিঠি দেখালেই তারা ক্লাবকে টাকা দিয়ে দেবে। সরাসরি আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত ইস্যু থেকে সরে গিয়েছে শ্রী সিমেন্ট। ক্লাবকেই এখন পুরোটা একার হাতে সামলাতে হবে। শ্রী সিমেন্ট অবশ্য বকেয়া সেই ১ কোটি টাকা ক্লাবকে ফিরিয়ে দেবে। তবে তার জন্য চাই ওমিদের বকেয়া প্রাপ্তি স্বীকারের চিঠি।
মরসুম শুরুর আগে কোচ স্টিফেন কনস্ট্যান্টাইন আশ্বস্ত করে সমর্থকদের বলেছিলেন, ‘দল ব্যাপক সাফল্য না পেলেও, এমন ফুটবল খেলবে যা নিয়ে সমর্থকরা মরসুম শেষে গর্ব করতে পারবে।’ ব্রিটিশ কোচের সেই প্রতিশ্রুতি যে ভিত্তিহীন, তা বুঝে গিয়েছেন সমর্থকরাও। কনস্ট্যান্টাইনের জায়গায় অন্য কোনও কোচ হলে, এতদিনে হয়তো তাঁর ছুটি হয়ে যেত। পাঁচ মাস কেটে গেলেও, তাঁর স্ট্র্যাটেজি এখনও রপ্ত করতে ব্যর্থ ফুটবলাররা। কিংবা বলা যেতে পারে, এমন কোনও স্ট্র্যাটেজি স্টিফেন খাড়া করতে পারেননি, যা ধারাবাহিক জয় এনে দিতে পারে টিমকে। টানা ব্যর্থতা সত্ত্বেও স্টিফেন থেকে যাচ্ছেন ইস্টবেঙ্গলে, কারণ নতুন কোচ এনে আর আর্থিক বোঝা বাড়াতে চাইছে না ইনভেস্টররা। টিমের যখন ভরাডুবি চলছে, তখন কর্তারাও ‘হচ্ছে, হবে’ বলে কাটিয়ে দিচ্ছেন। কোচ হোক বা কর্তা, ইস্টবেঙ্গল জুড়ে শুধুই যেন ‘প্রতিশ্রুতি’। একটা দিশাহীন দলের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা অবশ্য সময়ই বলবে।