হানঝাউ: কথায় আছে ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়। প্রবাদ এমনিই তৈরি হয় না। এর বাস্তব রয়েছে। কোনও কিছুই পুরোপুরি কাল্পনিক হয় না। এর মধ্যে কিছুটা হলেও বাস্তব থাকবে। এই প্রবাদটাই যেমন! এশিয়ান গেমসে সরকারি ভাবে প্রথম দিন বললে, রবিবার। টিম ইভেন্ট আগে শুরু হলেও শনিবার হয়েছে গেমসের উদ্বোধন। রবিবার প্রথম দিন ধরা যাক। প্রথম দিন ভারতের ঝুলিতে পাঁচটি পদক। এর মধ্যে তিনটি রুপো এবং দুটি ব্রোঞ্জ। মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল টিম ইভেন্টে রুপো। ব্যক্তিগত ইভেন্টে ব্রোঞ্জ শুটার রমিতার। রোয়িংয়ে তিনটি পদক। পুরুষদের লাইটওয়েট ডাবল স্কালস এবং এইট টিমের রুপো। পুরুষদের জুটিতে ব্রোঞ্জ। বাংলার মেহুলি ঘোষের সাফল্যের মাঝে আরও একজনের কথা আলাদা করে বলতে হয়। রোয়িংয়ে পদকজয়ী অরবিন্দ সিংয়ের কথা। বিস্তারিত জেনে নিন TV9 Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
বাবা কৃষক। একই কাজে আগ্রহ ছিল না অরবিন্দর। তাঁর স্বপ্ন সেনাবাহিনিতে চাকরি। কিন্তু চার বার পরীক্ষা দিয়েও ব্যর্থতার দেওয়াল পেরোতে পারেননি। হালও ছাড়েননি। অবশেষে পঞ্চম চেষ্টায় সাফল্য। ইন্ডিয়ান আর্মিতে যোগ দেওয়ার আনন্দ। স্বপ্ন পূরণের মাঝে জীবনে রোয়িংয়ের প্রবেশ। জীবনটাই যেন বদলে গেল।
রবিবার এশিয়ান গেমসে রোয়িংয়ে ডাবলস স্কালসে অরুণ লাল জাটের সঙ্গে জুটিতে রুপোর পদক। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে অরবিন্দ বলেন, ‘কৃষকের ছেলে, সেনাবাহিনিতে যোগ দেওয়াই যেন আমার কাছে একমাত্র বিকল্প ছিল। এ ছাড়া আর কিছু করতে পারতাম না।’ রোয়িং কিন্তু তাঁর প্রথম পছন্দ ছিল না। ৬ ফুট ১ ইঞ্চি উচ্চতা। লক্ষ্য ছিল ক্রিকেটার হওয়ার। তাতেও কিছু হয়নি। অ্যাথলেটিক্সেও চেষ্টা করেছিলেন। বাবার সমর্থন না পেলে হয়তো রোয়িংটাও…। অরবিন্দর কথায়, ‘এই পদকটা বাবার জন্য। আমার জন্য অনেক অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমি যাতে সেনাবাহিনির জন্য চেষ্টা করে যেতে পারি, নিজে পরিশ্রম করে গিয়েছেন। আজ আমি যা কিছু সাফল্য পেয়েছি, সবটাই বাবার জন্য।’
২০১৩ সালে সেনাবাহিনিতে সুযোগ। উচ্চতার জন্য রোয়িং টিমেও সুযোগ পান। তার আগে এই স্পোর্টস সম্পর্কে কোনও ধারনাই ছিল না! অরবিন্দর কথায়, ‘খেলাটা সম্পর্কে জানা তো দূর অস্ত, রোয়িংয়ের নামই শুনিনি। তবে কোচের পরামর্শ মেনে দ্রুত শেখার চেষ্টা করেছি।’
পার্টনারশিপ। টিম ইভেন্টে এই বিষয়টি খুবই প্রয়োজনীয়। সেটা যে কোনও টিম ইভেন্ট হোক, যত জনেরই হোক। আর অরবিন্দর জীবনে সেরা বিষয়টি হয়েছিল ২০১৮ সালে। অরুণ লাল জাটের সঙ্গে পার্টনারশিপ। অরুণও কৃষকের ছেলে। পরস্পরকে বুঝতে সুবিধা হয়। ২০১৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় এশিয়ান রোয়িং চ্যাম্পিয়নশিপে জুটিতে রুপো, টোকিও অলিম্পিকে অরুণের সঙ্গে জুটিতে সাফল্য আসেনি। ১১ নম্বরে শেষ করেছিলেন। ব্যর্থতা তাঁকে আটকাতে পারবে কি? এশিয়ান গেমসে সাফল্যের পর তো আরওই নয়।