প্যারিস: ব়্যাঙ্কিং কিংবা জনসংখ্যা, কোনও কিছু দিয়েই একটা ম্যাচকে মাপা যায় না। এমনকি, ইতিহাস, টিমের গভীরতা, সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স দিয়েও নয়। সব কিছুতে তুচ্ছ করে দিয়ে নর্থ ম্যাসিডোনিয়া (North Macedonia) নামের এক দেশ আলোড়ন ফেলে দিল ফুটবল বিশ্বে। ৬৭ ব়্যাঙ্কিং যাদের, মেরেকেটে ২১ লক্ষও যাদের জনসংখ্যা নয়, তারাই কিনা ছুটি করে ইতালির! কাতার বিশ্বকাপে (FIFA World Cup) দেখা যাবে না আজুরিদের। বৃহস্পতিবার রাতে পালেরমোর স্তাদিও বারবেরা ইতিহাস তৈরি নর্থ ম্যাসিডোনিয়া। প্রাক বিশ্বকাপের প্লে-অফ ম্যাচের ইনজুরি টাইমে ২৫ গজ দূর থেকে আচমকা শটে গোল করে দেন আলেকসান্দার ত্রাজকোভস্কি। রবের্তো মানচিনির হাত ধরে ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়ে নতুন যাত্রা শুরু করেছিল ইতালির ফুটবল। সেই তারাই আর একবার চোকার্স হয়ে থাকল বিশ্ব ফুটবলে। ২০১৭ সালে সুইডেনের কাছে হেরে রাশিয়া বিশ্বকাপের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। চার বছর পর আবার একই ঘটনা। বিপর্যয়ের এই ইতিহাস আরও যন্ত্রণার।
গোল করেছিলেন ত্রাজকোভস্কি? নাকি স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন পুরো ইতালির হৃদপিণ্ড? পালেরমোর স্টেডিয়াম মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। সারা ম্যাচে যে টিম বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সেই ঢুকতে পারেনি, ৪৫ মিনিটের আগে ইতালির গোলমুখী শটই ছিল না, ১১জন মিলে নিজেদের ডিফেন্সেই অবরুদ্ধ হয়েছিল যে টিম, তারাই কিনা কাতার বিশ্বকাপের সূচি কিছুটা বদলে দিল! ফুটবল বোধহয় এই রকমই। ব়্যাঙ্কিং, জনসংখ্যা, ফুটবলারদের অভিজ্ঞতা, স্কিল এ সব কিছু দেখে না। লড়াই যার বেশি, সাহস যে দেখায়, স্বপ্ন যাকে ঘিরে থাকে, ইতিহাসও সঙ্গ দেয় তার। এই নর্থ ম্যাসিডোনিয়া এ বার খেলবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালের বিরুদ্ধে। ২৯ মার্চ পার্থে প্লে-অফ ফাইনালে আর একটা অঘটন যদি ঘটাতে পারে, বিশ্বকাপের গ্রহে ঢুকে পড়বে বোয়ান মিলোভস্কিরা।
সারা ম্যাচ দখলে ছিল ইতালিরই। একের পর এক আক্রমণ ভোঁতা করে দিচ্ছিলেন ম্যাসিডোনিয়ার রায়ো ভলক্যানোতে খেলা গোলকিপার স্টোল দিমিত্রিভস্কি। প্রথমার্ধ গোলশূন্য ছিল। সুযোগগুলো যদি কাজে লাগাতে পারত ইতালি, অন্তত ২-০ স্কোরলাইন হত। বিরতির পরও একই ছবি। ইতালি আগ্রাসী, আরও রক্ষণাত্মক ম্যাসিডোনিয়া। সারা ম্যাচে ম্যাসিডোনিয়ার ফুটবলাররা মাত্র ৫টা শট নিয়েছিলেন। সেখানে ইতালির ছিল ৩২টা শট। তাতেও কিছু হল না। দুই স্ট্রাইকার আন্দ্রে বেলোত্তি ও গিয়ানলুকা স্কামাকার না থাকা ছাপ ফেলেছিল টিমে। ঘরের মাঠে প্রাক বিশ্বকাপের ৬০টা ম্যাচ পর অঘটনের শিকার হয়ে থাকতে হল মানচিনির টিমকে।
ম্যাচের পর হতাশ মানচিনি বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে কিছুই বলার মতো জায়গায় নেই। গত বছরও আমরা দারুণ ফর্মে ছিলাম। কিন্তু এখন হতাশায় ডুবে যেতে হবে। এই হার সহজে মেনে নেওয়া যায় না। আমিই টিমের কোচ। আর তাই, এই হারের দায় আমিই নিচ্ছি।