Kolkata Derby Retro Story: গোঁড়ালিতে চোট নিয়েও ‘৭৮-র বড় ম্যাচ খেলেছিলেন সুব্রত ভট্টাচার্য

তিন বছর পর আবার ডার্বি (Derby) ফিরছে কলকাতায়। সেই চিরকালীন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বির নানা গল্প নিয়েই টিভি নাইন বাংলার এই ধারাবাহিক--- ডার্বির হারিয়ে যাওয়া গল্প। আজ অতীতে ফিরলেন সুব্রত ভট্টাচার্য (Subrata Bhattacharya)।

Kolkata Derby Retro Story: গোঁড়ালিতে চোট নিয়েও '৭৮-র বড় ম্যাচ খেলেছিলেন সুব্রত ভট্টাচার্য
গোঁড়ালিতে চোট নিয়েও '৭৮-র বড় ম্যাচ খেলেছিলেন সুব্রত ভট্টাচার্য
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 15, 2022 | 6:00 PM

ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাস সেই কবে থেকে ময়দানের জার্সি পরে বসে রয়েছে। নতুন শতাব্দীতে পা দিয়েও ময়দান ঘিরেই পায়ে পায়ে এগিয়ে রয়েছে ইতিহাস। কত গল্প উপহার দিয়েছে এই ময়দান। আরও ভালো করে বলতে গেলে, কলকাতা ডার্বি ঘিরে কত উত্তেজনা, কত উত্তাপ। তিন বছর পর আবার ডার্বি (Derby) ফিরছে কলকাতায়। সেই চিরকালীন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বির নানা গল্প নিয়েই টিভি নাইন বাংলার এই ধারাবাহিক— ডার্বির হারিয়ে যাওয়া গল্প। আজ অতীতে ফিরলেন সুব্রত ভট্টাচার্য (Subrata Bhattacharya)।

বড় ম্যাচের মাহাত্ম্য আমার কাছে কিছুটা বেশিই। ফুটবলার এবং কোচিং জীবন — দুটোতেই বাঙালির বড় ম্যাচের স্বাদ বহুবার পেয়েছি। আর এই দুটো পর্বে ভালো-মন্দ অনেক কিছু মিশে আছে। ফুটবলার জীবনে বড় ম্যাচ খেলেছি শুধু মোহনবাগানের হয়েই। কোচিং জীবনে আবার ইস্টবেঙ্গলের হয়েও বড় ম্যাচের অভিজ্ঞতা আছে। যদিও আমার সাফল্যের পুরোটাই মোহনবাগানে হয়ে। কোচিং জীবনে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে মোহনবাগানকে হারানোর মুহূর্তও আমার জীবনে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। শ্যামনগরের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের কাছে বড় ম্যাচের আবেদন বরাবরই অন্যরকম ছিল। ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখতাম দাপিয়ে ফুটবল খেলব। সেই স্বপ্ন সফলও হয়েছে। ১৭ বছর ১৬ নম্বর জার্সি পরে মোহনবাগানের হয়ে খেলেছি। অনেক ম্যাচ জিতেছি। পেলের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলার স্মৃতিও মধুর হয়ে থাকবে। তবে বড় ম্যাচের স্বাদ আলাদা। অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত বড় ম্যাচের প্রস্তুতি। মানসিক ভাবে নিজেদের প্রস্তুত করতাম ওই ম্যাচটার জন্য। বাঙালিদের কাছে বড় ম্যাচ আবেগের। এখন তো দুটো বড় টিমে ভিন রাজ্যের ফুটবলারই বেশি। বিদেশিরাও আছে। আবেগটা ওদের কাছে কম। আমরা আবেগ সম্বল করেই বড় ম্যাচে মাঠে নামতাম।

১৯৭৪ সালে মোহনবাগানে সই করার পর প্রথম বড় ম্যাচ খেলতে পারিনি। তখন আমি রেলে চাকরি করি। রেলের ম্যাচ থাকায় চলে যেতে হয়েছিল। মন খারাপ হয়েছিল। আর একটা বড় ম্যাচের অপেক্ষায় ছিলাম। অরুণ ঘোষ তখন আমাদের কোচ। মাঠের বাইরেও ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করতেন অরুণদা। অবশেষে বড় ম্যাচ খেলার সুযোগ এল। ১৯৭৫ সালের ৬ জানুয়ারি ডার্বি অভিষেক হল আমার। ওই ম্যাচে ১-০ গোলে জিতি। কেষ্ট মিত্র গোল করেছিল। প্রথম বড় ম্যাচে জিতে তৃপ্তি হয়েছিল। তখন ইস্টবেঙ্গল শক্তিশালী দল। হাবিব, আকবর, সুরজিৎ, অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ফুটবলাররা খেলছে ইস্টবেঙ্গলে। ওদের বিরুদ্ধে জিতেছি। আনন্দ হবেই। হাবিব-আকবর-সুরজিতের মতো অ্যাটাকারদের রুখে দেওয়াটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। ভয়ডরহীন মানসিকতাই আমাদের বড় ম্যাচ জেতাতে সাহায্য করেছিল। অরুণদাই সাহস বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

