ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাস সেই কবে থেকে ময়দানের জার্সি পরে বসে রয়েছে। নতুন শতাব্দীতে পা দিয়েও ময়দান ঘিরেই পায়ে পায়ে এগিয়ে রয়েছে ইতিহাস। কত গল্প উপহার দিয়েছে এই ময়দান। আরও ভালো করে বলতে গেলে, কলকাতা ডার্বি ঘিরে কত উত্তেজনা, কত উত্তাপ। তিন বছর পর আবার ডার্বি (Kolkata Derby) ফিরছে কলকাতায়। সেই চিরকালীন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান (East Bengal vs Mohun Bagan) ডার্বির নানা গল্প নিয়েই TV9 Bangla -র এই ধারাবাহিক— ডার্বির হারিয়ে যাওয়া গল্প। আজ অতীতে ফিরলেন শিশির ঘোষ।
সেরা, স্মরণীয়, পছন্দের ডার্বি। যাই বলি না কেন একটা ম্যাচ এভাবে বেছে নেওয়া খুবই কঠিন। তার আগে বলে নিই, আমাদের সময় ‘ডার্বি’ ছিল না। আমরা বড় ম্যাচ বলতেই অভ্যস্ত ছিলাম। আর বড় ম্যাচ মানেই দাগ কাটতে হবে। সেভাবেই খেলার চেষ্টা করতাম। দাগ কাটতে হবে মানে গোল করতে হবে, জিততে হবে এরকম ব্যাপার। প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই এটা ছিল। শুধু আমার জন্যই নয়। আমি যেহেতু স্ট্রাইকার, গোল করার জন্য যেতাম। ডার্বি বলতে আমার যেটা মনে পড়ে ১৯৮৯-র ম্যাচটা। মোহনবাগানের শতবর্ষ ছিল। আমি অধিনায়ক ছিলাম। সেই ডার্বিটায় আমি তিনটে গোল করেছিলাম। প্রথমটা দেয়নি। অফসাইডে বাতিল করে। রেফারি, লাইন্সম্যানের বদান্যতায় গোলটা হয়েও হল না। সবাই জানতো সেটা গোল। যাই হোক, গোলটা না দেওয়ায় বড় ম্যাচে একজন বাঙালির হ্যাটট্রিক হয়নি। এটা আমার জন্য়ই শুধু খারাপ লাগা নয়। প্রতিটা বাঙালির জন্যই আক্ষেপ। ডার্বিতে বাঙালির হ্যাটট্রিক নেই। আর বাঙালি বাঙালিকেই নামিয়েছে।
ম্যাচটা হয়েছিল যুবভারতীতে। গোলটা বাতিলে আমি কতটা বিখ্যাত হয়েছিলাম জানা নেই। রেফারি বিখ্যাত হয়েছিল এটুকু মনে আছে। তিনিও বাঙালি। যাই হোক, ডার্বি আরও অনেক জিতেছি। এটার কথাই বিশেষ করে মনে আছে। কারণ, এই ম্যাচে একটা মাইলফলকের সম্ভাবনা ছিল। ২ গোলটা হ্যাটট্রিকে পরিণত হতেই পারত। শতবর্ষে, অধিনায়কত্ব, সবমিলিয়ে আক্ষেপ তো একটু হলেও রয়েই গিয়েছে।
ডুরান্ড কাপ, রোভার্স কাপেও স্মরণীয় কছু বড় ম্যাচ রয়েছে। যেহেতু দুটো গোল করেছিলাম, গোল খাইনি, অধিনায়ক ছিলাম, ম্যাচ জিতেছি, ক্লাবের শতবর্ষ ছিল, গোল বাতিল। সব দিক মিলিয়ে আলাদা করে প্রিয় বা মনে রাখার মতো ম্যাচ বাছতে বললে, ৮৯-র ম্যাচটাই বাছব। আমার কাছেই শুধু নয়, আবারও বলব, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান সব বাঙালির কাছেই এই ম্যাচটা আক্ষেপের। গোল বাতিলের সময় গ্যালারির রিঅ্যাকশনও ভয়ঙ্কর ছিল। পারলে রেফারিকে মেরে দেবে, খুন করে দেবে এমন অবস্থা। বড় ম্যাচের আবেগ যেমন হয়। হা-হুতাশও ছিল।
যারা ওই ম্যাচ দেখেছে প্রত্যেকেই আক্ষেপ করে। আর এখন বলে লাভ আছে! রেফারি ছিল মিলন দত্ত। লাইন্সম্যান ছিল সাগরদা (সাগর সেন)। সে এখনও আমাকে বলে,ভুল হয়ে গেছে, ওটা গোল ছিল। আমিও বলি, এখন আর এ কথা বলে কী হবে। যা হওয়ার তো হয়েই গেছে। এটা অনেকটা স্টিভ বাকনার-সচিন তেন্ডুলকরের মতো বিষয়। ৯০’র ঘরে সচিনকে ভুল আউট দিয়েছে অনেকবার। পরবর্তীতে আম্পায়ার স্টিভ বাকনার ভুল স্বীকারও করে নিয়েছে। এখন আর ভুল স্বীকার করে কোনও লাভ হবে কি? সচিনের শতরান সংখ্যা তো আর ১০০-র বেশি হবে না। আমার ক্ষেত্রেও বিষয়টা প্রায় একই।
(দীপঙ্কর ঘোষালের সাক্ষাৎকার ভিত্তিক অনুলিখন)