লন্ডন: সমর্থকদের চাপের কাছে নতিস্বীকার? স্পনসরদের সরে যাওয়ার হুমকি? ফিফা আর উয়েফার যৌথ বিরোধীতা? প্লেয়ারদের দেশের হয়ে খেলতে না পারার আশঙ্কা? ঠিক কোন যুক্তি এর পিছনে কাজ করছে, এখনও পরিষ্কার নয়। রবিবার ইউরোপিয়ান সুপার লিগের (European Super League) ঘোষণা হওয়া মাত্র ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। তিন দিনের মাথায় তাতে নাটকীয় পালাবদল। ইউরোপের সেরা ১২টা ক্লাব সুপার লিগের মঞ্চে এসে দাঁড়িয়েছিল। তাতে ছিল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ছয় ক্লাবও। দুই ম্যাঞ্চেস্টার সহ চেলসি, আর্সেনাল, লিভারপুল, টটেনহ্যাম ইউরোপিয়ান সুপার লিগ থেকে নাম তুলে নিল। স্পেন ও ইতালির আরও ছয় ক্লাব কী করে, সেটাই দেখার।
ফুটবলের ভবিষ্যৎ, আর্থিক স্বচ্ছলতার মতো নানা দাবি সামনে রেখে সুপার লিগ চালু করা হয়েছিল। ২০ টিমের লিগ। আর্থিক ভাবে দারুণ লাভবান হবে ক্লাবগুলো। রবিবার যৌথ ভাবে এ নিয়ে ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলো বিবৃতি দেওয়া শুরু করতেই ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়ে যায সমর্থকদের মধ্যে। ডেভিড বেকহ্যাম থেকে শুরু করে নামী প্রাক্তনরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। গুরুত্ব হারাবে, আশঙ্কা করে প্রতিবাদ মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন সমর্থকরা। উল্টো দিক থেকে শুরু হয়েছ গিয়েছিল পাল্টা চাপ দেওয়ার খেলাও। ফিফা ও উয়েফা সুপার লিগ মানবে না, ঘোষণা করে দিয়েছিল।
বুধবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ছয় ক্লাব সমর্থকদের কাছে রীতিমতো ক্ষমা চেয়ে সুপার লিগে জোট থেকে সরে এল। পেপ গুয়ার্দিওলার ম্যাঞ্চেস্টার সিটি প্রথম জোট থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। যে পথে একে একে হাঁটতে শুরু করে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি, লিভারপুল, আর্সেনাল ও টটেনহ্যাম। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হল, ম্যান ইউনাইটেড থেকে আবার কার্যকরী ভাইস চেয়ারম্যান এড উডওয়ার্ড সরে দাঁড়িয়েছেন। সুপার লিগ যাঁর ‘ড্রিম প্রজেক্ট’ ছিল। তড়িঘড়ি বিদ্রোহের পথ থেকে সরে আসার পিছনে রাজনৈতিক কারণও রয়েছে।
As a result of listening to you and the wider football community over recent days we are withdrawing from the proposed Super League.
We made a mistake, and we apologise for it.
— Arsenal (@Arsenal) April 20, 2021
আর্সেনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘গত কয়েক দিন ধরে সমর্থকদের টানা প্রতিবাদের জন্য আমরা সুপার লিগ থেকে সরে দাঁড়ালাম। আমরা ভুল করেছিলাম। এর জন্য ক্ষমা চাইছি।’ ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডও তাদের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা সুপার লিগে অংশ নিচ্ছি না।’
পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল আকার নিয়েছিল এই তিন দিন। সব মহল থেকেই টানা প্রতিবাদ করা হচ্ছিল। যার সামনে পিছু হঠতে বাধ্য হল ইপিএলের ছয় ক্লাব। লিভারপুলের ক্যাপ্টেন জর্ডন হেন্ডারসন টুইটারে লিখেছেন, ‘আমরা সুপার লিগ চাইছি না। এটা কোনও ভাবেই পছন্দের জিনিস নয়। আর এটা আমাদের সমবেত সিদ্ধান্ত।’ টটেনহ্যামও সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে, সুপার লিগের মঞ্চ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।
আরও পড়ুন: করোনায় আক্রান্ত ধোনির বাবা-মা
এই পরিস্থিতিতে ইউরোপিয়ান সুপার লিগের ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে? বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ, জুভেন্তাস, ইন্তার ও এসি মিলান কী সিদ্ধান্ত নেবে? সুপার লিগের তরফেও জারি করা হয়েছে এক বিবৃতি। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, তারা সুপার লিগের আশা ছাড়ছে না। বলা হয়েছে, ‘ব্যাপারটা যে ভাবে ভাবা হয়েছিল, এই পরিস্থিতিতে তা চালানো মুশকিল। আমাদের আবার নতুন করে ভাবতে হবে। পুরো প্রজেক্টটাকে দাঁড় করানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতেই হবে।’
১২টা ক্লাবের হঠাৎ করে উয়েফা ছেড়ে সরে দাঁড়ানোয় তীব্র চাপে পড়ে গিয়েছিল ইউরোপের পুরো লিগ সিস্টেমটাই। আপাতত ইংল্যান্ডের ফুটবল লিগ ও সংস্কৃতি বিপন্মুক্ত হবে দাবি করা হচ্ছে। উয়েফার প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার সেফেরিন বলেছেন, ‘সমর্থকদের প্রতিবাদ সর্বস্তরে পৌঁছেছে। এটাই ভালো দিক। ভালো লাগছে যে, ইংল্যান্ডের ফুটবল ফেডারেশন তাদের ক্লাবগুলোর সুপার লিগ ছেড়ে আসার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে।’