অভিষেক সেনগুপ্ত
এটিকে মোহনবাগান-১ : এফসি গোয়া-১
(এডু ৭৫) (ইশান ৮৫)
গোয়া : তাঁর চকিত বাঁক নেওয়া, তীব্র গতির ফ্রি কিকগুলোতে কতটা বিষ মাখানো থাকে? হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানবপ্রাচীর বলতে পারবে। আর পারবেন প্রতিপক্ষ কিপার। রবি-রাতে ফতোরদায় বক্সের সামান্য বাইরে থেকে ৭৫ মিনিটে এডু গার্সিয়ার নেওয়া ফ্রি কিকটাই থেকে যেত আলোচনায়। যদি না সুপার-সাব ইশান পন্ডিতা ১-১ করে দিতেন।
FULL-TIME | #FCGATKMB
Ishan Pandita helps @FCGoaOfficial salvage a point against a gritty @atkmohunbaganfc!#HeroISL #LetsFootball pic.twitter.com/Tzio2sMRGk
— Indian Super League (@IndSuperLeague) January 17, 2021
কিছু ম্যাচ থাকে, যার ক্যাচলাইন হয় এক, আর স্কোরলাইন এক। এটিকে মোহনবাগান বনাম গোয়ার ম্যাচটাকে দেখা হচ্ছিল দুই টিমের দুই স্কোরারের লড়াই হিসেবে। রয় কৃষ্ণা ভার্সেস ইগর অ্যাঙ্গুলো। রবিবার অ্যাঙ্গুলো খেললেনই না। আর কৃষ্ণা আটকে থাকলেন বিপক্ষ ডিফেন্ডারদের জালে। তবু ম্যাচটা তীব্র উত্তেজনা ছড়াল। তিন পয়েন্টের জন্য মরিয়া তাগিদের জন্য।
গোয়া হোক আর মোহনবাগান, এই আইএসএল জানে, খেলাটা শুরুই হবে দ্বিতীয়ার্ধ থেকে। প্রথমার্ধে বিপক্ষকে দেখে নেওয়া, মেপে নেওয়া। বিরতির পর বল দখলে রাখতে রাখতে প্রতিপক্ষের জাল খুঁজে বের করা। এই ম্যাচ কিছুটা হলেও ব্যতিক্রম। গোলশূন্য প্রথর্মাধও যথেষ্ট মশলায় মাখা। শুরু থেকেই আগ্রাসী হয়ে মাঠে নেমেছিল আন্তোনিও হাবাসের টিম। আসলে বিপক্ষের স্প্যানিশ কোচ জুয়ান ফেরান্দোর বিরুদ্ধে শুরুতেই গোল তুলে নিতে চেয়েছিলেন হাবাস। ২৭ মিনিটে গোলও এসে যেতে পারত। যদি এডু গার্সিয়ার তোলা ক্রস থেকে শুভাশিস বসুর নেওয়ার হেডটা ক্রসবার ছুঁয়ে না বেরিয়ে যেত।
It’s the CROSSBAR again! ?
Almost the match-winning goal of #FCGATKMB ?#ISLMoments #HeroISL #LetsFootball pic.twitter.com/uGpfbPOm8v
— Indian Super League (@IndSuperLeague) January 17, 2021
গোয়া শুরুতে যতই নিরামিষ দেখাক, দ্রুত মাঝমাঠের দখল নিয়ে ফেলেছিল। ৩১ মিনিটে সেরিটন ফার্নান্ডেজের চিপ পোস্টে লেগে ফেরে। তা খুব একটা বিষাক্ত না হলেও পরের দিকে ফেরান্দোর টিম কিন্তু মোহনবাগানকে বেশ চাপেই রেখেছিল। মাঠ জুড়ে খেলা, উইংয়ে ধরে দৌড়, সবুজ মেরুন বক্সের পেনিট্রেট করা। ওই পর্বে মনে হচ্ছিল যে কোনও সময় গোল করে ফেলবে গোয়া। বিরতির পরও ওই ঝাঁঝটা নিয়েই নেমেছিল গোয়া। ফতোরদায় রবিবার নায়ক হতে পারতেন সেরিটন ফার্নান্ডেজ। যদি তাঁর দ্বিতীয় শটটা পোস্টে লেগে না ফিরত। দুরন্ত ফর্মে থাকা বাগানের কিপার অরিন্দমও বুঝতে পারেননি সেরিটনের শটটা এতটা সুইং করবে।
গোয়ার চাপে যখন হাঁসফাঁস করছে সবুজ-মেরুন, বলই রাখতে পারছে না পায়ে, ঠিক তখনই খেলাটা ঘুরে যায়। ৭৫ মিনিটে বক্সের সামান্য আগে রয় কৃষ্ণাকে পিছন থেকে ফাউল করেন জেমস ডোনাচি। রেফারি ফ্রি কিক দেন। সেখান থেকেই এডু গার্সিয়ার অসাধারণ গোল। হঠাত্ বাঁক খাওয়া, চকিতে গোলে ঢুকে যাওয়া।
আরও পড়ুন:রান করবেনই, বাবাকে কথা দিয়েছিলেন সুন্দর
যে কোনও কঠিন ম্যাচ নিমেষে পাল্টে দেয় একটা গোল। মোহনবাগান ১-০ করার পর মনে হয়েছিল ওখানেই নিভে যাবে গোয়ার আগুন। কার্যত হল উল্টোটা। ০-১ থেকে সমতা ফেরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন কোচ ফেরান্দো ৮০ মিনিটে পর পর দুটো পরিবর্ত নেন। জেসুরাজের বদলে নামান ইশান পন্ডিতাকে, লেনি রড্রিগসের জায়গায় মাঠে নামেন প্রিন্সেটন রেবেলো। ফেরান্দোর ছকে গোয়া ১-১ পাঁচ মিনিটের মধ্যে। ৮৫ মিনিটে ডান দিক থেকে এডু বেদিয়ার নেওয়া কর্নার থেকে জেমস ডোনাচির হেড প্রথমে গোললাইন সেভ করেন প্রীতম কোটাল। ফিরতি বল থেকে গোল ইশানের।
হাবাস প্রথম দফার মতো এই ম্যাচটাও জিততে চেয়েছিলেন। কিন্তু ড্র করার ফলে ১১ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের দুইয়েই থেকে গেল মোহনবাগান। ১২ ম্যাচ খেলে তিনে থাকা গোয়ার পয়েন্ট ১৯।
খেলার এই এক মুশকিল। ম্যাচের সব কথা স্কোরলাইন সব সময় বলে না। শুধু হাইলাইটসেই সন্তুষ্ট যেন! ১-১ হওয়ার পর ডেভিড উইলিয়ামসের পরিবর্ত হিসেবে নেমে ৮৬ মিনিটে নামা মনবীর সিং ফ্লিক হেডে যদি গোলটা করে ফেলতেন?
খেলার এই এক সুবিধাও! ম্যাচে মনবীরের মতো অনেকের অপারগতা সব সময় তুলেও তো ধরে না স্কোরলাইন!
এটিকে মোহনবাগান: অরিন্দম, প্রীতম, তিরি, সন্দেশ, শুভাশিস, প্রবীর, এডু (জাভি ৮১ মি), ম্যাকহিউজ, সাহিল (জয়েস ৬৩), উইলিয়ামস (মনবীর ৮৬), কৃষ্ণা।