সিডনি: মাস খানেক আগে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে রেকর্ড করেছিলেন। ৪৪ বছর পর কোনও অজি টেনিস প্লেয়ার ফের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতার কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। মেয়েদের টেনিস বিশ্বের এক নম্বর প্লেয়ার অ্যাশলি বার্টি (Ashleigh Barty) হঠাৎই অবসর নিয়ে ঘোষণা করে দিলেন। রজার ফেডেরার ৪০ পার করে ফেলেছেন। সেরেনা উইলিয়ামসও পেরিয়ে গিয়েছেন ৪০। মাত্র ২৫ বছর বয়সে বার্টি কেন অবসর নিয়ে নিলেন, তা নিয়ে ঝড় বইছে টেনিস দুনিয়ায়। তাঁর ভক্তরা বার্টিকে সিদ্ধান্ত পুরর্বিচেনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন। আশ্চর্যের কথা হল, বার্টি জানিয়েছেন, এই বছর নয়, গত মরসুমে উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই তিনি টেনিস থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। বার্টির এই কথা ধরলেই বোঝা যায়, নিজের সঙ্গে লড়াই করছেন বেশ কিছুদিন ধরেই। টেনিস থেকে সত্যিই সরে দাঁড়াতেই চেয়েছেন অজি প্লেয়ার।
বন্ধু এবং ডাবলস পার্টনার ক্যাসি ডেলাকারকে পাশে নিয়ে কান্নাভেজা এক ভিডিও বার্তায় বার্টি বলেছেন, ‘আমার কাছে সাফল্যের মানে হল, নিজের সব কিছু উজাড় করে দেওয়া। আর সেটা আমি দিয়েছি। যতরকম ভাবে সম্ভব দিয়ে দিয়েছি। সেরাটা বের করার জন্য কতটা কঠিন পরিশ্রম করতে হয়, সেটা আমি ভালো করে জানি। নিজের জন্য আমি খুশি।’
ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ভিডিও পোস্ট করে বার্টি লিখেছেন, ‘আজকের দিনটা আমার কাছে খুব কঠিন। আবেগ একেবারে উপচে পড়ছে। আর তার মধ্যেই আমি টেনিস থেকে আমার অবসর ঘোষণা করে দিচ্ছি। আমি জানতাম না, এই রকম একটা খবর কী করে আমার ভক্তদের সঙ্গে শেয়ার করব। তাই আমার বন্ধু ক্যাসির সাহায্য নিয়েছি। টেনিস আমাকে যে ভাবে ভরিয়ে দিয়েছে, তার জন্য আপ্লুত, গর্বিত। যারা এই পথটুকু আমাকে সাহায্য করেছে, তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব। বাকি যা বলার, প্রেস মিটে বলব।’
তিনটে গ্র্যান্ড স্লাম জেতা টেনিস প্লেয়ার, ব়্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর জায়গায় থাকলেও যাঁর অনেক দূর যাওয়ার কথা ছিল। আরও খেতাব থাকার কথা তাঁর পেশাদার সার্কিটে। সেই তিনিই কেন অবসর নিলেন? ‘আমার পক্ষে যতটা দেওয়া সম্ভব ছিল দিয়েছি। এর বেশি শারীরিক ভাবে, মানসিক ভাবে কিংবা অন্য কোনও ভাবে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সত্যি কথা বলতে, আমি খুব ভালো করে জানি, যতটা সাফল্য পেতে পারতাম, তা পেয়ে গিয়েছি।’
রজার ফেডেরার চোট সারিয়ে ফিরে আসার প্রবল চেষ্টা করছেন। রাফায়েল নাদাল গোড়ালির চোট সারিয়ে কোর্টে ফিরে জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। নোভাক জকোভিচ এখনও রাজত্ব করছেন টেনিসে। এঁদের দেখতে দেখতে একটা শব্দবন্ধনী মনে গেঁথে যায়, সাফল্য আসলে একটা খিদে। বয়স উপেক্ষা করে সাফল্যের খোঁজে কেউ কেউ অভিযান চালিয়ে যান। কেউ কেউ আবার বার্টির মতোও হন। পঁচিশেই যাঁরা সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। গত বছর বিশ্ব খেলাধুলোয় দুই মেয়ে আশ্চর্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। প্রথম জন নাওমি ওসাকা। জাপানি তারকা মানসিক স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গ তুলে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন। টেনিস থেকে সাময়িক বিরতিরও নিয়েছিলেন। অন্য জন সিমোনে বাইলস। তিনিও অলিম্পিকের সময় মানসিক স্বাস্থ্যের কথা তুলেছিলেন। বার্টিও কি তেমন কোনও সমস্যায় আক্রান্ত?
২০১১ সালে জুনিয়র উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হয়ে আলোচনায় চলে এসেছিলেন। তখন মাত্র ১৫ বছর বয়স। তার পর ২০১৪ সালে টেনিস থেকে বিরতি নিয়েছিলেন তিনি। দুটো বছর ক্রিকেট খেলেছিলেন। মেয়েদের বিগ ব্যাশেও খেলেছেন। ২০১৬ সালে আবার টেনিসে ফেরেন। ২০১৭ সালে মেয়েদের ব়্যাঙ্কিংয়ে প্রথম ২০-তে ঢুকে পড়েন। ২০১৯ সালে ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়ন হন। ২০১৯ সালে বিশ্বের এক নম্বর টেনিস প্লেয়ার হয়ে যান। ২০২০ সালে আবার টেনিস থেকে সরে গিয়ে গল্ফ খেলা শুরু করেন। ২০২১ সালে টেনিসে ফিরে ফের চ্যাম্পিয়ন হন উইম্বলডন। গত বছরটা এক নম্বরই ছিলেন। চলতি বছরের শুরুতেই চ্যাম্পিনয় হন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। সেই তিনিই ১১ বছরের টেনিস কেরিয়ারে ইতি টানলেন।
বার্টি বলেছেন, ‘উইম্বলডন জেতা ছিল আমার জীবনের অন্যতম স্বপ্ন। সেটা ছুঁয়ে ফেলেছি গত মরসুমেই। তার পরই আমার জীবন দর্শনটা পাল্টে গিয়েছে। উইম্বলডন জেতার পরই আমার টিমকে সাহস করে বলতে পেরেছিলাম, এ বার আমি টেনিস থেকে সরে যেতে চাই।’
গত বছরই ছেলেবেলার প্রেমিক সঙ্গে বাগদান সেরে ফেলেছেন। সেই গ্যারি কিসিকের সঙ্গেই একটা অন্য রকম জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখছেন অ্যাশলি বার্টি।