ফুটবলার জীবনে আমার সেরা বড় ম্যাচ দুটো— ১৯৭৭ সালের আইএফএ শিল্ড আর ১৯৭৮ সালের কলকাতা লিগ। ‘৭৭-এ আমরা ত্রিমুকুট জিতেছিলাম। সে বছর কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গলের কাছে ০-২ হেরে গিয়েছিলাম। আমাদের দল খুব ভালো হওয়া সত্ত্বেও কলকাতা লিগ জিততে পারিনি। আইএফএ শিল্ডে তার বদলা নিয়েছিলাম। প্রদীপদা তখন কোচ। বড় ম্যাচের জন্য আমাদের অন্য ভাবে প্রস্তুত করেছিলেন। দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর দিন শিল্ডের ফাইনাল ছিল। ইস্টবেঙ্গলকে ১-০ গোলে হারিয়ে আমরা সেই বদলা নিয়েছিলাম। পুজোটাও দারুণ কেটেছিল।

‘৭৮-র কলকাতা লিগের ডার্বিও আমার কাছে স্পেশাল। ওই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলকে ১-০ হারিয়েছিলাম। বড় ম্যাচে খেলতে পারব কিনা ঠিক ছিল না। আমার গোঁড়ালিতে চোট। তার আগে বেশ কয়েকটা ম্যাচ খেলতেও পারিনি। চোট নিয়েই মাঠে নেমেছিলাম। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়ি। ওই বড় ম্যাচ জেতার পর তৎকালীন ফুটবল সচিব আরকে তিওয়ারি পার্ক স্ট্রিটের রেস্তোরাঁয় আমাদের খাইয়েছিলেন। আটের দশকে চিমা ওকোরির সঙ্গে আমার ডুয়েল বেশ উপভোগ করতাম। কোচ, কর্তা থেকে সমর্থকরা আমার উপরেই ভরসা রাখত। চাপ তো একটা থাকতই, কিন্তু সেটাকে দায়িত্ব সহকারে পালন করাই ছিল চ্যালেঞ্জ।

ফুটবলার জীবন শেষের পর কোচিং জীবনেও অনেক বড় ম্যাচের স্বাদ পেয়েছি। সুভাষ ভৌমিকের সঙ্গে আমার ডুয়েলও বেশ উপভোগ করতাম। তিনটে জাতীয় লিগ জিতেছি। তবে তার চেয়েও বেশি ভালো লাগত, যখন বড় ম্যাচে জিততাম। ২০০১ সালের কলকাতা লিগের প্রথম পর্বের বড় ম্যাচ অন্যতম সেরার তালিকায় থাকবে। ইস্টবেঙ্গল তখন অত্যন্ত শক্তিশালী দল। জেমস সিংয়ের একমাত্র গোলে ইস্টবেঙ্গলকে ১-০ হারিয়েছিলাম। ওই বছর জাতীয় লিগে দু’বারই ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েছিলাম। দু’বারই ব্যারেটোর গোলে ম্যাচ জিতেছিলাম।

ইস্টবেঙ্গলে কোচ হওয়ার পর মোহনবাগান সমর্থকদের কাছে ভিলেন হয়ে গিয়েছিলাম। ময়দান এমনই। তার উপর আমি মোহনবাগানের ঘরের ছেলে। সেই আমি কিনা ইস্টবেঙ্গলের কোচ হয়েছি। লোকে নেবে কেন? সে বছর কলকাতা লিগের প্রথম বড় ম্যাচটা হেরে গিয়েছিলাম। মোহনবাগানের কোচ কার্লোস পেরেরা। ৪-৩ গোলে ম্যাচ হেরেছিলাম। কিন্তু ওই ম্যাচে অন্যতম সেরা ফুটবল তুলে ধরেছিল ইস্টবেঙ্গল। সেই ম্যাচ এখনও চোখে ভাসে সমর্থকদের। ওই ম্য়াচ হারের পর লাল-হলুদ সমর্থকদের যন্ত্রণা অনুভব করেছিলাম। ফেডারেশন কাপ ছিল আমার কাছে চ্যালেঞ্জ। তার আগে ১১ বছর ফেড কাপ পায়নি ইস্টবেঙ্গল। সেমিফাইনালে সেই মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলা। বাইচুং, ব্যারেটো দু’জনেই তখন মোহনবাগানে। শুরুতেই আবার ০-১ পিছিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু ৩-২ গোলে ম্যাচ জিতে মাঠ ছেড়েছিলাম। ওই বছর ফেডারেশন কাপও চ্যাম্পিয়ন হই। ফেড কাপের ওই বড় ম্যাচ আমার কোচিং জীবনের অন্যতম সেরার তালিকায় থাকবে…

(কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেওয়া সাক্ষাৎকার ভিত্তিক অনুলিখন)