কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়
লাল-হলুদ জীবন তেমন আলো ঝলমলে ছিল না। মাঠের বাইরেই কেটেছে বেশিরভাগ সময়। যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন, মনে রাখার মতো মুহূর্ত দিতে পারেননি। লাল-হলুদ জার্সিতে একটা ম্যাচে অত্যন্ত খারাপ কিপিংয়ের জন্য তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। সেই উবেইদ (Ubaid CK) সিকেই কিনা অতীত ভুলে কলকাতাতেই খুঁজে পেলেন জীবনের সেরা মুহূর্ত।
কিশোর ভারতীতে তখন তুমুল উন্মাদনা। দর্শক সে ভাবে না থাকলে কী হবে, উত্সবে খামতি ছিল না। আই লিগের ফাইনাল বলে কথা। কেরালা থেকেও বেশ কিছু দর্শক এসেছিলেন কলকাতায় ম্যাচ দেখতে। তাঁদের সামনেই আই লিগ (I League) কেরালাকে (Gokulam Kerala FC) প্রথমবার ভারতসেরা করলেন উবেইদ। ম্যাচের পর যখন ফোনে ধরা হল তাঁকে, ড্রেসিংরুমে তুমুল হইচই। তার মধ্যে কোনওরকমে গোকুলমের কিপার বললেন, ‘এই অনুভূতির কোনও ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। জীবনের সেরা সাফল্য। এত তৃপ্তি আর কখনও পাইনি।’
ওঠা-পড়া কম ছিল না ট্রাউয়ের বিরুদ্ধে আই লিগ ‘ফাইনালে’। বিদ্যাসাগরের গোলে প্রথমার্ধের মাঝামাঝি পিছিয়েও পড়েছিল গোকুলাম। তখন কী চলছিল মাথায়? উবেইদের ঝটতি জবাব, ‘নিজেদের উপর আস্থা হারাইনি। পিছিয়ে যখন পড়়েছিলাম, জানতাম সেরাটা দিতে পারলে ঠিক ফিরে আসতে পারব। বিরতিতে কোচ বলেছিলেন, যে কোনও মুহূর্তে খেলা ঘুরে যেতে পারে। তোমরা শুধু মাথা ঠান্ডা রেখো।’
আরও পড়ুন: আই লিগে ভারতসেরা বিজয়নের কেরালা
তখন লাল-হলুদের বুকে একটুকরো কেরালা জন্ম নিয়েছিল। জবি জাস্টিন, ভিপি সুহের, মির্শাদ মিচুদের সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে থাকতেন উবেইদ। দুটো মরসুম লাল-হলুদকে সাফল্য দিতে না পারলেও কোথাও একটা আক্ষেপ খাঁচাবন্দি ছিল এতদিন। মনে মনে তখন থেকেই সাফল্যের দরজা খুঁজছিলেন উবেইদ। ফোনের ওপার থেকে উচ্ছ্বসিত গোকুলামের কিপার বললেন, ‘বহুদিন একটাই স্বপ্নই দেখছি। অন্তত একবার চ্যাম্পিয়ন্স পোডিয়ামে দাঁড়াব। এতদিনে সেই স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পেলাম।’
কঠোর অনুশীলনের বিকল্প কোনও কিছুই হয় না। সে ফুটবল হোক কিংবা অন্য কিছু। কেরলের গোলকিপার উবেইদের উত্থানের গল্পটাও ঠিক সেরকমই। ভারতীয় ফুটবলের পরিচিত মুখ। তবু কখনও সেরাদের তালিকায় ঠাঁই পাননি। পারফরম্যান্স গ্রাফ বরাবর ওঠানামা করেছে। এই ভালো তো এই খারাপ। ‘ধারাবাহিকতার অভাব’ এই শব্দটাই জুড়ে গিয়েছিল উবেইদের নামের পাশে। তবু হাল ছেড়ে দেননি তিনি। সাফল্যের কৃতিত্ব কোচ, পরিবার আর কেরালাবাসীকে দিচ্ছে উবেইদ।
আই লিগ তো হল। এই উবেইদ এতেই থামতে চান না। কেরালার কিপার স্বপ্ন দেখছেন আইএসএলের দুনিয়ায় পা দেওয়ার।