মারগাও: সমুদ্রের কনসার্ট শোনাতে শোনাতে ঝাপটা মারবে জলো বাতাস। সোনালি বালিরাশিতে পড়ে পিছলে যাবে সূর্যরশ্মি। বিচের গায়ে ঝুপড়ি হোটেলে চোখে পড়বে বাংলায় লেখা সাইনবোর্ড। আলুপোস্ত, চুনোমাছের ঝাল থেকে শুরু করে আমের চাটনি— মেনু কার্ডে মিলবে সব। গোয়ান ফিসকারি, পাব, বার, গিটার সব সাজিয়ে হাতছানি দেবে কোলবা বিচ। অনন্ত জল ভেঙে উঠে আসা কুমুস-সূর্য হোক আর নক্ষত্রখচিত রাত, বাঙালি ঠিক পাবেন। দীঘা, মন্দরমণির মতোই কোলবা বিচ প্রিয় ডেস্টিনেশন। শনিবার ওই কোলবায় দিনভর হয়তো ‘সামনে কারা, এগিয়ে কারা, জিতল কারা’ স্লোগান সমুদ্রের গর্জনও থামিয়ে দেবে। হয়তো উৎসব হবে রাতে। টালা থেকে টালিগঞ্জ, বালি থেকে বেলাঘাটার আপাতত ‘ফার্স্ট প্রায়োরিটি’ মারগাওয়ের ফতোরদা স্টেডিয়াম। বিস্তারিত TV9Bangla-য়।
সব শহরেরই নিজস্ব পরিচিতি থাকে। সমুদ্র, বিচ, চার্চ, ফেনির মতো গোয়া আসলে বাইকের রাজ্য। গোয়ায় বেড়াতে গেলে বিমানবন্দরে নেমে অধিকাংশই খোঁজে ভাড়ার বাইক। দ্বিচক্রযানে সহজেই ঢুঁ মারা যায় আনাচেকানাচে, অলিতে-গলিতে। শনিবার সকালে এমন স্কুটার মিছিল দেখলে অবাক হবেন না যেন। জানবেন, তরুণ-যুবক-প্রবীণ ছুটছেন সবুজ-মেরুন নেশায়। সেই ২০১৯-২০ মরসুমে মোহনবাগান আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আর সাফল্য নেই বাংলা ফুটবলে। একবার আইএসএল ফাইনালে পা দিলেও স্বপ্ন ছোঁয়া হয়নি। এ বার, হবে!
এ বার হবে? এটিকে না মোহনবাগান, তর্কের শেষ নেই। এটিকে রিমুভ দাবির। কর্তাদের উপর ক্ষোভের। এই ফাইনাল তবে কার? এটিকে? মোহনবাগান? আপাতত মুলতুবি থাকবে ৯০ মিনিটের জন্য। স্বপ্ন, ইচ্ছে, তাগিদ, গর্জন, গান, স্লোগান সব মিলেমিশে যাবে গ্যালারিতে। ফাইনাল এমনই হয়। অন্তত দুই প্রধানে। শনিবারের মেগা ফাইনালে বাগানের সামনে সুনীল ছেত্রীদের বেঙ্গালুরু এফসি। কলকাতার সঙ্গে বেঙ্গালুরুর ফুটবল দ্বৈরথ শেষ কয়েক বছরে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। বিশেষ করে দুই শহরের সমর্থকরাই ফুটবলের জন্য নিজেদের উজাড় করে দেন। আই লিগে ছিল। আইএসএলেও আছে। বিএফসির বিরুদ্ধে এটিকে-এমবির আইএসএল ফাইনালে আবেগ-মেজাজ-চোখরাঙানি থাকবে ভীষণ ভাবে। ৮ বছর আগে কান্তিরাভায় বেঙ্গালুরু এফসির ডেরা থেকে মূল্যবান ১ পয়েন্ট ছিনিয়ে আই লিগ জিতেছিল মোহনবাগান। সবুজ-মেরুনের আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথেও এ বারও বাধা সেই বেঙ্গালুরু। কান্তিরাভার পর ফাতোরদার রংও সবুজ-মেরুন করতে চান প্রীতম কোটালরা।
আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নে বুঁদ এটিকে মোহনবাগান শিবির। লিগ শিল্ড হাতছাড়া হওয়ার পরই চ্যাম্পিয়নশিপ খেতাবকে পাখির চোখ করছিল বাগান। এ বার আইএসএলে মোহনবাগান-বেঙ্গালুরু ফল ১-১। কান্তিরাভায় সুনীলদের হারালেও, যুবভারতীতে বাগানকে হারিয়ে বদলা নিয়েছিলেন ব্লু আর্মি। যে রয় কৃষ্ণা গত বছর সবুজ-মেরুনের প্রাণ ভোমরা ছিলেন, সেই তিনিই এ বার নামবেন উল্টো দিকে। রয় কৃষ্ণা, প্রবীর দাস, সন্দেশ ঝিঙ্গানকে নিয়ে ভাবনা আছে, ভীতি নেই। মোহনবাগান তো বটেই, ইস্টবেঙ্গলেরও কেউ কেউ চাইছেন ট্রফি আসুক পড়শি ক্লাবে। খেতাব আসুক বাংলায়। এটিকে মোহনবাগানের সমর্থনে গোয়া পাড়ি দিয়েছেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও।
ফাইনালের আগে বাগান শিবিরের ছবিটা কেমন? দলে কোনও চোট-আঘাত নেই। ফিরেছেন আশিক কুরুনিয়ান। পুরোদমে অনুশীলনও করছেন। ফাইনালে আশিক খেলবেন কিনা, শনি-সকালে ঠিক করবেন ফেরান্দো। তবে লিস্টন কোলাসো, পুইতিয়া, মনবীর সিং, গ্লেন মার্টিন্স, হামতে, কিয়ান নাসিরির মতো তরুণরা ভালো পারফর্ম করেছেন আইএসএলে। রক্ষণে অভিজ্ঞ প্রীতম কোটাল, শুভাশিস বসু নির্ভরতা দিচ্ছেন। তিন কাঠির তলায় দুরন্ত বিশাল কাইথ। কাপ জয় থেকে একধাপ দূরে দাঁড়িয়ে প্রীতম, শুভাশিসরা ফোকাসড।
চেনা প্রতিপক্ষ। পুরনো সতীর্থ কৃষ্ণা-প্রবীর-সন্দেশরা উল্টো দিকে। বাগান অধিনায়ক প্রীতম বলছেন, ‘বন্ধুত্ব মাঠের বাইরে। ৯০ মিনিট ওরা প্রতিপক্ষ। ওদের থামানোই আমাদের কাজ। কৃষ্ণা বিপজ্জনক ফুটবলার। ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে। নজরে রাখব।’
চোটগ্রস্থ জনি কাউকোও দলের সমর্থনে ফিনল্যান্ড থেকে গোয়ায় এসেছেন। ফাইনালের আগে টিমগেমকেই ফোকাস করছেন ফেরান্দো। দিমিত্রি পেত্রাতোস, হুগো বোমাস, স্লাভকো দামজানোভিচ, কার্ল ম্যাকহিউরা তৈরি সেরাটা দেওয়ার জন্য। যদি পারেন, ফতোরদা স্টেডিয়ামের সামনে থেকে শুরু হবে বিজয় উৎসব। থামবে মোহনবাগান ক্লাবে এসে। এমন উৎসব বোমাস, ম্যাকহিউরা দেখেননি।