কলকাতা: বয়স মাত্র ৯ বছর। শয়নে স্বপনে শুধুই মোহনবাগান। প্রিয় দলের খেলা থাকলে সকাল থেকেই উত্তেজনা। ম্যাচ মিস করা চলবে না। প্রিয় দল জিতলেই উচ্ছ্বাস। আর হারলেই মন খারাপ। খাওয়া দাওয়া বন্ধ। মোহনবাগান বলতে একেবারে অন্ধ। সবুজ-মেরুন ছাড়া আর কোনও রংই তার পছন্দ নয়। বাবা আর মামার হাত ধরে অনেকবার যুবভারতীর গ্যালারি মাতাতে দেখা গিয়েছে কসবার কুমোর পাড়া লেনের বাসিন্দা অর্নিশ বসুকে। গ্যালারিতে যে হাজারো সমর্থকের গর্জন শোনা যায়, তার মধ্যে থাকে অর্নিশও। কিন্তু দীর্ঘ সময় মাঠে যাওয়া হচ্ছে না। তারও মাঠে ফেরার লড়াই। ৯ বছরের ছোট্ট ছেলের সবুজ-মেরুন স্বপ্নে হঠাৎই কালো ধোঁয়া গ্রাস করেছে।
গত জুলাইতে অর্নিশের শরীরে ধরা পড়ে লিউকেমিয়া। তখন থেকেই পরিবারের মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ে। শুরুতে অর্নিশের বাবা-মা কেউই রিপোর্টটা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। ৯ বছরের ছোট্ট ছেলের জীবনটা আচমকাই অন্য দিকে টার্ন করে। সেদিনের পর থেকেই শুধু ডাক্তার, হাসপাতাল, ওষুধ- এসবের মধ্যে ছুটে চলেছে অর্নিশের জীবন। দোলনা ডে স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রর এখন জীবনযুদ্ধর লড়াই।
অর্নিশের বাবা অর্ণব বসু টিভি নাইন বাংলা ডিজিটালকে বলেন, ‘ইতিমধ্যেই আমাদের প্রায় ২৫ লাখ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। বিদেশ থেকে ওষুধ আনাতে হয়েছে। ওকে সারিয়ে তুলতে আরও কয়েকটি ট্রিটমেন্ট দরকার। তার জন্য প্রয়োজন আরও অনেক অর্থ। আমাদের সমস্ত উপার্জন ঢেলে দিয়েছি। আর কিছু বাকি নেই। এমনকি আমার কয়েকজন বন্ধুও এগিয়ে এসেছে আর্থিক সাহায্য করতে। বিশাল অঙ্কের টাকা লোন করেছে ওরা। বন্ধুরাই সেই ইএমআই মেটাচ্ছে। পিএম কেয়ার কিংবা সিএম কেয়ার ফাণ্ডে আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি।’
অর্নিশের বাবা এবং মা দুজনেই বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। কোভিডের পর থেকেই কখনও বাবা, আবার কখনও মামার হাত ধরে মোহনবাগানের খেলা দেখতে মাঠে যায় অর্নিশ। টাটা মেডিক্যাল সেন্টারে অর্নিশের চিকিৎসা চলছে। গত শুক্রবারও হাসপাতালে থেকেই বাবার কাছে দিমিত্রিদের খেলা দেখার আব্দার করে ৯ বছরের খুদে মোহনবাগান ভক্ত।
অর্নিশের বাবা বলছেন, ‘আমার শ্যালক একটি মোহনবাগান ফ্যান ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত। অর্নিশের ‘ও’ পজিটিভ ব্লাড গ্রুপ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ‘ও’ পজিটিভ কিংবা ‘এ’ পজিটিভের ব্লাড ডোনার দরকার। অনেক সবুজ-মেরুন সমর্থকই আমাকে ফোন করে রক্ত দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সবাই মিলে খুব চেষ্টা করছি। জানি না, কী হবে।’